পোশাক শিল্পে ক্যারিয়ার
তামান্না তানভী : বর্তমানে দেশে পোশাক শিল্প একটি অন্যতম রফতানিমুখী শিল্প হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। সত্তরের দশক থেকে রফতানিমুখী খাত হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্পের উনড়বয়ন ঘটতে শুরু করে এ দেশে। ধীরে ধীরে এ শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজারও দ্রুত সম্প্রসারিত হতে থাকে। তখন থেকেই এ পোশাক শিল্প কর্মসংস্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে এ সেক্টরে প্রায় ২৫ লাখেরও অধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত লোকের কর্মসংস্থানের এক দ্বার উন্মোচিত হয়েছে এ শিল্পের মাধ্যমে। এছাড়া নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য বেশ সুবিধাজনক হওয়ায় পোশাক শিল্পে নারীর সংখ্যাও অনেক। ফলে এ শিল্পে নারীরাও পুরুষের পাশাপাশি সহকর্মী হয়ে ওঠছে। এ শিল্পের সম্ভাবনা অনেক। একটা সময় ছিল যখন শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েরা এ শিল্পে আগ্রহী ছিল না। কিন্তু বর্তমানে কাজের সুযোগ-সুবিধা এবং বেতন উপযুক্ত হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষিত তরুণ পোশাক শিল্পে তাদের ক্যারিয়ার জীবন শুরু করছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ হাজার গার্মেন্টস আছে যা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। বর্তমানে যে গার্মেন্ট রয়েছে তার জন্যই উপযুক্ত লোকবল পাচ্ছে না মালিক পক্ষ আর এ সেক্টরের বৃদ্ধির সঙ্গে প্রচুর দক্ষ ও শিক্ষিত লোকবল প্রয়োজন এ পোশাক শিল্পে। দেশের μমবিকাশমান এ শিল্পে শুধু যে শিক্ষিত লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে তা নয়। এখানে অর্ধশিক্ষিত এবং দেশের পিছিয়ে পড়া অনেক বেকার যুবক-যুবতী তাদের শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা খুলে দিয়েছে এ শিল্পের সম্ভাবনার দ্বার। পোশাক শিল্প সম্ভবত পৃথিবীতে পোশাক শিল্পই একমাত্র শিল্প যাকে কেন্দ্র করে সবেচেয়ে বেশি সহযোগী শিল্প গড়ে উঠেছে। তাই এই পোশাক শিল্প কোনো একক নাম নয় এর বিস্তৃতি বহুমুখী পোশাক শিল্পের সকল সেক্টরে কাজ করা হয়। এর মধ্যে অ্যাপারেল ওয়াকিং সেকশন, অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং সেকশন, কাটিং সেকশন, ডিজাইন সেকশন, বায়িং সেকশন রয়েছে। আর এসব সেকশনের সমন্বয়েই পোশাক শিল্প গঠিত। কাজের ক্ষেত্র ও বেতন প্রতিষ্ঠান ভেদে কাজের ক্ষেত্র ও বেতন পরিবর্তন হয়। তবে প্রতিষ্ঠান আলাদা হলেও পোশাক শিল্পের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় কিছু কমন ক্ষেত্র রয়েছে যা প্রায় সব গার্মেন্ট একই ধরনের হয়ে থাকে। মার্চেন্ডাইজার, জেনারেল ম্যানেজার বা জিএম, অ্যাকাউন্টস অফিসার, ফ্যাশন ডিজাইনার, প্রোডাকশন ম্যানেজারসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ রয়েছে এ শিল্পে। এসব পদ ছাড়াও আরো কিছু পদ রয়েছে যেখানেও কাজ করার প্রচুর সুযোগ আছে যেমন ফিনিশিং ইনচার্জ, কাটিং মাস্টার, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, ডাইং মেশিন অপারেটর, প্যাটার্ন মেকার ইত্যাদি। এসব পদেও ভালো সম্মানিতে কাজ করে ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জন সম্ভব। এসব পদে একজন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় ১৫ থেকে ২ লাখ টাকা সম্মানি পেয়ে থাকেন। প্রশিক্ষণ ও ডিগ্রি অর্জন পোশাক শিল্পে দক্ষতার সাথে কাজ করতে ও নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। সময়ের পরিবর্তনে সেই সাথে আসছে নতুন নতুন যুগোপযোগী ক্যারিয়ার। এমনি একটি ক্যারিয়ার ফ্যাশন ডিজাইন ও মার্চেন্ডাইজিং অর্থাৎ পোশাক শিল্প ক্যারিয়ার। আর এ শিল্পের চাকরির জন্য বিভিনড়ব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি বিভিনড়ব মেয়াদি ফ্যাশন ডিজাইন ও মার্চেন্ডাইজিং এ অনার্স বিবিএ এমবিএ ডিগ্রি প্রদান করছে। আর এ শিল্পের জন্য জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি একটি বিষয়। প্রশিক্ষণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই এ সেক্টরে সাফল্য অর্জন করা যায় না। ফ্যাশন ডিজাইনিং ও মার্চেন্ডাইজিংয়ে প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, ১০৫ উত্তরা মডেল টাউন, সেক্টর-৭, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০। শান্তা-মারিয়াম μিয়েটিভ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি, বাড়ি নং-১, রোড-১৪, সেক্টর-১৩, উত্তরা, ঢাকা। বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইনস্টিটিউট, নিউডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন ডিজাইন, কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকা। এছাড়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনার জন্য রয়েছে কলেজ অফ টেক্সটাইল টেকনোলজি, তেজগাঁও, ঢাকা। প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেশের প্রধান রফতানিখাত পোশাক শিল্পের উনড়বয়নে এবং এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন গার্মেন্ট শিল্পের মালিকরা। বর্তমানে যে লোকবল এ শিল্পে কাজ করছে তাদের আরো বেশি দক্ষ ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, কর্মমুখী এবং বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। যাতে একজন শিক্ষার্থী শিক্ষা অবস্থায় গার্মেন্ট শিল্প সম্পর্কে জানতে পারে এবং অধিক রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করা। পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন পাওয়ার বা বিদ্যুতের যেটা ছাড়া পোশাক তৈরি করা সম্ভব নয়। সঠিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলে এ শিল্পের উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব এবং আরো অধিক হারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন -
Comments
Post a Comment