নিজেকে নিয়ে কখনোই সন্দেহে থাকা যাবে না

বেইজিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জেতা তিনটি সোনার পদক গলায় উসাইন বোল্ট। ছবিটা বোল্ট নিজেই পোস্ট করেছেন তাঁর ফেসবুক পেজেবেইজিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জেতা তিনটি সোনার পদক গলায় উসাইন বোল্ট। ছবিটা বোল্ট নিজেই পোস্ট করেছেন তাঁর ফেসবুক পেজেবছর খানেক আগেও এমন কিছু ভাবার জন্য প্রচণ্ড দুঃসাহস দরকার হতো। অথচ এবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আগে সেই ভাবনা রীতিমতো কানাঘুষায় রূপ নিল—উসাইন বোল্ট কি পারবেন? কারণ দুটি। প্রথমটি মৌসুমজুড়ে তাঁকে ভোগানো কোমরের চোট। দ্বিতীয়টি সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী জাস্টিন গ্যাটলিনের দুর্দান্ত ফর্ম। কিন্তু একটা কথা বোধ হয় অনেকেই ভুলে গিয়েছিলেন, বড় উপলক্ষে জ্বলে ওঠাটা বোল্টের কাছে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মতোই স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সেটিই আবার মনে করিয়ে দিলেন এ গ্রহের দ্রুততম মানব। আরও একটা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের তিনটি ইভেন্টেই সোনা, আরও একবার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট তাঁর। সংশয়বাদীদের এভাবে ভুল প্রমাণিত করতে পারাটা বোল্টের আনন্দেও যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা।
স্প্রিন্ট ডাবলের সঙ্গে গত পরশু ৪X১০০ মিটার রিলেরও সোনা যোগ করার পর বলেছেন, ‘এভাবে চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ করতে পারাটা দারুণ ব্যাপার। আরও ভালো লাগছে সবাইকে ভুল প্রমাণ করতে পেরে। এখানে আমি সবাইকে প্রমাণ করেছি, বোল্টকে কখনোই বাতিল করে দেওয়া যায় না। আমি একজন চ্যাম্পিয়ন এবং যখন দরকার আমি ঠিকই চেনা রূপে দেখা দিই।’
চোটের কারণে সেরা ফর্মে ছিলেন না বলে এবারের পারফরম্যান্সটা বোল্টের কাছেও আলাদা মূল্য পাচ্ছে, ‘এটা আমার অন্যতম সেরা ফল। কারণ পুরো মৌসুমে আমি অনেক ভুগেছি, আমাকে নিয়ে অনেকের মনে সংশয় তৈরি হয়েছিল।’ তবে তাঁর নিজের মনে কখনোই কোনো সংশয় বাসা বাঁধেনি বলে বোল্টের দাবি, ‘নিজেকে নিয়ে কখনোই সন্দেহে থাকা যাবে না। যখনই আপনার ভেতরে সন্দেহ চলে আসবে, আপনার দৌড়ানো উচিত হবে না। আমি জানতাম, আমি এখানে কী চাই। কোচের বিশ্বাস ছিল আমার ওপর, আমারও তাঁর ওপর বিশ্বাস ছিল। কখনো ভাবিনি যে, আমি হারতে পারি।’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১১টি সোনা হয়ে গেল বোল্টের। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক থেকে শুরু করে এবারের বেইজিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পর্যন্ত নিজের ইভেন্টগুলোয় মাত্র একবারই পদক পাননি বোল্ট, ২০১১ সালে দেগু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ১০০ মিটারে ‘ফলস স্টার্ট’ করে! ১০০ মিটার ও ২০০ মিটারের দুটি বিশ্ব রেকর্ডই তাঁর। জ্যামাইকান সতীর্থদের সঙ্গে ৪X১০০ মিটার রিলের বিশ্ব রেকর্ডেরও অংশীদার। অলিম্পিকে স্প্রিন্টে ৬টি সোনা জেতা ইতিহাসের প্রথম অ্যাথলেটও তিনি। সব মিলিয়ে সর্বকালের সেরা স্প্রিন্টার হিসেবে প্রায় তর্কাতীত তাঁর অধিষ্ঠান।
লন্ডনে প্রথম স্প্রিন্টার হিসেবে দুটি অলিম্পিকে ‘স্প্রিন্ট ডাবল’ জেতার পর নিজেই ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি এখন জীবন্ত কিংবদন্তি।’ পরের তিন বছরে বোল্টের অর্জনের মুকুটে যোগ হয়েছে আরও অনেক পালক। সেই সঙ্গে যেন একটু বিনয়ীও হয়েছেন ট্র্যাকের রাজা। নিজেকে কিংবদন্তি বলা নিয়ে এখন তাঁর মত, ‘আমার মনে হয় আমি সেই পথে যাচ্ছি। রিও অলিম্পিকের আগ পর্যন্ত আমি নিজেকে কিংবদন্তি বলব না। রিওর পর দেখব আমি আসলেই তাদের একজন কি না। দেখা যাক কী হয়!’ এএফপি।

Comments