বিস্ময়কর। তবে ঘটনা সত্য।


বিস্ময়কর। তবে ঘটনা সত্য। বাংলাদেশের রাজনীতিকে ঘিরে শোনা যাচ্ছে একেবারে বিপরীতমুখী দুধরনের গুঞ্জন। একটিতে বলা হচ্ছে, পর্দার আড়ালে আওয়ামী লীগ-বিএনপির যোগাযোগ বাড়ছে। আগাম নির্বাচন প্রশ্নে সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনাও চলছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দূতিয়ালিতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা। বিএনপির পক্ষ থেকে রয়েছেন দুই-তিনজন। একেবারেই বিপরীত আলোচনা রয়েছে অন্য একটি। বলা হচ্ছে, আরও হার্ডলাইনে যাবে সরকার। জামায়াত মোটামুটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। চলতি বছরই আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে দলটি। এরপর জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ব্যবসা-বাণিজ্য দখলে নেয়া হবে। এরইমধ্যে জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। প্রভাবশালী নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ভবিষ্যৎ নিয়েও জামায়াতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ে তার আমৃত্যু কারাদণ্ড হলেও এ রায়ের বিরুদ্ধে এখন রিভিউ আবেদন দায়ের করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিএনপির ওপরও আরও খড়গ নেমে আসতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। বিচার এগুচ্ছে বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমানের মামলারও। দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী এখনও দৌড়ের ওপর আছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ প্রকাশ্যই বলেছেন, জনগণ চাইলে বিএনপিকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি এক ধরনের বুঝাপড়ার চেষ্টা করছে। ২০১৯ সালের নির্ধারিত সময় অথবা এর আগেও ওই নির্বাচন হতে পারে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সে নির্বাচনের কোন সম্ভাবনা নেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে গঠিত মন্ত্রিসভায় বিএনপির অংশীদারিত্বের আলোচনা রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে জাতিসংঘের নিবিড় তত্ত্বাবধানের এক ধরনের প্রস্তাব থাকলেও সরকারের এতে সায় নেই। সামনের নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবেই সরকারি দল বাংলাদেশে ডান ব্লকের বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুলেছে। হেফাজতে ইসলামকে ম্যানেজ করতেও সক্ষম হয়েছে ক্ষমতাসীনরা। শুক্রবার হেফাজত আমীর আল্লামা শফী বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের কোন বিভেদ নেই। ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গেও ক্ষমতাসীনদের একটি মহলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। ইসলামী ঐক্যজোটের বড় একটি অংশ এরইমধ্যে ২০ দলীয় জোট ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে। এক ধরনের স্থিতাবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছুটা চাঞ্চল্য তৈরি করেছে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের লেখা আত্মজীবনী ‘দ্য আদার সাইড অব মাউন্টেইন’। প্রণব মুখার্জির সঙ্গে কেন খালেদা জিয়া দেখা করেননি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। সব রাজনৈতিক বিশ্লেষকই একবাক্যে বলে এসেছেন, ভারতীয় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা না করার কারণে খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে কড়া মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। এমনকি বিএনপির ভেতরেও এ মত রয়েছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের যে চেষ্টা তিনি সেসময় করেছিলেন, ওই বৈঠক বাতিলের ফলে তা হাওয়ায় উড়ে যায়।
বৈঠকটি কেন বাতিল করেছিলেন খালেদা জিয়া? তার পেছনে দুুটি কারণ শোনা যায়। ১. বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর পরামর্শের কারণেই খালেদা জিয়া ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে আলোচনা রয়েছে। ২. নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে একটি শক্তিশালী মহল থেকে খালেদা জিয়াকে ওই বৈঠকে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।
যে কারণেই হোক না কেন জামায়াতের হরতালের মধ্যে খালেদা জিয়ার দেখা না করার কারণে প্রণব মুখার্জি বিব্রতবোধ করেছিলেন। তবে ভারতের কংগ্রেস জমানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ এখন জানাচ্ছেন, এ বৈঠক বাতিলের আগেই বাংলাদেশ নীতি প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত। কিভাবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কংগ্রেস সরকারের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা হাওয়ায় উড়ে গিয়েছিল তার বিবরণ রয়েছে সালমান খুরশিদের ‘দ্য আদার সাইড অব মাউন্টেইন’-এ। সালমান খুরশিদ লিখেছেন, বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভারতের খুবই উষ্ণতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। খালেদা জিয়া ভারত সফরের সময় প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। যদিও প্রণবের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেক নেতারই ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে বলে আলোচনা রয়েছে। সালমান খুরশিদের ভাষায় সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছিল। তার বাংলাদেশ সফরের সময়ও খালেদা জিয়া তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। সবকিছু চমৎকারভাবেই এগুচ্ছিল। কিন্তু পুরো বিষয়টিই ভেস্তে যায় শাহবাগ আন্দোলনের ফলে। সালমান খুরশিদ শাহবাগ আন্দোলন কথাটি ব্যবহার করেননি। তবে তার বয়ানে বুঝা যায়, তিনি শাহবাগ আন্দোলনের কথাই বুঝিয়েছেন। তার ভাষায়, সরকার সমর্থক যুব শক্তি এবং জামায়াতের কট্টরপন্থিরা রাজপথে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। আর তখনই ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সালমান খুরশিদ এখানে একেবারেই অকপট। অনেক বস্তাপচা আত্মজীবনীতে যেমন মিথ্যার বেসাতি গাওয়া হয় সালমান খুরশিদ সে পথে হাঁটেননি। তিনি লিখেছেন, সেই পরিস্থিতিতে ভারত আওয়ামী লীগকেই বেছে নেয়। 
সালমান খুরশিদের এই বই প্রকাশের পর প্রশ্নটি আবার নতুন করে সামনে এসেছে। তাহলে কি প্রণব-খালেদা বৈঠক প্রশ্নে বিশ্লেষকরা ভুল ছিলেন।

Comments