আপনার সমস্যা বিবরণী?????
বর্তমানের এই করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনের উপর আমাদের অনেকাংশেই নির্ভর করতে হচ্ছে- বিশেষ করে একিউট রোগের ক্ষেত্রগুলোতে। আমাদের বহু হোমিওপ্যাথিক ভাতৃবর্গকে বর্তমানে অনেক ক্রনিক রোগীকেও অনলাইনে সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে, আমি রোগীর অনুপস্থিতিতে চিকিৎসা করি না। কিন্তু তারপরও কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি আসে, যখন কাজটা করতে হয়েছে। সে রকমই একটি পরিস্থিতিতে প্রবাসে থাকা আমার এক ছোট ভাইকে এই চিঠিটা বহু আগে লিখেছিলাম- তার ফেইসবুক ইনবক্সে। পরবর্তীতে পত্রটি অন্যান্য রোগী ও বহু চিকিৎসকের সহযোগিতার মাধ্যম হতে পারে ভেবে আমার নিজের পেইজে এটি পোস্ট করেছিলাম। আজ আবার মনে হলো, বর্তমান সময়ের চাইতে, এই লেখাটুকু বোধহয় প্রকাশ করার উপযুক্ত সময় আর কখনোই ছিলো না। একারণে এটি আবার আরো বিস্তৃত ক্ষেত্রে প্রকাশ করলাম। উল্লেখ্য, চিঠিটিতে কোন এডিট করা হয় নি, যেরকমটি লিখেছিলাম- সেভাবেই উপস্থিত করছি এবং কেইস-টেকিংয়ের সার্বিক রূপরেখাটি এর চাইতে কম কথায় আমি কোনদিন কাউকে আজ পর্যন্ত বলতে পারি নি………
প্রিয়??????
রোগ যত সামান্যই হোক না কেন, হোমিওপ্যাথির সত্যিকার চিকিৎসা পদ্ধতিতে তা সারাতে আমাদের বেশ কিছু জটিলতা ও প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তুমি বাইরে যে সমস্ত হোমিওপ্যাথকে এ যাবৎ পর্যন্ত দেখিয়ে এসেছো, তোমার কথায় মনে হচ্ছে, তারা এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায় নি। জাস্ট রুটিন প্রেসক্রিপশন করে গেছে। আমি ওভাবে চিকিৎসা করে অভ্যস্ত নই।
এ কথা কয়টা বলার কারণ হচ্ছে, যাতে তুমি আমার প্রশ্নের বহর দেখে তাজ্জব হয়ে না যাও। মনে রেখো, হোমিওপ্যাথি একটা Holistic treatment system। কাজেই, এখানে রোগীকে আরোগ্য করতে গেলে তার Physical, Emotional and Mental Aspect তিনটাকেই বিবেচনায় এনে ঔষধ নির্বাচন করতে হয়। সুবিধা হচ্ছে, তুমি শুধুমাত্র চর্মরোগের জন্য ঔষধ নিলেও- তোমার প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য অন্য কোন রোগ থাকলেও একই ঔষধে সেগুলোও সেরে যাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকবে।
আরেকটা কারণে এতগুলো প্রশ্ন করতে হবে, তোমার চর্মরোগটার জন্য হোমিওপ্যাথিতে কয়েকশ’ ঔষধ আছে, কিন্তু তুমি সারবে হয়তো তাদের মধ্যে থেকে মাত্র একটাতে। সেই বিশেষ ঔষধটি আমাকে খুঁজে বের করতে হবে। কাজেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুব ভেবে চিন্তে দেবে। এই জটিলতার দরুণই, আমার সামনে রোগী না থাকলে আমি চিকিৎসা করি না, কিন্তু তোমারটা ব্যতিক্রমভাবে নিচ্ছি।
কোন প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও, উত্তর দিতে দ্বিধা করো না। কারণ, এখানে আসলে একটাও অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন নেই।
• তোমার রোগ টা শুরু, তার বর্তমান অবস্থা এবং এটা-জনিত অসুবিধাগুলো বিস্তারিত লেখ।
• তোমার শরীরে ছোট বা বড় আরো কোন অসুবিধা থাকলে সেগুলোও বিস্তারিত লেখ। এমন কি শরীরে আঁচিল, কোন একটা অস্বাভাবিক অভ্যাস যেমন, খাওয়ার পরেই পায়খানার বেগ। বা খাওয়ার পরেই ঘুম পাওয়া- এ জাতীয় আপাতঃস্বাভাবিক ব্যাপার থাকলেও তা উল্লেখ করো।
• তোমার পায়খানা, প্রস্রাব, পিপাসা, ক্ষুধা, ঘুম, ঘাম, শোয়ার পজিশন, কোন খাবার বা স্বাদের প্রতি অতি আগ্রহ কিংবা অত্যাধিক অপছন্দ থাকলে তা উল্লেখ করো।
• গোশতের চর্বি, দুধ, মিষ্টি, ডিম, আইসক্রিম, চকোলেট, লবণ ইত্যাদি খাবারগুলোর সাথে তোমার সম্পর্ক (পছন্দ/অপছন্দ/ খেলে অসুবিধাহয়/এলার্জি) বিশেষভাবে উল্লেখ করো।
• তোমার মেজাজ, মর্জি, পছন্দ-অপছন্দ, ভয়, নার্ভাসনেস, কনফিডেন্স, ঘৃণা, ক্ষোভ, হতাশা, দুঃখ, আনন্দ ইত্যাদি ব্যাপারগুলো সম্বন্ধে বিশেষ কিছু বলার থাকলে বিস্তারিত জানাও।
• তোমার Stress, Work/Study environment, Any energy draining situation of present/Past life, or seems the situation related to your diseases থাকলে তা উল্লেখ কর।
• তোমার নিজস্ব Characteristics কে প্রকাশ করে, এরকম ১০ টি শব্দ উল্লেখ কর। (আরো বুঝিয়ে বলছি, উদাহারণস্বরূপ, যেমন তুমি বললে, আমি দানশীল, সহানুভূতিসম্পন্ন, অভিমানী- এতে তোমার ৩ টি ক্যারাকটারিসটিক প্রকাশ পেলো, এভাবে তোমার নিজস্ব প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো ১০ টি শব্দে লিখে পাঠাও।
• বাবা বা মায়ের বংশের কারো বড় কোন রোগ থাকলে জানাও।
এগুলোর কোনটার উত্তর দেবার ব্যাপারেই কার্পণ্য করো না। যতটা সম্ভব বিস্তারিত লেখ। আমার চেম্বারের প্রত্যেকটা রোগীর এর চাইতে বিস্তারিত কেইস লেখা হয়। কিন্তু তুমি দূরে বলে, কিছু কিছু ব্যাপার ছাড় দিতে হচ্ছে। তবে মনে রেখো, মানুষের স্বাস্থ্যের স্বাভাবিক অবস্থা থেকে যা কিছু বিচ্যুতি তাই-ই রোগ, আর যা-কিছু মানুষের এনার্জি নষ্ট করে, তাই-ই রোগ সৃষ্টি করতে পারে। কাজেই তোমার যদি মনে হয়, তোমার কেইস রেকর্ড কমপ্লিট করতে আমার আরো কিছু জানা দরকার, যা আমি প্রশ্নগুলোতে উল্লেখ করিনি, তা নিজে থেকেই জানাবে। এমনকি, উত্তরগুলো যদি কয়েক পৃষ্ঠা ধরে লিখে যেতে হয়, তাই লিখবে। যদি ঠিক ঠিক লিখতে পারো, তবে শুধু তোমার এই বর্তমান চর্মরোগ নয়, তোমার যখন যে রোগই দেখা দিক, তার জন্য আমি এখানে থেকেই সমাধান করার চেষ্টা করতে পারবো, অন্যথায় ভরাডুবি হবে।
ভালো থেকো।
শাহীন
Comments
Post a Comment