কেন নজরে কুনদুজ

আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর কুনদুজ আকস্মিকভাবে জঙ্গিদের দখলে যাওয়ার বিষয়টি ২০১১ সালে তালেবান উৎখাতের পর থেকে আফগান সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় বিপর্যয়গুলোর অন্যতম। শহরটি তালেবান জঙ্গিদের নিশানায় পরিণত হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। 
আফগানিস্তানের বড় শহরগুলোর একটি কুনদুজ। দেশটির উত্তরাঞ্চলের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পরিবহনব্যবস্থার কেন্দ্রও এটি। দক্ষিণে কাবুল, পশ্চিমে মাজার-ই-শরিফ ও উত্তরে প্রতিবেশী তাজিকিস্তানে যেতে সংযোগ মহাসড়ক রয়েছে কুনদুজের। আর ২০১১ সালের আগ পর্যন্ত দেশটির উত্তরাঞ্চলে তালেবানের শক্ত ঘাঁটি ছিল শহরটি। এ কারণে বাহিনীটির কাছে সব সময়ই এর প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে। গত মে মাসেও এ শহর পুনর্দখলে নিতে সরকারি বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছিল তালেবান জঙ্গিরা।
কুনদুজ আফগানিস্তানের উত্তরের প্রদেশগুলোর প্রবেশদ্বার। আর আফগানিস্তানের মধ্য এশীয় প্রতিবেশী তাজিকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এর। এ সীমান্ত অংশে রয়েছে অনেক ফাঁকফোকর, যা ব্যবহৃত হয় চোরাচালানে। তাই কেউ এ শহরের নিয়ন্ত্রণ পেলে কেবল আশপাশের এলাকায় তার প্রভাব বিস্তার হয় না, বরং চোরাচালানের অন্যতম একটি পথের নিয়ন্ত্রণও পেয়ে যায়। আফগানিস্তানে উৎপাদিত আফিম ও হেরোইন এশিয়ার অন্যত্র চোরাচালান হয় কুনদুজ সীমান্ত দিয়ে। সেগুলোর শেষ গন্তব্যস্থল মূলত ইউরোপ।
তবে বাজে শাসনব্যবস্থার মতো অনেক সমস্যা রয়েছে কুনদুজের। রয়েছে প্রশাসনিক অদক্ষতা। তা ছাড়া স্থানীয় কিছু সরকারি কর্মীর ভয়ভীতি প্রদর্শন প্রদেশটির অনেক মানুষকে প্রশাসনের প্রতি বিমুখ করে তুলেছে।
এ অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিল জার্মান সেনাদের। ২০১৩ সালে এ দায়িত্ব আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর তখন থেকে সেখানে জঙ্গিদের তৎপরতা বেড়েছে। ইতিমধ্যে কুনদুজ প্রদেশের গ্রামীণ এলাকার অনেক অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে তালেবান। সেখানেই বাস করেন প্রদেশের বেশির ভাগ মানুষ। তালেবান পিছু হটলেও অঞ্চলটিতে কিছুসংখ্যক জঙ্গি সব সময়ই ছিল। অনেক পর্যবেক্ষক তাই মনে করেন, বড় কোনো হামলা করা ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র।

Comments