দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম

দেশের ফুটবলে ‘বিজ্ঞান-মনস্ক’ হিসেবে তাঁর খ্যাতি। ফুটবল কোচ হিসেবে খেলার ব্যবহারিক জ্ঞানের পাশাপাশি যে কিছু তাত্ত্বিক জ্ঞানেরও দরকার হয়, সেই ব্যাপারটির বাংলাদেশের ফুটবলে প্রচলন অনেকটাই তাঁর হাত দিয়ে। খুব বড় ফুটবলার ছিলেন না, কিন্তু কোচ হিসেবে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন একটু আলাদা জায়গাতেই। মারুফুল হক নিজের কোচিং দক্ষতার আরেকটি স্বীকৃতি পেলেন।
কেবল বাংলাদেশেরই নয়, প্রথম দক্ষিণ এশীয় কোমারুফুল হকচ হিসেবে উয়েফার ‘এ’ লাইসেন্স পেয়েছেন। গত মঙ্গলবার ইংল্যান্ডে চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করেই মারুফ পেয়ে গেছেন কোচ হিসেবে এই স্বীকৃতি।
২০১২ সালে সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগেই উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্সের জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ) অধীনে আয়োজিত এই কোর্সটির তিনটি ধাপ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে অবশেষে পেয়েছেন এই লাইসেন্স। প্রথমে করেছিলেন প্রিপারেটরি কোর্স। দ্বিতীয় ধাপের প্রশিক্ষণটি করে এসেছেন গত বছর। গত আগস্টে শেষ করেন তৃতীয় ধাপের প্রশিক্ষণ। এবার গিয়ে দিলেন চূড়ান্ত পরীক্ষা। উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্স তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিল।
কোচিং ক্যারিয়ারের এই অর্জন দেশের ফুটবলেই ব্যবহার করতে চান মারুফ। ইংল্যান্ড থেকে প্রথম আলোকে বললেন, ‘নিজেকে শাণিয়ে নিতেই এই কোর্সটি করতে চেয়েছি। আগেই এএফসি “এ” লাইসেন্স নিয়েছি। আমার লক্ষ্য অবশ্যই উয়েফা “প্রো” লাইসেন্স।’ এই ‘প্রো’ লাইসেন্স হচ্ছে ফুটবল কোচিংয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি। বিশ্ব ফুটবলের শীর্ষস্থানীয় কোচরা এই প্রো লাইসেন্স নিয়েই দলগুলোকে প্রশিক্ষণ দেন। মারুফ সেদিকে আরও একটু এগিয়ে গেলেন।
তবে উয়েফার ‘এ’ লাইসেন্সও অনেক বড় পাওয়া বাংলাদেশের কোনো ফুটবল কোচের জন্য। দক্ষিণ এশিয়ারই আর কোনো কোচ এত দূর এগোতে পারেননি বলেই জানা গেল। তিনিই প্রথম কি না এ নিয়ে মারুফ মাথা ঘামাতেই চাইলেন না, ‘এসব নিয়ে আমি ভাবি না। আমি চাই আমার এই ডিগ্রি যেন দেশের ফুটবল উন্নয়নে একটু হলেও কাজে আসে।’
এই ডিগ্রি যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফুটবল একাডেমিতে কোচ হিসেবে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফুটবল একাডেমিতে তাঁর কাজ করার প্রস্তাব আছে। মারুফ আগ্রহী দেশের মাটিতে কাজ করতেই। তবে আর্থিক দিকটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানিয়েছেন তিনি, ‘দেশে ভালো প্রস্তাব পেলে দেশেই কাজ করব। দেশের ফুটবলের জন্য কাজ করার গৌরব অন্যরকম। তবে প্রস্তাবটা অবশ্যই হতে হবে সম্মানজনক।’
দেশের ফুটবলে মোহামেডান, শেখ রাসেল, শেখ জামাল, মুক্তিযোদ্ধার মতো দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মারুফ। ২০১৩ সালে শেখ রাসেলকে জিতিয়েছিলেন লিগসহ একাধিক শিরোপা। ঘরোয়া ফুটবলে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলেও জাতীয় দল কিংবা যুবদলের হয়ে কখনোই কাজ করার সুযোগ পাননি।

Comments