কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ

দেশে এমন এক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে, যার মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে, এটাই ইসলামী খেলাফতের মূলনীতি এবং এটাই আধুনিক গণতন্ত্রের কথা। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া উচিত হবে না। একই সাথে দেশ থেকে সর্বপ্রকার দুর্নীতি দূর করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থার সর্বস্তরে নৈতিকতার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা

সব রাষ্ট্রেরই লক্ষ্য হওয়া উচিত কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ইসলামের ইতিহাস থেকে দেখা যায়, ইসলামী খেলাফতের সময়ও কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। এ ধরনের রাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছে এক দিকে উন্নয়ন এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা; অন্য দিকে সব দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এ জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা দরকার।
এক. সুবিচারপূর্ণ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা। যেমন, ইসলামের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কোনো হারাম বা ক্ষতিকর জিনিস উৎপাদন করা যাবে না। বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে এবং কর্মসংস্থান সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকতে হবে। সুদবিহীন অর্থব্যবস্থা ও ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজ প্রমাণ হয়ে গেছে, সুদবিহীন ব্যাংকিং সম্ভব এবং সুদবিহীন ব্যাংকিং প্রচলিত বা সুদভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার চেয়ে উন্নত। ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যয়নীতি ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখা হয়, যাতে দারিদ্র্য দূর হয় এবং দলের উন্নয়ন হয়। তেমনিভাবে করনীতিও ব্যাপকভাবে পরিবর্তন হয়। কর যতটুকু প্রয়োজন করা ততটুকুই ধার্য করতে হবে; তার বেশি নয়। তবে জাকাত প্রতিষ্ঠা করতে হবে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য। দারিদ্র্য দূর করার জন্য জাকাত ছাড়াও সরকারের রাজস্ব খাত থেকে পর্যাপ্ত ব্যয় করতে হবে। ইসলামী অর্থনীতি পুঁজিবাদ থেকে অনেক উত্তম। কারণ, পুঁজিবাদে দরিদ্রের কোনো স্থান নেই। অপর দিকে সমাজতন্ত্রের উৎপাদনব্যবস্থা দুর্বল। তাতে সমস্যার সমাধান হয় না।
দুই. কল্যাণরাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো, দারিদ্র্য দূর করা। বাংলাদেশের কথা যদি ধরা হয়, এখানে বৃদ্ধদের এবং বিধবাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা আছে। এসব ভাতা এমন হতে হবে, যেন আর হাত পাততে না হয়। তেমনিভাবে সব শিক্ষিত বেকার, যাদের কর্মসংস্থান হয় না, তাদের জন্য বেকারভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা কল্যাণ রাষ্ট্রের একটি বড় দিক। ঢাকা এবং অন্যান্য বড় শহরের রাস্তায় ছিন্নমূল যারা পড়ে আছে তাদেরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে হবে, তাদের গ্রামে নিয়ে যেতে হবে এবং তাদেরকে বেকারভাতা দিতে হবে, যদি না তাদের কোনো কাজ দেয়া যায়। এতে যদি প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ, বাংলাদেশের বাজেটের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকা। যেসব প্রজেক্টের অর্থনৈতিক মূল্য বেশি নয়, সেগুলো কম হলে ক্ষতি হবে না।
তিন. দেশে এমন এক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে, যার মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে, এটাই ইসলামী খেলাফতের মূলনীতি এবং এটাই আধুনিক গণতন্ত্রের কথা। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া উচিত হবে না। একই সাথে দেশ থেকে সর্বপ্রকার দুর্নীতি দূর করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থার সর্বস্তরে নৈতিকতার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা। মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের জন্য কুরআনের জ্ঞান দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অমুসলিম ছাত্রছাত্রীদের জন্য তাদের ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। আশা করি, সবাই কল্যাণরাষ্ট্রের গুরুত্ব বুঝতে পারবেন। 
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
ফ্রম নয়া দিগন্ত

Comments