"থাকুমনা এই ----------------- দেশে"

ecurrentworld
ecurrentworld


"থাকুমনা এই ----------------- দেশে"

"গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে আজকে গেসিলাম মীটিং করতে। দুপুর ২টায় ডাকসে, দেড়টায় গেসি, সন্ধ্যা ৬টায় কর্তাব্যক্তিদের চাঁদবদনের দেখা পাইসি। বিশৃঙ্খল, হযবরল একটা অবস্থা। কোনো স্কেজ্যুল নাই, টাইম টেবিল নাই, কিচ্ছু নাই। কর্তাবাবুরা আমোদ করতেসেন।
আমার সাথে বুয়েটের দু'জন প্রফেসর ছিলেন। চারটা ঘণ্টা মীটিং রুমের বাইরে উনাদের (আমিসহ) দাঁড় করায়ে রাখা হইসে। বসার একটা চেয়ারও দেয়া হয়নি উনাদেরকে, একটা টুলও না। কিছু জিগ্যেস করতে গেলেই কাম সারছে! প্রচণ্ড প্রতাপশালী পিয়নদের ভাষ্যমতে, বুয়েটের প্রফেসরদের চেয়ে উনাদের সময়ের দাম বেশি। দুই টাকার এক চাপরাশি আমাকে বলসে, তার সময়ের দাম নাকি আমার স্যারদের চেয়ে বেশি।
যাই হোক, অনেক দয়া করে মহামান্য আমলারা আমাদের সাথে দেখা করলেন। প্রেজেন্টেশনও দিলাম। আমার প্রজেক্ট হইলো একটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বানানো, যেটা বাংলাদেশের পিচ্চি পোলাপাইনের সাথে ফেসবুকে বাংলায় চ্যাট করবে, তাদের যৌনতা, স্বপ্নদোষ, ঋতুস্রাব, পর্নোগ্রাফি - অর্থ্যাৎ, যা কিছু নিয়ে প্রশ্ন করলে পোলাপাইন বাপ-মায়ের কাছে ধমক খায় - সুন্দর করে বন্ধুর মতো সেসব প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসার সঠিক উত্তর দিবে। ৬ মাস ধরে কাজ চলতেসে, আজকে এক মহামান্য আমলা, যিনি কম্পিউটার সায়েন্সের সাথে কোনোভাবেই জড়িত না, ঠাস করে বললেন, "যৌনতা" কথাটা খুবই অশালীন। এইসব অশালীন কথাবার্তা বলা যাবে না, এইসব কাজ করা যাবে না। করতে হবে "পরিশীলিত" (উনি ঠিক এই শব্দটাই ব্যবহার করসেন) কাজ। রিয়্যালি? আরে, আমাকে তো প্রকল্পটা দেয়াই হইসে যেনো পোলাপাইন যৌনতা নিয়া খোলাখুলি কাউরে প্রশ্ন করতে পারে। "আব্বা, সেক্স মানে কী?" জিজ্ঞাসা করে তারপর ঝাড়ি খায়া পোলাপাইনরে গুগল সার্চ দিয়া ঘুরতে ঘুরতে যেনো পর্ন সাইটে যাওয়া না লাগে। আপনাদের মতো লোকের জন্যই তো আমাদেরকে বাধ্য হয়ে এরকম একটা সিস্টেম বানাইতে হইতেসে। আপনারা পর্ন সাইট বন্ধ করবেন, কিন্তু পর্ন দেখা কেনো ভালো না সেইটা পোলাপাইনরে শিখাবেন না, শিখতেও দিবেন না। হাততালি হবে, হাততালি।

ecurrentworld
ecurrentworld

যাই হোক, আমি কিছু বুঝি না, আপনেরাই সব বুঝেন। কিন্তু আমার স্যাররা পিএইচডি, পোস্টডক করে দেশে ফিরে আসছেন শুধু দেশটাকে ভালো কিছু দেয়ার আশায় - এইটা আমি বুঝি। দেশের সেরা মেধাবীরা বুয়েটের ক্লাসরুমে বসার সুযোগ পায়। তাদের মধ্যেও যারা সেরা মেধাবী, তাঁরা হন বুয়েটের শিক্ষক। তাদের মধ্যেও যারা সেরা মেধাবী, তাঁরা বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি করেন, তাদের নামের শুরুতে সম্মান দিয়ে "ডক্টর" উপাধি যোগ হয়, সেরা কোম্পানি আর ভার্সিটিগুলা তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করার জন্য বইসা থাকে - এইটা আমি বুঝি। আপনারা ১০০০ টা কোটাধারী বিসিএস ক্যাডার সচিব জোড়া দিলেও আমার স্যারদের নখের ডগার যোগ্য হইতে পারবেন না - এইটা আমি বুঝি। আপনারা আমার চেয়ে আরও ভালো বুঝেন। এইজন্যই চার ঘণ্টা তাদেরকে বসতে না দিয়ে রুমের বাইরে দাঁড় করায়ে রাখেন, ক্ষমতার দাপট দেখান।
আমি দেশপ্রেমিক না। যারা আয়েশের জীবন ছেড়ে দেশে ফিরেন, তাঁরা দেশপ্রেমিক। তাদেরকে সোনার বাংলায় এভাবেই অশিক্ষিত মূর্খরা "সম্মান" জানায়।
আমার বড় সাধ ছিলো, পিএইচডি শেষ করে আমি দেশে ফিরবো, দেশের জন্য কিছু করবো। ভাবতাম, কাউকে না কাউকে তো পরিবর্তনের শুরুটা করতে হবে। কিন্তু আমার মা-বাবা সবসময় আমাকে দেশের বাইরে সেটল হতে বলেন। এতদিন আমি উনাদের সাথে যুদ্ধ করসি; আর করবো না।
দেশের সেরা মেধাবীরা দেশের বাইরে চলে যায় - এজন্য মাইনষে তাদেরকে গালি দেয়। শিক্ষা, মেধা, মননে আমাদের জুতার তলার কেউ যখন এদেশে আমাদেরকে চোখ রাঙায়, তখন "থাকুমনা এই বালের দেশে" বলে আমরা ট্রাম্পের দেশে চলে যাবোনা কেনো?
-
Collected

ecurrentworld
ecurrentworld

Comments