নতুন আহলে হাদীস এবং তাবলীগ জামাতের মাঝে কিছু মিল ও অমিলঃ- ড. মুফতি আবুল কালাম আজাদ বাশার,,
নতুন আহলে হাদীস এবং তাবলীগ জামাতের মাঝে কিছু মিল ও অমিলঃ- ড. মুফতি আবুল কালাম আজাদ বাশার,,
আমরা জানি আহলে হাদীস ও তাবলীগ জামাত ভিন্ন ধারার দুটি ইসলামী দল। এ দল দুটির মাঝে চিন্তা- চেতনার বিশাল ফারাক।
তাবলীগ জামাত আকাবির কর্তৃক পরিচালিত একটি দল। তারা কুরআন, সুন্নাহ ও আকাবিরদের কথাকে সমান ভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বক্তব্যের ক্ষেত্রে রেফারেন্স হিসেবে কুরআন, সুন্নাহ থেকেও মুরব্বিদের কথা ও স্বপ্নে পাওয়া তথ্যকে ক্ষেত্র বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
পক্ষান্তরে আহলে হাদীসগণ কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আমল করে থাকে। আমলের ক্ষেত্রে তারা সহীহ হাদীসকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। দলীল বিহীন পীর বুজুর্গের কিচ্ছা -কাহিনী বলতে তাদেরকে শুনা যায় না।
দল দুটির একটি আরেকটিকে হক পন্থী দল মনে করে না; বরং নিজেদের অবস্থান থেকে একটি অন্যটিকে দ্বীনের জন্য ফিৎনা বলে প্রচার করে থাকে।
কিন্তু, একটি জায়গায় তাদের মাঝে চমৎকার মিল রয়েছে। আর তা হলো ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের আন্দোলনের বিরোধিতা।
দুটি দলই মনে করে, এ জন্য কোন চেষ্টা- প্রচেষ্টা বা আন্দোলনের প্রয়োজন নেই।
তাবলীগ জামাত বলে বেড়ান-
"সব মানুষ আল্লাহ ওয়ালা হয়ে গেলে দ্বীন নিজে নিজেই কায়েম হয়ে যাবে। আর রাজনীতি? এটাতো হলো "রাজার নীতি" (নীতির রাজা নয়)। মুসলমান আবার "রাজার নীতি" মানবে কেন?"
নতুন আহলে হাদীসগণ বলে বেড়ান-
"সব মানুষ তাওহীদ পন্থী হয়ে গেলে আল্লাহ নিজেই দ্বীন কায়েম করে দেবেন। আর গণতন্ত্রের মত হারাম তন্ত্র দিয়ে কিসের দ্বীন কায়েম?"
"সব মানুষ তাওহীদ পন্থী হয়ে গেলে আল্লাহ নিজেই দ্বীন কায়েম করে দেবেন। আর গণতন্ত্রের মত হারাম তন্ত্র দিয়ে কিসের দ্বীন কায়েম?"
তাই দুটি দলই ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্হা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে না; বরং বিরোধিতা করে থাকে। কি কাকতালীয় মিল!!
কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, যে "রাজার নীতি" ও "গণতন্ত্র হারামের" দোহাই দিয়ে দল দুটি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের আন্দোলনের বিরোধিতা করে থাকে, সে দল দুটির (আমার ধারণা মত) হয়ত ৮০% লোক আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আপনিও খোজ নিয়ে দেখতে পারেন।
উনারা উনাদের লোকদেরকে ফাতওয়া দিয়ে ইসলামী রাজনীতি থেকে দূরে রাখলেও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি থেকে দূরে রাখেন নি।
ওখানে গেলে কি "রাজার নীতি" ও " গণতন্ত্র" দুটিই জায়েয হয়ে যায়?
ওখানে গেলে কি "রাজার নীতি" ও " গণতন্ত্র" দুটিই জায়েয হয়ে যায়?
যদিও পূর্বে আহলে হাদীসের দায়িত্বশীল পর্যায়ের অনেক আলেম সরাসরি ইসলামী রাজনীতি করতেন, অনেকে এখনও করেন। তারা নতুন আহলে হাদীসদের মত নন। বুঝার চেষ্টা করতে হবে কারা ভুল করছেন? আগের তারা? না, নতুনেরা?
চোরের হাত কাটা, ডাকাত শুলে দেয়া সহ ইসলামের হুদুদও কেসাসগুলো, নামাজ-রোজার মতই ফরজ। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম নাহলে এগুলো কায়েম করবে কে?
নামাজ- রোজার গুরুত্ব আল্লাহই মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেবেন, এ কথা বলে তাবলীগ ও আহলে হাদীসের ভাইয়েরা ঘরে বসে থাকেন নি; বরং এর জন্য সভা, সেমিনার, দাওয়াত, গাস্ত, ওয়াজ- মাহফিলসহ আরো কতকিছু করছেন।
কিন্তু যে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের জন্য হিজরতের পথে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সা, দোয়া করেছেন ( ওয়াজআল লী মিল্লাদুনকা সুলত্বানান নাছিরা), এবং সে দুআ পবিত্র কুরআনের আয়াত হিসেবে আল্লাহ নাযিল করেছেন। উনারা বিভিন্ন দোহাই দিয়ে তা থেকে নিজেরাই শুধু দূরে থাকছেন না, অন্যদেরকেও দূরে রাখছেন।
তাদের ফাতওয়া শুনে ইসলামী আন্দোলনের কিছু একনিষ্ঠ কর্মীও ইসলামী আন্দোলন থেকে না বুঝে দূরে সরে যাচ্ছেন। আর তারা এটাকে তাদের সফলতা মনে করছে!!
"রাজার নীতি" মানা জায়েয নাই, "গণতন্ত্র হারাম" (এ নিয়ে পরে লিখব, ইনশা আল্লাহ), তর্কের খাতিরে আপনাদের এসব কথা মেনে নিয়ে বলবো, এগুলোর বাহিরে গিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্হা কায়েমের জন্য আপনারা বাস্তব মুখী কোন্ ভুমিকা রেখেছন? এ ব্যাপারে নতুন কোন্ ফর্মুলা দিয়েছেন?
না, আপনারা তা করেন নি। তাহলে আপনাদের এ ফাতওয়া দ্বারা কারা উপকৃত হচ্ছে? ভোটের সময় আপনাদের লোকেরা কি ঘরে বসে থাকবে? না কি তাগুতের মাথায় তেল দেয়ার জন্য দৌড়িয়ে যাবে?
ভাবুন, গভীর ভাবে ভাবুন। দ্বীন তো কারের একার নয়, দ্বীন আমাদের সবার। তাই আমাদের কারো দ্বারা দ্বীনের ক্ষতি হোক এটা আমরা কেউই চাই না।
Comments
Post a Comment