মৌলবাদ যে একটা বাস্তবতা,

একই কায়দায় একের পর এক হত্যার ঘটনায় সরকার হতভম্ব হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গতকাল এক প্রকাশনা সংস্থার মালিককে হত্যা এবং আরেক প্রকাশনীর মালিকসহ তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখমের ঘটনায় সরকারের উচ্চপর্যায় অনেকটা সংশয়ে পড়ে গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যাওয়ার কথা বললেও এসব হত্যার ঘটনায় সরকারের নীতিনির্ধারকেরা প্রকাশ্যেই বিব্রত হওয়ার কথা স্বীকার করছেন। সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা মুখে বড় বড় কথা বললেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাঁদের মধ্যে একধরনের অসহায়ত্ব বোঝা যাচ্ছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় মনে করে, দুই যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর করাকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আগামী মাস দুয়েক এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছে।
গতকালের ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং একাধিক মন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজে যান। তাঁরা নিহত ব্যক্তিদের স্বজন এবং আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালমাটিয়ায় হামলার ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বিষয়টি তাঁকে অবহিত করেন। তিনি ওই ঘটনা ইতিমধ্যেই অবহিত বলে ওই কর্মকর্তাকে জানান। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে বলেন, তিনি বিষয়টি দেখছেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সমবেদনা জানান।
মাহবুবুল হক শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, যারা মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার বিপক্ষে বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তান বানাতে চায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে যারা রুখতে চায়, তারাই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব তাদেরই ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, তারা যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, সরকার এসব হত্যাকারী ও হামলাকারীকে খুঁজে বের করবে। তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, লালমাটিয়া এলাকায় অঘটনের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেছিল। কিন্তু এত সতর্কতার মধ্যেও এসব ঘটনা অব্যাহত থাকায় সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি আছে।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দুই যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকরকে সামনে রেখে একই গোষ্ঠী, একই শক্তি এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে সতর্কতা এবং সাবধানতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে কোনো কার্পণ্য করছে না। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে এসব ঘটনা ঘটছে। আমরা এগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছি না। বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গেই নিচ্ছি। এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা সাধ্যমতো চেষ্টায় আছি।’
সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে কয়েকজন ব্লগারকে একই কায়দায় হত্যার ঘটনা অব্যাহত থাকায় সরকারের মধ্যে একধরনের অসহায়ত্ব আছে। বিশেষ করে এসব নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতায় তারা অনেকটাই হতাশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা সত্য, আমরা এসব ঘটনা বন্ধ করতে পারছি না।’ তাঁর আশঙ্কা, মাস দুয়েক আরও অঘটন ঘটতে পারে।
সরকারের কেউ কেউ মনে করেন, কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে জঙ্গি হামলা থামানো যাবে না। এ জন্য জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সচেতনতা দরকার। বিশেষ করে প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য ছাড়া এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কঠিন বলে তাঁরা মনে করেন।
এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জঙ্গিদের প্রতিহত করতে রাষ্ট্র যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। তবে তাদের সামাজিকভাবে যেভাবে প্রতিরোধ করা দরকার ছিল, সেভাবে প্রতিরোধ আমরা করতে পারছি না। মৌলবাদ যে একটা বাস্তবতা, তা বামপন্থীরাও স্বীকার করছে না। তারা সরকারের সমালোচনা করছে, কিন্তু মৌলবাদ নিয়ে কিছু বলছে না। তবে একসময় এই অপশক্তি ধ্বংস হবে

Comments