Skip to main content
নিরাপত্তার নতুন ঝুঁকি তৈরি
বাংলাদেশে নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে অস্ট্রেলিয়ার সফর স্থগিত ও কূটনৈতিকপাড়ায় ইতালীয় নাগরিক খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলছেন, গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতার কারণে এ ঘটনাগুলো ঘটছে। এসব ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারলে নিরাপত্তার নতুন ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশও ব্র্যাকেটবন্দি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। মানবজমিনকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই বলা হচ্ছিল- দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে। তার পরও তারা কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। সোমবার কূটনৈতিকপাড়ায় এত নিরাপত্তা থাকার পরও একজন ইতালীয় নাগরিক খুন হয়েছেন অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকটি হত্যার ঘটনায় প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। এ ছাড়া কিছুদিন আগে ব্যাংককের ইয়াওয়ান মন্দিরে বোমা হামলাকারী পালিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান নিলেও আমাদের দেশের ইন্টিলিজেন্স টের পায়নি। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে- জঙ্গিবাদের হুমকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। এ ব্যর্থতা সরকারের। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের খুনের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। তবে ইতালিয়ান নাগরিক খুন হওয়ায় বিদেশীরা শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন। শুধু বিদেশীরা নন আমাদের দেশের সাধারণ মানুষেরও নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। সাবেক এই সেনাকর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে এক ধরনের রাজনৈতিক টানাপড়েন চলছে। একদল আরেক দলকে দোষারোপ করছে। এর কোন সুরাহা হচ্ছে না। এখন নিরাপত্তার কারণে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল যদি না আসে তাহলে শুধু ক্রিকেট নয় পুরো বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ন হবে। এ ছাড়া পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশও ব্রাকেটবন্দি হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারকে খুনের ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত করার পরামর্শ দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইন্টিলিজেন্স অপারেশনগুলো জোরদার করতে হবে। এ ছাড়া সম্প্রতি সংঘটিত খুনের ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত করতে হবে। বায়বীয় তদন্ত করলে হবে না। তাহলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর আমেনা মহসিন বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রশ্ন তোলার দুদিনের মধ্যেই কূটনৈতিকপাড়ায় ইতালীয় নাগরিক খুনের স্বীকার হয়েছেন। এতে বিদেশী নাগরিকরা আতঙ্কে ভুগছেন। তবে আইএস তাকে হত্যা করেছে কি-না সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। কারণ আইএসের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে হত্যার ধরনের কোন মিল নেই। সত্যি সত্যি যদি আইএস এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশের জন্য খুবই চিন্তার বিষয়। তখন বোঝা যাবে- বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব রয়েছে এবং নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশে ঝুঁকি তৈরি হবে। তিনি বলেন, এ খুনের ঘটনাটিকে বিদেশীরা গুরুত্বের সঙ্গে নিলেও আমি ঢালাওভাবে বলবো না বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে। কারণ আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ। এদের মানুষও জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয় না। তবে এসব ঘটনায় ইন্টিলিজেন্সের ব্যর্থতা রয়েছে। সরকারকে সে বিষয়টিতে নজর দিতে হবে। আমেনা মহসিন বলেন, গণতন্ত্রের কোন বিকল্প নেই। রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে, গণতন্ত্র দুর্বল হলে অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো শক্তিশালী হয়ে যাবে।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর তারেক শামসুর রেহমান বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের বাংলাদেশে না আসার পেছনে যে যুক্তি দেখিয়েছে তা সম্পূর্ণ অমূলক। কারণ বাংলাদেশে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যে বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। এ ঘটনাটি বিশ্ব ক্রিকেটের তিন মোড়লের (অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ড) কূটচাল কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। ইতালীয় নাগিরক হত্যার বিষয়ে প্রফেসর শামসুর রেহমান বলেন, ওই ঘটনার সঙ্গে আইএস জড়িত কি-না সেটা নিশ্চিত নয়। কারণ জঙ্গি সংগঠন আইএস ও আল-কায়েদার সঙ্গে বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তথাকথিত জঙ্গি ও উগ্রপন্থি আছে। তবে তাদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের কোন মিল নেই। বিদেশী নাগরিকদের চলাফেরায় সতর্ক জারির বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতারা বিভিন্ন সময় দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের কথা বলেছেন। তাদের ওই বক্তব্যের কাটিং বিদেশী দূতাবাসগুলোতে সংরক্ষিত হয়। এসব বক্তব্যে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোকে বিভ্রান্ত করতে পারে। তবে গোয়েন্দা সংস্থার উচিত হবে- ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দ্রুত তদন্ত করে মূল রহস্য উদ্ঘাটন করা।
Comments
Post a Comment