পাশ্চাত্য ও ইসলামি জীবনধারার তুলনা
ইসলামি জীবনধারা ও পাশ্চাত্য জীবনধারার মধ্যে আসলে ঠিক পার্থক্যটা কোথায়? এই দুই জীবনধারার তুলনামূলক আলোচনাই এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য। কারণ আমার অনেক বন্ধু রয়েছেন যারা পাশ্চাত্যের জীবনধারার ভক্ত। পাশ্চাত্যের উন্নয়ন, তাদের বিরাট বিরাট ভবন, তাদের যোগাযোগব্যবস্থা, তাদের গণতন্ত্র আমার বন্ধুদেরকে খুবই আকৃষ্ট করে। পাশ্চাত্যের ভালোকে মন্দ বলা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। তবে তাদের জীবনধারা ও সিস্টেমগুলোর অসম্পূর্ণতা তুলে ধরার প্রচেষ্টা রয়েছে এ লেখায়। শেষের দিকে ইসলাম বা মুসলিম সিস্টেমের ব্যাপারেও কিছু উল্লেখ রয়েছে।
এর মধ্যে লেখক হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনীমূলক বই ‘আপনাকে আমি খুঁজিয়া বেড়াই’ পড়লাম। তাতে হুমায়ূন আহমেদ আমেরিকার সমাজব্যবস্থাকে পছন্দ করেননি। তিনি লিখেছেন যে, একটা সন্তান জন্ম নেয়ার পর থেকেই আলাদা খাটে থাকে। শিশুকে ঘড়ি ধরে খাওয়ানো হয়। কাঁদলেও সময়ের আগে খাওয়ানো হয় না। সন্তান দাদা-দাদী, নানা-নানী, চাচা-মামা, ফুফু, খালাদের সঙ্গ পায় না। বয়স হলে আলাদা বাসায় থাকতে হয়। তার চাকরি তাকেই জোগাড় করতে হয়। তার বিয়ে তাকেই করতে হয়। মেয়ে হলে শত শত ছেলের পেছনে ঘুরতে হয়। এর জন্য যে তাকে অনেক মূল্যও দিতে হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মা-বাবার সাথে সম্পর্ক তার খুব কমই থাকে। এ ধরনের বিয়ে টেকেও কম। ছাড়াছাড়ি অনেক বেশি হয়। স্ত্রী বা স্বামী বদল অনেক ঘটে। হুমায়ূন আহমেদ আরো অনেক কিছু লিখেছেন। আমার ধারণাও তাই। তাদের সমাজব্যবস্থা ভালো নয়। সেখানে বৃদ্ধরাও ভালো নেই। শিশুরাও ভালো নেই। এসব কারণে মানবিক বিবেচনায় উন্নয়ন আর ভালো যোগাযোগব্যবস্থা অনেকটাই হয়ে পড়ে নিরর্থক। মদ ও নোংরামিই যেন তাদের কালচার। সিনেমা, টিভিতেও রয়েছে নগ্নতা। সি-বিচ, হোটেল, ভ্রমণ সব কিছুতেই নোংরামি ও নগ্নতা। হুমায়ূন আহমেদ তার বইয়ের এক জায়গায় লিখেছেন, সেখানে নারীর মর্যাদা বলে তেমন কিছু নেই। পুরুষরা মনে করে, যা কিছু খারাপ সব মেয়েলি কাজ। নারীকে মানুষ হিসেবে দেখা হয় না, কেবল নারী হিসেবে দেখা হয়। হুমায়ূন আহমেদের লেখায় এ কথা পেয়ে আমি অবাক হয়েছি। নারীকে যে বাস্তবে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় তা আমরাও জানি।
শত উন্নতি সত্ত্বেও পাশ্চাত্যের আর্থিক ব্যবস্থাকে ভালো বলা যায় না। নিজের দেশের নিম্নবিত্তদের ও পরদেশ শোষণ করে ইউরোপ ও আমেরিকার বিত্ত গড়ে উঠেছে। পুঁজিপতিরা মূলত শোষক। কিছু করপোরেশনের হাতেই সব বিত্ত। সুদব্যবস্থা সম্পদ কেন্দ্রীভূতকরণে সাহায্য করেছে। সে দেশে গৃহহীন লোকের সংখ্যা অনেক। অনেকের চিকিৎসাসুবিধা নেই। পুঁজিবাদ যে দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান করতে অক্ষম সেটি দেখা যায় তাদের সামাজিক ব্যবস্থায়। সেসব দেশের ভালো দিক বলা যায় গণতন্ত্রকে। কিন্তু তা-ও এখন পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রণে। পুঁজিপতিদের চাঁদায় তারা নির্বাচিত হন এবং পার্টি চালান। ফলে পুঁজির স্বার্থে তাদের দেশীয় নীতি ও পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয়। এ অবস্থায় গণতন্ত্রের আসল উদ্দেশ্য পূরণ হয় বলে মনে হয় না।
এর তুলনায় আমাদের ব্যবস্থা অনেক ভালো। ইসলামি ব্যবস্থার তো কথাই নেই- যেখানে পরিবার শক্তিশালী করাই মূল কথা। বাবা-মা ও শিশুদের স্বার্থরক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম কালচারে নোংরামি ও নগ্নতা বলে কিছু নেই। মুসলিম সমাজের নোংরামি পাশ্চাত্য থেকে আমদানিকৃত। ইসলামি অর্থনীতিতে পুঁজিবাদ নেই। বাজার স্বাধীন, তবে তার হিসাবায়ন (হিসাব বা accountability) সরকারকে করতে হয়। ইসলামে সরকারের দায়িত্ব সবার কাজের ব্যবস্থা করা, না হয় ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা। অবশ্য তা তখনই করা হবে, যখন আত্মীয়স্বজন সে দায়িত্ব নিতে সক্ষম থাকে না। জাকাতব্যবস্থা দারিদ্র্য লাঘবে সাহায্য করে। ইসলাম উন্নয়ন চায়। এ ব্যাপারে অবশ্যই আমাদের অনেক ব্যর্থতা আছে। মুসলিম বিশ্বের অনেক জায়গায় এখনো দারিদ্র্য রয়ে গেছে উন্নয়ন না করার কারণে।
সবাই একমত যে, গণতন্ত্র ইসলামসম্মত, তবে তা আল্লাহর বিধানসাপেক্ষ হতে হবে। এ ক্ষেত্রেও আমাদের ব্যর্থতা অনেক। আমরা ভালো করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। মুসলিম বিশ্বে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে। অন্য দিকে ইসলামের নামে উদ্দেশ্যমূলকভাবে যে সন্ত্রাসবাদকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সেটাকে রুখতে হবে। হ
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার - See more at:
এর মধ্যে লেখক হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনীমূলক বই ‘আপনাকে আমি খুঁজিয়া বেড়াই’ পড়লাম। তাতে হুমায়ূন আহমেদ আমেরিকার সমাজব্যবস্থাকে পছন্দ করেননি। তিনি লিখেছেন যে, একটা সন্তান জন্ম নেয়ার পর থেকেই আলাদা খাটে থাকে। শিশুকে ঘড়ি ধরে খাওয়ানো হয়। কাঁদলেও সময়ের আগে খাওয়ানো হয় না। সন্তান দাদা-দাদী, নানা-নানী, চাচা-মামা, ফুফু, খালাদের সঙ্গ পায় না। বয়স হলে আলাদা বাসায় থাকতে হয়। তার চাকরি তাকেই জোগাড় করতে হয়। তার বিয়ে তাকেই করতে হয়। মেয়ে হলে শত শত ছেলের পেছনে ঘুরতে হয়। এর জন্য যে তাকে অনেক মূল্যও দিতে হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মা-বাবার সাথে সম্পর্ক তার খুব কমই থাকে। এ ধরনের বিয়ে টেকেও কম। ছাড়াছাড়ি অনেক বেশি হয়। স্ত্রী বা স্বামী বদল অনেক ঘটে। হুমায়ূন আহমেদ আরো অনেক কিছু লিখেছেন। আমার ধারণাও তাই। তাদের সমাজব্যবস্থা ভালো নয়। সেখানে বৃদ্ধরাও ভালো নেই। শিশুরাও ভালো নেই। এসব কারণে মানবিক বিবেচনায় উন্নয়ন আর ভালো যোগাযোগব্যবস্থা অনেকটাই হয়ে পড়ে নিরর্থক। মদ ও নোংরামিই যেন তাদের কালচার। সিনেমা, টিভিতেও রয়েছে নগ্নতা। সি-বিচ, হোটেল, ভ্রমণ সব কিছুতেই নোংরামি ও নগ্নতা। হুমায়ূন আহমেদ তার বইয়ের এক জায়গায় লিখেছেন, সেখানে নারীর মর্যাদা বলে তেমন কিছু নেই। পুরুষরা মনে করে, যা কিছু খারাপ সব মেয়েলি কাজ। নারীকে মানুষ হিসেবে দেখা হয় না, কেবল নারী হিসেবে দেখা হয়। হুমায়ূন আহমেদের লেখায় এ কথা পেয়ে আমি অবাক হয়েছি। নারীকে যে বাস্তবে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় তা আমরাও জানি।
শত উন্নতি সত্ত্বেও পাশ্চাত্যের আর্থিক ব্যবস্থাকে ভালো বলা যায় না। নিজের দেশের নিম্নবিত্তদের ও পরদেশ শোষণ করে ইউরোপ ও আমেরিকার বিত্ত গড়ে উঠেছে। পুঁজিপতিরা মূলত শোষক। কিছু করপোরেশনের হাতেই সব বিত্ত। সুদব্যবস্থা সম্পদ কেন্দ্রীভূতকরণে সাহায্য করেছে। সে দেশে গৃহহীন লোকের সংখ্যা অনেক। অনেকের চিকিৎসাসুবিধা নেই। পুঁজিবাদ যে দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান করতে অক্ষম সেটি দেখা যায় তাদের সামাজিক ব্যবস্থায়। সেসব দেশের ভালো দিক বলা যায় গণতন্ত্রকে। কিন্তু তা-ও এখন পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রণে। পুঁজিপতিদের চাঁদায় তারা নির্বাচিত হন এবং পার্টি চালান। ফলে পুঁজির স্বার্থে তাদের দেশীয় নীতি ও পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয়। এ অবস্থায় গণতন্ত্রের আসল উদ্দেশ্য পূরণ হয় বলে মনে হয় না।
এর তুলনায় আমাদের ব্যবস্থা অনেক ভালো। ইসলামি ব্যবস্থার তো কথাই নেই- যেখানে পরিবার শক্তিশালী করাই মূল কথা। বাবা-মা ও শিশুদের স্বার্থরক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম কালচারে নোংরামি ও নগ্নতা বলে কিছু নেই। মুসলিম সমাজের নোংরামি পাশ্চাত্য থেকে আমদানিকৃত। ইসলামি অর্থনীতিতে পুঁজিবাদ নেই। বাজার স্বাধীন, তবে তার হিসাবায়ন (হিসাব বা accountability) সরকারকে করতে হয়। ইসলামে সরকারের দায়িত্ব সবার কাজের ব্যবস্থা করা, না হয় ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা। অবশ্য তা তখনই করা হবে, যখন আত্মীয়স্বজন সে দায়িত্ব নিতে সক্ষম থাকে না। জাকাতব্যবস্থা দারিদ্র্য লাঘবে সাহায্য করে। ইসলাম উন্নয়ন চায়। এ ব্যাপারে অবশ্যই আমাদের অনেক ব্যর্থতা আছে। মুসলিম বিশ্বের অনেক জায়গায় এখনো দারিদ্র্য রয়ে গেছে উন্নয়ন না করার কারণে।
সবাই একমত যে, গণতন্ত্র ইসলামসম্মত, তবে তা আল্লাহর বিধানসাপেক্ষ হতে হবে। এ ক্ষেত্রেও আমাদের ব্যর্থতা অনেক। আমরা ভালো করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। মুসলিম বিশ্বে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে। অন্য দিকে ইসলামের নামে উদ্দেশ্যমূলকভাবে যে সন্ত্রাসবাদকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সেটাকে রুখতে হবে। হ
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার - See more at:
Comments
Post a Comment