ঋণের ৭৫ শতাংশই ফিরে যাবে ভারতে
২০০ কোটি ডলার ঋণ দিতে কঠিন শর্ত দিয়েছে ভারত। এ ঋণে যে প্রকল্পই নেওয়া হবে, ভারত থেকে মালামাল এনে ওই প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ অর্থ খরচ করতে হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের এ শর্ত পূরণ করতে হলে নির্মাণকাজের সামগ্রী থেকে শুরু করে পরামর্শকও ভারত থেকে আনতে হবে।
গত জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে ২০০ কোটি ডলারের সমঝোতা চুক্তি হয়, যা দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটÜ (এলওসি) নামে পরিচিত। ভারতের এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক বা এক্সিম ব্যাংক এ ঋণ দেবে। এর আগেও ভারতের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই চুক্তির অর্থ ব্যবহারের শর্ত কিছুটা নমনীয় ছিল। তাতে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে ৬৫ শতাংশ এবং অন্য প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ কেনাকাটা ভারত থেকে করার শর্ত ছিল।
সমঝোতা চুক্তির সময় বলা হয়েছিল, দ্বিতীয় পর্যায়ের এই সহায়তার শর্ত আগের মতোই থাকবে। তবে ভারতীয় পক্ষ থেকে এখন জানানো হয়েছে, এবারের ঋণের আওতায় নেওয়া যেকোনো প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ কেনাকাটাই ভারত থেকে করতে হবে। আর প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিতে হবে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো দেশের প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না। এ মাসে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তি করার আগ্রহ প্রকাশ করে ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে চিঠি দিয়েছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম এলওসিতে কেনাকাটার শর্তের কারণে বেশ কিছু কাঙ্ক্ষিত প্রকল্প নেওয়া সম্ভব হয়নি। গতবার প্রথমে শর্ত ছিল যে ৮০ শতাংশ কেনাকাটা ভারত থেকে করতে হবে, পরে তা কমিয়ে ৬৫ শতাংশ করা হয়। এবারের দর-কষাকষিতে তা আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে এ ধরনের ঋণ অনেকটা সরবরাহকারী ঋণের মতো হয়ে যায়। তা ছাড়া এ ঋণের শর্ত মানলে কোন কোন প্রকল্প নিলে অপেক্ষাকৃত বেশি লাভবান হওয়া যাবে, হিসাব করে সেসব প্রকল্প বাছাই করতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে শর্তহীন ঋণ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। উন্নত দেশগুলো অনেকটা রাজিও হয়েছে। তাই ভারতের ঋণের ক্ষেত্রেও দর-কষাকষি করতে হবে।’
ভারতের ঋণের অর্থ দিয়ে ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছে সরকার। প্রকল্পগুলো হলো রেল যোগাযোগ খাতের পার্বতীপুর-কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথকে দ্বৈত গেজে রূপান্তর; খুলনা-দর্শনা দ্বিমুখী রেলপথ নির্মাণ; সৈয়দপুর রেল কারখানা উন্নয়ন; বিদ্যুৎ খাতের বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন নির্মাণ; পরিবহন খাতের বিআরটিসির ৫০০ ট্রাক কেনা; ৫০০ বাস (৩০০ দ্বিতল ও ২০০ আর্টিকুলেটেড) কেনা; সড়ক ও জনপদ বিভাগের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা; চারটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপন; ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন; আশুগঞ্জ নৌ কনটেইনার বন্দর স্থাপন ও আশুগঞ্জ নৌবন্দর-আখাউড়া স্থলবন্দর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। এ তালিকায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আরও দুটি প্রকল্প রয়েছে।
ভারতের শর্ত মেনে এসব প্রকল্প কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তা নিয়ে আগামী ২ আগস্ট প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে সভা করবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আসিফ উজ জামান প্রথম আলোকে বলেন, সভায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হবে। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে ভারতীয় পক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করা হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শর্ত নমনীয় করার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।
ভারতীয় ঋণে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এর অর্ধেকের বেশি পূর্ত কাজের প্রকল্প। ইআরডির সূত্র উদাহরণ দিয়ে বলেছে, আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেনের সড়ক নির্মাণের জন্য প্রায় ২৩ কোটি ডলার দেবে ভারত। ভারতীয় ঠিকাদারকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে কমপক্ষে সোয়া ১৭ কোটি ডলার খরচ করতে হবে ভারতীয় মালামাল কিনে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রায় ৪৭ কিলোমিটার সড়কের পাশে ভারত থেকে মাটি, ইট, বালু, সিমেন্টের মতো উপকরণ ভারত থেকেই আনতে হবে। এমনকি শ্রমিকও আনতে হবে ভারত থেকে। কেননা, এই রাস্তা নির্মাণে যে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে, তাতে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের টাকা দিতেই ব্যয় হবে প্রকল্পের বাকি ২৫ শতাংশ অর্থ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের এ শর্ত পূরণ করতে হলে নির্মাণকাজের সামগ্রী থেকে শুরু করে পরামর্শকও ভারত থেকে আনতে হবে।
গত জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে ২০০ কোটি ডলারের সমঝোতা চুক্তি হয়, যা দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটÜ (এলওসি) নামে পরিচিত। ভারতের এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক বা এক্সিম ব্যাংক এ ঋণ দেবে। এর আগেও ভারতের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই চুক্তির অর্থ ব্যবহারের শর্ত কিছুটা নমনীয় ছিল। তাতে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে ৬৫ শতাংশ এবং অন্য প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ কেনাকাটা ভারত থেকে করার শর্ত ছিল।
সমঝোতা চুক্তির সময় বলা হয়েছিল, দ্বিতীয় পর্যায়ের এই সহায়তার শর্ত আগের মতোই থাকবে। তবে ভারতীয় পক্ষ থেকে এখন জানানো হয়েছে, এবারের ঋণের আওতায় নেওয়া যেকোনো প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ কেনাকাটাই ভারত থেকে করতে হবে। আর প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিতে হবে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো দেশের প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না। এ মাসে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তি করার আগ্রহ প্রকাশ করে ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে চিঠি দিয়েছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম এলওসিতে কেনাকাটার শর্তের কারণে বেশ কিছু কাঙ্ক্ষিত প্রকল্প নেওয়া সম্ভব হয়নি। গতবার প্রথমে শর্ত ছিল যে ৮০ শতাংশ কেনাকাটা ভারত থেকে করতে হবে, পরে তা কমিয়ে ৬৫ শতাংশ করা হয়। এবারের দর-কষাকষিতে তা আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে এ ধরনের ঋণ অনেকটা সরবরাহকারী ঋণের মতো হয়ে যায়। তা ছাড়া এ ঋণের শর্ত মানলে কোন কোন প্রকল্প নিলে অপেক্ষাকৃত বেশি লাভবান হওয়া যাবে, হিসাব করে সেসব প্রকল্প বাছাই করতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে শর্তহীন ঋণ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। উন্নত দেশগুলো অনেকটা রাজিও হয়েছে। তাই ভারতের ঋণের ক্ষেত্রেও দর-কষাকষি করতে হবে।’
ভারতের ঋণের অর্থ দিয়ে ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছে সরকার। প্রকল্পগুলো হলো রেল যোগাযোগ খাতের পার্বতীপুর-কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথকে দ্বৈত গেজে রূপান্তর; খুলনা-দর্শনা দ্বিমুখী রেলপথ নির্মাণ; সৈয়দপুর রেল কারখানা উন্নয়ন; বিদ্যুৎ খাতের বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন নির্মাণ; পরিবহন খাতের বিআরটিসির ৫০০ ট্রাক কেনা; ৫০০ বাস (৩০০ দ্বিতল ও ২০০ আর্টিকুলেটেড) কেনা; সড়ক ও জনপদ বিভাগের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা; চারটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপন; ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন; আশুগঞ্জ নৌ কনটেইনার বন্দর স্থাপন ও আশুগঞ্জ নৌবন্দর-আখাউড়া স্থলবন্দর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। এ তালিকায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আরও দুটি প্রকল্প রয়েছে।
ভারতের শর্ত মেনে এসব প্রকল্প কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তা নিয়ে আগামী ২ আগস্ট প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে সভা করবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আসিফ উজ জামান প্রথম আলোকে বলেন, সভায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হবে। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে ভারতীয় পক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করা হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শর্ত নমনীয় করার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।
ভারতীয় ঋণে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এর অর্ধেকের বেশি পূর্ত কাজের প্রকল্প। ইআরডির সূত্র উদাহরণ দিয়ে বলেছে, আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেনের সড়ক নির্মাণের জন্য প্রায় ২৩ কোটি ডলার দেবে ভারত। ভারতীয় ঠিকাদারকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে কমপক্ষে সোয়া ১৭ কোটি ডলার খরচ করতে হবে ভারতীয় মালামাল কিনে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রায় ৪৭ কিলোমিটার সড়কের পাশে ভারত থেকে মাটি, ইট, বালু, সিমেন্টের মতো উপকরণ ভারত থেকেই আনতে হবে। এমনকি শ্রমিকও আনতে হবে ভারত থেকে। কেননা, এই রাস্তা নির্মাণে যে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে, তাতে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের টাকা দিতেই ব্যয় হবে প্রকল্পের বাকি ২৫ শতাংশ অর্থ।
Comments
Post a Comment