Posted by
shahin
প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে বিভক্ত আইনজীবীরা
অবসরের পরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থী বলে প্রধান বিচারপতি যে মন্তব্য করেছেন, তাকে ঘিরে আইনাঙ্গনে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের সঙ্গে একমত হলেও অ্যাটর্নি জেনারেল ভিন্নমত পোষণ করেছেন। কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বিষয়ে মন্তব্যই করতে চাননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবসরের পরে বিচারপতিদের রায় লেখার রীতি অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়েও বিচারপতিরা অবসরের পরে সই করেছেন।
বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বাণী দেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এতে তিনি বলেন, কোনো কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধান বিচারপতি বাণীতে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বাংলাদেশের সংবিধান, আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের শপথ গ্রহণ করেন। কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর তিনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে গণ্য হন বিধায় তাঁর গৃহীত শপথও বহাল থাকে না।
সুপ্রিম কোর্টে সাধারণত বিচারপতিরা উন্মুক্ত আদালতে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। এরপর তাঁরা সময় নিয়ে বিস্তারিত যুক্তি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায়টি লেখেন ও পরে প্রকাশ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবসরের পরে বিচারপতিদের রায় লেখার রীতি অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়েও বিচারপতিরা অবসরের পরে সই করেছেন।
বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বাণী দেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এতে তিনি বলেন, কোনো কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধান বিচারপতি বাণীতে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বাংলাদেশের সংবিধান, আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের শপথ গ্রহণ করেন। কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর তিনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে গণ্য হন বিধায় তাঁর গৃহীত শপথও বহাল থাকে না।
সুপ্রিম কোর্টে সাধারণত বিচারপতিরা উন্মুক্ত আদালতে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। এরপর তাঁরা সময় নিয়ে বিস্তারিত যুক্তি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায়টি লেখেন ও পরে প্রকাশ করেন।
অবসর গ্রহণের পর রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থী—প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্য প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, অবসরের পর বিচারপতিরা রায় লিখতে পারবেন না, এমন কোনো সুনির্দিষ্ট বিধান নেই। যদি প্রধান বিচারপতি মনে করেন অবসরের পর রায় লেখা যাবে না, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের বিধিমালা সংশোধন করে এ বিধান যুক্ত করতে পারেন।
তবে প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের পর গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে। আইনজীবী সমিতি ভবনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সম্পাদক এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মাহবুব বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানের পরিপন্থী বলে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক যে রায় দিয়েছিলেন, তাতে তিনি স্বাক্ষর করেন অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পরে। তাই ওই রায়ের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই ও অবৈধ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাবে যে সংকট ও রাজনৈতিক হানাহানি চলছে, তার একমাত্র কারণ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন পদ্ধতি বাতিল করে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন। আর এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পেছনে রয়েছে বিচারপতি খায়রুল হকের সংবিধান পরিপন্থী অবৈধ ওই রায়।
ক্ষমতাসীন দলের কাছে আইনজীবী সমিতি দাবি জানায়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংকট নিরসন করতে হবে।
২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ। ওই বছরের ১৭ মে খায়রুল হক অবসরে যান। এর প্রায় ১৬ মাস পর ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ওই রায় পূর্ণাঙ্গ আকারে প্রকাশিত হয়। ৭৪৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ ওই রায়ের ৩৪২ পৃষ্ঠা লিখেছিলেন খায়রুল হক।
প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক হাসতে থাকেন। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
পরে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রথম আলোকেবলেন, প্রধান বিচারপতির বক্তব্য লুফে নিয়ে আইনজীবী সমিতি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ওই মন্তব্য করেছেন বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে। কয়েকজন বিচারপতি রায় না লিখে ঝুলিয়ে রেখেছেন, তাঁদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেছেন।
অবসরের পর বিচারপতিদের রায় লিখতে বাধা নেই উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একজন বিচারপতি যখন রায় ঘোষণা করেন তখন তাঁর শপথ থাকে। পরে হয়তো কেউ অবসরে চলে গেলে পূর্ণাঙ্গ রায় লেখেন। কিন্তু রায় কী হবে তা তো তিনি আগেই ঘোষণা করে দিয়েছেন। তাই এতে কোনো সমস্যা নেই।
আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বহুদিন ধরেই বাংলাদেশে অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিদের রায় লেখার প্রচলন রয়েছে। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় ছাড়াও ধর্মীয় বিষয়ে ফতোয়া নিয়ে খায়রুল হক যে রায় দিয়েছিলেন, তা পূর্ণাঙ্গ আকারে প্রকাশিত হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন বছর পর। ২০১১ সালের ১২ মে ফতোয়ার রায় দিয়েছিলেন খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ। ৪৪ মাস পর ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ওই রায় পূর্ণাঙ্গ আকারে প্রকাশিত হয়।
আইনজীবীরা আরও জানান, এ ছাড়া বিচার বিভাগ পৃথক করে ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ও পূর্ণাঙ্গ আকারে প্রকাশিত হয়েছিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোস্তাফা কামালের অবসরে যাওয়ার পর। সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিল বিভাগে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণা হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। ওই সময় প্রধান বিচারপতি ছিলেন মো. মোজাম্মেল হোসেন। আপিল বিভাগের একই বেঞ্চের সদস্য ছিলেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। তিনি গত বছরের ১ অক্টোবর অবসরে যান। আর সাঈদীর রায় পূর্ণাঙ্গ আকারে প্রকাশিত হয় গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে একমত পোষণ করে সই করেছেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন। আর শামসুদ্দিন চৌধুরী রায়ের একটি অংশ আলাদাভাবে লিখেছেন।
৪ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মহসিন রশীদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিচারকেরা চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরও মামলার রায় লেখেন, যখন তাঁরা আর শপথবদ্ধ নন, সেটা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। অবসরের পর দেওয়া বা সই করা রায় মূল্যহীন কাগজের টুকরো মাত্র।
বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার অবশ্য এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি প্রথমআলোকেবলেন, ‘শপথের পর একজন বিচারপতির ওপর যা দায়দায়িত্ব থাকে, অবসরের পর তা আর থাকে না। এখন অবসরের পরেও যদি কোনো বিচারপতির কাজ বাকি থাকে, তাহলে কী হবে? এ জন্যই এ প্রশ্নটা উঠেছে। এটা খুবই টেকনিক্যাল বিষয়। এখন অনেক বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পরও রায় লিখছেন না, ঝুলিয়ে রাখছেন, আবার অনেকে পত্রপত্রিকায় নানা ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, এ জন্যই হয়তো মনের দুঃখে তিনি (প্রধান বিচারপতি) ওই কথা বলেছেন।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment