অটোফেজি কি?


অটোফেজি  কি?
শরীরকে ভাঙে না বরং শরীর গড়ে। আর অটোফেজি এর পদ্ধতিকে চালু করতে প্রয়োজন কিছুটা দীর্ঘ তবে সবিরাম উপবাস। যা রোজার রাখার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি করতে পারেন। তবে এসব কিছুই সুস্থ ব্যক্তির সুস্থতার জন্য।
আপনি যদি আমেরিকা থেকে এটা পড়তে আসেন  তবে এই জিনিস টা একটু ট্রাই করতে পারে ন

Uber Eats - SOI (US), এখানে ক্লিক  করলেই হবে বাকি আপনার মর্জি


পৃথিবীর অনেক জ্ঞানী বিখ্যাত ব্যক্তিই শরীরে প্রাকৃতিক নিরাময়ের ক্ষেত্রে একটিমাত্র অভিন্ন সমাধান দিয়েছেন। কী সেই সমাধান? উত্তর শুনলে হয়তো অনেকেই চোখ কপালে তুলবেন। সমাধানটি হচ্ছে ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং বা সবিরাম উপবাস।  উপবাস নিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিস বলেছেন, আমাদের প্রত্যেকের শরীরের মধ্যেই একজন ডাক্তার বসবাস করে আমাদের উচিত সেই ডাক্তারকে কাজ করতে দেওয়া। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। তিনি আরও বলেছেন, খাবারই হওয়া উচিত আমাদের ওষুধ, ওষুধই হওয়া উচিত আমাদের খাবার। কিন্তু আমরা যখন অসুস্থ হই তখন যদি আমরা খাবার গ্রহণ করি তখন তা কিন্তু প্রকারান্তরে সেই অসুস্থতাকেই খাবার জোগান দেওয়া হয়। শরীরের ডাক্তারকে কাজ করতে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন উপবাস, উপবাস করলেই শরীরের সেই ডাক্তার কাজ করতে পারে। এ বিষয়ে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন, সবচেয়ে ভালো ওষুধ হচ্ছে উপবাস এবং বিশ্রাম।  সবিরাম উপবাস বা ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং প্রসঙ্গে আলোকপাত করার আগে আরও একটা বিষয়ে জানা ভালো, সেটি হচ্ছে ফ্যাস্টিং এবং স্টারভেশন কিন্তু এক নয়। স্টারভেশন মানে অপরিকল্পিত অনাহার যাতে অপুষ্টির ঝুঁঁকি থাকে। সবিরাম উপবাস বা ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং একটি পরিকল্পিত উপবাস, এর একটা নির্দিষ্ট ডিজাইন থাকে, নিয়ম থাকে তা সে যেমনই হোক। রোজা তেমন এক ধরনের উপবাস যা ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে মুসলমানরা করে থাকেন। শরীরকে নিরোগ রাখার প্রাকৃতিক সমাধান হচ্ছে সবিরাম উপবাস। মানুষের শরীরটা এমনভাবে তৈরি যে, প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য শরীর খাবার সঞ্চিত রাখতে পারে। কেউ যদি টানা ১০-১২ ঘণ্টা উপবাস থাকেন তখন লিভারে সঞ্চিত খাবার গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরে খাবারের চাহিদা পূরণ করে শক্তির জোগান দেয়। এছাড়া উপবাসে শরীরের বাড়তি চর্বি ব্যবহৃত হয়, কমে যায় ক্ষতিকর কোলেস্টেরল মাত্রা, কমে হৃদরোগের ঝুঁঁকি, সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকে উচ্চ রক্তচাপ, সঙ্গে কমে যায় ওজনও। তাছাড়া মানসিক প্রশান্তি তো আছেই। এগুলোর প্রায় সবই আমাদের জানা আছে।
এই ঘটনা ছাড়াও আরো একটি বিষয় ঘটে শরীরের মধ্যে। সেটি হচ্ছে প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরের বিভিন্ন কোষ মরে যায়, মৃত এই কোষগুলো কোষের অভ্যন্তরে লাইসোজোম নামের একটি বিশেষ কোষাঙ্গে জমা হতে থাকে। একইভাবে শরীরের মধ্যে মৃত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসও জমা থাকে লাইসোজোমে। বলা যেতে পারে লাইসোজোম হচ্ছে কোষের রিসাইকেল গার্বেজ বিন। কিন্তু শরীর যখন কোন চাপের মুখে পড়ে তখন রিসাইকেল গার্বেজ বিনে সঞ্চিত মৃতকোষগুলো থেকে শরীর শক্তি এবং নতুন কোষ তৈরি করে। যার ফলে শরীরের বর্জ্য ব্যবহৃত হয়ে শরীরকে করে দূষণমুক্ত। শরীরের এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় অটোফেজি, যার অর্থ হলো সেল্ফ ইটিং বা আত্মভক্ষণ। অটোফেজি প্রক্রিয়ার এই বিষয়টি আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন জাপানের ডা. ইয়োসনারি উসোমি। অটোফেজি হচ্ছে শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে দূষণমুক্ত করার পদ্ধতি। কোনো কারণে এই অটোফেজি প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে তা টাইপ-টু ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও অটোফেজি প্রক্রিয়ায় শরীরে তৈরি হয় নাইট্রিক অক্সাইড। এই নাইট্রিক অক্সাইড দেহকোষকে পুনরুজ্জীবিত করে বাড়িয়ে দেয় কোষের আয়ু যা এন্টি এজিং বা বার্ধক্য রোধক হিসেবে কাজ করে। কোষ পুনরুজ্জীবনের ইতিবাচক প্রভাব পুরো শরীরের ওপরই পড়ে যা অন্য অঙ্গের উপকারে আসে। তার মানে হচ্ছে অটোফেজি শরীরকে ভাঙে না বরং শরীর গড়ে। আর অটোফেজি এর পদ্ধতিকে চালু করতে প্রয়োজন কিছুটা দীর্ঘ তবে সবিরাম উপবাস। যা রোজার রাখার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি করতে পারেন। তবে এসব কিছুই সুস্থ ব্যক্তির সুস্থতার জন্য। কিছু কিছু অসুস্থতায় সবিরাম উপবাস এবং অনাহার দুটোই ক্ষতিকর। অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগের ক্ষেত্রে সবিরাম উপবাস উপকারে আসে। তবে যাদের রোগ নিয়ন্ত্রণে নেই তাদেরকে
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, মিলড্রেড এলি ক্যারিয়ার কলেজ, নিউ ইয়র্ক সিটি ক্যাম্পাস, যুক্তরাষ্ট্র।

Comments