খামারটি শুরু হয়েছে নাটকীয়ভাবে


লালবাগের ডুরি আঙ্গুল লেনের ৭নং বাড়ি। বেশ সাজানো, গোছানো চার তলা এ বাড়িটির প্রবেশ মুখেই বিশাল ড্রয়িংরুম। বাড়ির মালিক হাজী হাবিবুর রহমান ও হাজী আজাদুর রহমান দুই ভাইয়ের যৌথ পরিবার এটি। অন্য কোন ভাড়াটিয়া নেই। পুরো বাড়ি তারা নিজেরাই ব্যবহার করেন। আজ থেকে ১০-১২ বছর আগে কোরবানির জন্য দুই ভাই মিলে একটি গরু কিনে আনেন। বাড়ি নিয়ে আসার পর দেখেন গরুটির বয়স হয়নি কোরবানি দেয়ার মতো। পুরান ঢাকার সরু গলির মাঝে অবস্থিত এ বাড়িটিতে খালি জায়গাও নেই গরুটি রাখার জন্য। অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে বাসার ছাদেই হয় গরুটির ঠিকানা। কিছুদিন পর তারা অনুভব করেন একা ভাল যাচ্ছে না গরুটির। এ চিন্তা থেকে আরও একটি গরু কিনে আনেন তারা। এভাবেই আস্তে আস্তে তা রূপ নেয় একটি সফল খামারে। ছোট ভাই হাজী আজাদুর রহমান বলেন, গরুর প্রতি ভালবাসা তাদের জন্মলগ্ন থেকেই। যদিও খামারটি শুরু হয়েছে নাটকীয়ভাবে। তিনি বলেন, একে একে যখন দুধের গরু আনা শুরু করলাম, তখন মনে হলো খাটি গরুর দুধ পাওয়ার উপায় থাকতে বাজার থেকে ভেজাল দুধ কেন? আজাদুর রহমান জানান, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়। আমাদের সন্তানরা খাটি গরুর দুধ খাবে- এ চিন্তা থেকেই মূলত খামারটি গড়ে তুলি। পরে যখন দুধের প্রতি পাড়ার মানুষের চাহিদা শুরু হলো, তখনই খামারটি আস্তে আস্তে বড় করে ফেলি। বাড়ির ছাদে গিয়ে দেখা যায়, দুই ভাগে গরু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। টিনের ছাউনি দেয়া আর সামনে বাঁশ দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে গরু থাকার জায়গা। প্রতিটি ঘরে আটটি করে মোট ১৬টি গরু রাখা যায়। বর্তমানে একটি ঘর ফাঁকা। বাকি একটি ঘরে রয়েছে ৫টি অস্ট্রেলিয়ান গরু ও একটি বাছুর। এবারের কোরবানিতে ৭টি বুট্টি গরু ও একটি দুধের গরু বিক্রি করেছেন তারা। এভাবে প্রতিবারই নতুন গরু নিয়ে আসেন এবং কোরবানিতে বিক্রি করে দেন। গরু দেখাশোনার জন্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকেন দুজন কর্মচারী। এ ছাড়া একজন চিকিৎসক নিয়মিত এদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যান। আজাদুর রহমান জানান, গরুগুলো সুস্থ রাখার জন্য সব ধরনের সুব্যবস্থা রয়েছে। 
ছাদের ওপর এমনিতেও আলো-বাতাসের স্বল্পতা নেই, তবু রয়েছে আলাদা পাখা ও আলোর ব্যবস্থা। এ ছাড়া দৈনিক একবার করে গোসল করানো হয় গরুগুলোকে। গরমকালে গোসল হয় দুবার। প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুবার খাবার দেয়া হয় তাদের। খাবারের মধ্যে রয়েছে নারিকেল ও তিলের খৈল। এ ছাড়া আরও রয়েছে ৫ থেকে ৭ প্রকারের ভুসি। খামার থেকে তারা নিয়মিত সর্বনিম্ন ২০ কেজি ও সর্বোচ্চ ৪০ কেজি দুধ পেয়ে থাকেন। এটা নির্ভর করে গরুর সংখ্যার ওপর। এর মধ্যে ৫ কেজি দুধ লাগে তাদের পরিবারের জন্য। বাকি দুধ পাড়ার লোকদের কাছে বিক্রি করে দেন। আজাদুর রহমান বলেন, আমরা গরুগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে কোন রকম কমতি রাখি না। যে পরিমাণ খরচের প্রয়োজন, অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি খরচ করি। তবু এর থেকে আমাদের লোকসান হয় না কখনও। বরং দিন দিন লাভবান হচ্ছি। লাভবান হচ্ছে আমাদের সন্তানরা। সেই সঙ্গে পাড়ার মানুষও। তিনি জানান, পাইকারি দরে প্রতি কেজি দুধ ৫০ টাকা এবং খুচরা দরে ৭০ টাকা করে বিক্রি করেন তারা। পাড়ার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা শহরের মতো একটি জায়গায় বাড়ির ছাদে এ ধরনের একটি উদ্যোগকে খুবই ভালভাবে দেখছেন তারা

Comments