কৈশোরেই সাইবার নিরাপত্তার কারিগর
গুগল, মাইক্রোসফট ও অ্যাপলে ত্রুটি! হতেই পারে না। শুরুতে সবার এমনটা মনে হলেও আদতে নামী এসব কোম্পানির নানা সাইটে ত্রুটি আছেই। এসব ত্রুটি ধরাও পড়ছে। সাইবার নিরাপত্তা গবেষকদের পরামর্শ নিয়ে ত্রুটি সারিয়ে তুলছে কোম্পানিগুলো। তবে সেই ত্রুটি ধরা কি চাট্টিখানি কথা! তাবৎ দুনিয়ার বাঘা বাঘা সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এসব নিয়ে ভাবেন। তাই বলে এই ‘পুঁচকে’ ঢুকে যাবে সেই দলে!
হ্যাঁ, বছর সতেরোর আলী ওয়ামিম খান এখন সেই দলে ঢুকে পড়েছে। কৈশোরেই নাম লিখিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যারা কাজ করে তাদের তালিকায়। ইতিমধ্যে গুগল, মাইক্রোসফট ও অ্যাপল থেকে পেয়েছে হল অব ফেম অ্যাওয়ার্ড। এসব কোম্পানি সারা বিশ্ব থেকে হাতে গোনা যে কজন সাইটের ত্রুটি ধরতে পারে, তাদের মর্যাদাপূর্ণ এই তালিকায় স্থান দেয়।
চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ের সিডিএ পাবলিক স্কুল ও কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ওয়ামিম মাইক্রোসফট থেকে পরপর তিন মাস—জুন, জুলাই ও আগস্টে হল অব ফেম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। এখান থেকে প্রথম হল অব ফেম অ্যাওয়ার্ড পায় এ বছরের জুন মাসে। মাইক্রোসফটের বিভিন্ন সাইটে একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তি লগইন করলে বাফারিং (ধীরগতি) হতো বেশি। এটি হতো সাইটের বাফার ওভার ফ্লো বাগের (ত্রুটি) কারণে। যে ত্রুটি এত দিন মাইক্রোসফট খেয়ালই করেনি। ওয়ামিম সেটা ধরিয়ে দিয়ে মেইল করলে সাড়া দেয় মাইক্রোসফট। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে তা সারিয়ে ফেলে কোম্পানিটি। একইভাবে সাপোর্ট ইনসিকিউর রেনিগোসিয়েশনের জন্য আরও দুবার হল অব ফেমে স্থান পেয়েছে তার নাম।
এ তো গেল মাইক্রোসফট। গুগলের সাইটেও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেছে সে। গুগল স্টোরের বাগ ধরিয়ে দিয়ে চলতি বছরের জুন মাসে হল অব ফেম অ্যাওয়ার্ড পায়। এই পুরস্কারের অঙ্ক ৫০০ ডলার। একইভাবে অ্যাপলের (সার্ভার কনফিগারেশন ইস্যু) ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে নাম ওঠে হল অব ফেমে। এ ছাড়া অ্যান্টিভাইরাস ই-সেট সাইটের (ইনসিকিউর ডিরেক্ট অবজেক্ট) ত্রুটি ধরিয়ে দেয় সে। তারা ওয়ামিমের পরামর্শমতো সেই ত্রুটি সারিয়েও তোলে। এদিকে ওয়েলমার্ট সাইটের অনলাইনে টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রেও একটি ত্রুটি ছিল। যার কারণে সিকিউরিটি কোড ছাড়াই পণ্য কেনা যেত। সেটিও ধরিয়ে দেয় ওয়ামিম।
সম্প্রতি প্রথম আলো কার্যালয়ে এলে কথা হয় তার সঙ্গে। কথা বলার সময় ঠোঁটের কোনায় হাসি লেগেই আছে। একটু লাজুকও। চেহারায় কৈশোরের সারল্য।
এই বয়সে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ! প্রশ্ন শুনে লাজুক চোখ দুটি ঠিকরে যেন দ্যুতিই ছড়াল। বলল, ‘কেউ শিশু বয়সে পিএইচডি করতে পারলে আমি কেন পারব না। আসলে ইচ্ছা থাকলে সব সম্ভব। আমি অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার আগে কম্পিউটারও ধরিনি। প্রথম প্রথম মাউস ধরতেই ভয় লাগত। মোট কথা সাহস করে এগোলে সব আপনা-আপনি হয়ে যায়।’
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার আগ্রহ জাগল কীভাবে? ‘বিভিন্ন ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়ার বিষয়টি আমাকে নাড়া দেয়। ভাবতাম, হ্যাক কীভাবে ঠেকানো যায়। সেই থেকে আগ্রহ। এবার জানলাম, এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে আগে সি প্রোগ্রামিং ও পাইথন জানতে হবে। ব্যস, প্রথম চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানে সি প্রোগ্রামিংয়ের হাতেখড়ি হলো। আরও জানতে অনলাইন সম্পন্ন করলাম সি প্রোগ্রামিংয়ের আরও কিছু কোর্স। এভাবেই আমি এখন কাজগুলো করি।’ বলল ওয়ামিম।
ওয়ামিম অনলাইনে শেষ করেছে মাইক্রোসফটের কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং কোর্স। এতে তার নম্বর গড় ৮০ শতাংশ। এ ছাড়া ওয়েবভিত্তিক ডব্লিউ থ্রি স্কুল থেকে সি++ প্রোগ্রামিং কোর্স সম্পন্ন করে। এদিকে প্রচলিত ধারার পড়ায় আহামরি কিছু হয়নি। তবে নম্বর নেহাত কমও নয়। এসএসসিতে ‘এ’ পেয়েছে সে।
ওয়ামিম পড়তে ভালোবাসে গোয়েন্দা সিরিজের বই। রহস্য ভেদ করতে পারাটার মধ্যে আনন্দ অনুভব করে সে। তা ছাড়া মনীষীদের জীবনী পড়ে সময় পেলেই। তবে বাবা আলী নেওয়াজ খান ও মা দিলারা বেগম সব সময় চোখে চোখে রাখেন ছেলেকে। দুই ভাই এক বোনের সবার ছোট হওয়ায় বেশ আদরেরও। ওয়ামিম কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ব্যাডমিন্টন খেলত। জেলা দলেও খেলেছে। একটি দুর্ঘটনায় বাঁ-হাতে চোট পাওয়ার পর কম্পিউটারে মন মজে যায়।
ওয়ামিমের তো এখনো অনেক পথ বাকি। সামনের পথগুলো কোন পথে এগোবে স্বপ্ন? উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জানাল, ‘আমার স্বপ্ন বড় একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হওয়া। এ জন্য এ বিষয়ে আমাকে আরও পড়াশোনা করতে হবে। সানস (SANS) নেটওয়ার্কের কোর্স করার চেষ্টায় আছি। এসবের পাশাপাশি আমি দেশের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে চাই। আমাদের অনেক সাইট অনিরাপদ। এসব ত্রুটি সারিয়ে তুললে ইন্টারনেটের অপব্যবহার রোধ হবে। কারণ, ইন্টারনেট পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দেয়। এর সঠিক ব্যবহার করতে পারলে নিজের লাভ।’
সবশেষে ওয়ামিমের জন্য শুভ কামনা। শুনেই সেই হাসি। যে হাসিতে কৈশোরের সারল্য ছাপিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়।
হ্যাঁ, বছর সতেরোর আলী ওয়ামিম খান এখন সেই দলে ঢুকে পড়েছে। কৈশোরেই নাম লিখিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যারা কাজ করে তাদের তালিকায়। ইতিমধ্যে গুগল, মাইক্রোসফট ও অ্যাপল থেকে পেয়েছে হল অব ফেম অ্যাওয়ার্ড। এসব কোম্পানি সারা বিশ্ব থেকে হাতে গোনা যে কজন সাইটের ত্রুটি ধরতে পারে, তাদের মর্যাদাপূর্ণ এই তালিকায় স্থান দেয়।
চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ের সিডিএ পাবলিক স্কুল ও কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ওয়ামিম মাইক্রোসফট থেকে পরপর তিন মাস—জুন, জুলাই ও আগস্টে হল অব ফেম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। এখান থেকে প্রথম হল অব ফেম অ্যাওয়ার্ড পায় এ বছরের জুন মাসে। মাইক্রোসফটের বিভিন্ন সাইটে একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তি লগইন করলে বাফারিং (ধীরগতি) হতো বেশি। এটি হতো সাইটের বাফার ওভার ফ্লো বাগের (ত্রুটি) কারণে। যে ত্রুটি এত দিন মাইক্রোসফট খেয়ালই করেনি। ওয়ামিম সেটা ধরিয়ে দিয়ে মেইল করলে সাড়া দেয় মাইক্রোসফট। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে তা সারিয়ে ফেলে কোম্পানিটি। একইভাবে সাপোর্ট ইনসিকিউর রেনিগোসিয়েশনের জন্য আরও দুবার হল অব ফেমে স্থান পেয়েছে তার নাম।
এ তো গেল মাইক্রোসফট। গুগলের সাইটেও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেছে সে। গুগল স্টোরের বাগ ধরিয়ে দিয়ে চলতি বছরের জুন মাসে হল অব ফেম অ্যাওয়ার্ড পায়। এই পুরস্কারের অঙ্ক ৫০০ ডলার। একইভাবে অ্যাপলের (সার্ভার কনফিগারেশন ইস্যু) ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে নাম ওঠে হল অব ফেমে। এ ছাড়া অ্যান্টিভাইরাস ই-সেট সাইটের (ইনসিকিউর ডিরেক্ট অবজেক্ট) ত্রুটি ধরিয়ে দেয় সে। তারা ওয়ামিমের পরামর্শমতো সেই ত্রুটি সারিয়েও তোলে। এদিকে ওয়েলমার্ট সাইটের অনলাইনে টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রেও একটি ত্রুটি ছিল। যার কারণে সিকিউরিটি কোড ছাড়াই পণ্য কেনা যেত। সেটিও ধরিয়ে দেয় ওয়ামিম।
সম্প্রতি প্রথম আলো কার্যালয়ে এলে কথা হয় তার সঙ্গে। কথা বলার সময় ঠোঁটের কোনায় হাসি লেগেই আছে। একটু লাজুকও। চেহারায় কৈশোরের সারল্য।
এই বয়সে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ! প্রশ্ন শুনে লাজুক চোখ দুটি ঠিকরে যেন দ্যুতিই ছড়াল। বলল, ‘কেউ শিশু বয়সে পিএইচডি করতে পারলে আমি কেন পারব না। আসলে ইচ্ছা থাকলে সব সম্ভব। আমি অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার আগে কম্পিউটারও ধরিনি। প্রথম প্রথম মাউস ধরতেই ভয় লাগত। মোট কথা সাহস করে এগোলে সব আপনা-আপনি হয়ে যায়।’
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার আগ্রহ জাগল কীভাবে? ‘বিভিন্ন ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়ার বিষয়টি আমাকে নাড়া দেয়। ভাবতাম, হ্যাক কীভাবে ঠেকানো যায়। সেই থেকে আগ্রহ। এবার জানলাম, এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে আগে সি প্রোগ্রামিং ও পাইথন জানতে হবে। ব্যস, প্রথম চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানে সি প্রোগ্রামিংয়ের হাতেখড়ি হলো। আরও জানতে অনলাইন সম্পন্ন করলাম সি প্রোগ্রামিংয়ের আরও কিছু কোর্স। এভাবেই আমি এখন কাজগুলো করি।’ বলল ওয়ামিম।
ওয়ামিম অনলাইনে শেষ করেছে মাইক্রোসফটের কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং কোর্স। এতে তার নম্বর গড় ৮০ শতাংশ। এ ছাড়া ওয়েবভিত্তিক ডব্লিউ থ্রি স্কুল থেকে সি++ প্রোগ্রামিং কোর্স সম্পন্ন করে। এদিকে প্রচলিত ধারার পড়ায় আহামরি কিছু হয়নি। তবে নম্বর নেহাত কমও নয়। এসএসসিতে ‘এ’ পেয়েছে সে।
ওয়ামিম পড়তে ভালোবাসে গোয়েন্দা সিরিজের বই। রহস্য ভেদ করতে পারাটার মধ্যে আনন্দ অনুভব করে সে। তা ছাড়া মনীষীদের জীবনী পড়ে সময় পেলেই। তবে বাবা আলী নেওয়াজ খান ও মা দিলারা বেগম সব সময় চোখে চোখে রাখেন ছেলেকে। দুই ভাই এক বোনের সবার ছোট হওয়ায় বেশ আদরেরও। ওয়ামিম কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ব্যাডমিন্টন খেলত। জেলা দলেও খেলেছে। একটি দুর্ঘটনায় বাঁ-হাতে চোট পাওয়ার পর কম্পিউটারে মন মজে যায়।
ওয়ামিমের তো এখনো অনেক পথ বাকি। সামনের পথগুলো কোন পথে এগোবে স্বপ্ন? উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জানাল, ‘আমার স্বপ্ন বড় একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হওয়া। এ জন্য এ বিষয়ে আমাকে আরও পড়াশোনা করতে হবে। সানস (SANS) নেটওয়ার্কের কোর্স করার চেষ্টায় আছি। এসবের পাশাপাশি আমি দেশের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে চাই। আমাদের অনেক সাইট অনিরাপদ। এসব ত্রুটি সারিয়ে তুললে ইন্টারনেটের অপব্যবহার রোধ হবে। কারণ, ইন্টারনেট পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দেয়। এর সঠিক ব্যবহার করতে পারলে নিজের লাভ।’
সবশেষে ওয়ামিমের জন্য শুভ কামনা। শুনেই সেই হাসি। যে হাসিতে কৈশোরের সারল্য ছাপিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়।
Comments
Post a Comment