Posted by
shahin
ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব
জাপানে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পৃথিবীর অনেক দেশ থেকেই শিক্ষার্থীরা আসছেন তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণের জন্য। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। জাপান স্টুডেন্ট সার্ভিস অর্গানাইজেশনের ২০১২ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশটিতে তখন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এসেছেন এক লাখ ৩৭ হাজার সাত শ ৫৬ জন। এর বাইরেও আরও প্রায় পঁচিশ হাজার শিক্ষার্থী এসেছেন শুধুমাত্র জাপানি ভাষা শিখতে। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীর মাঝে জাপানি ভাষা শিক্ষার আগ্রহ ব্যাপক। বিশেষ করে, চায়নিজ, ভিয়েতনামিজ, ইন্দোনেশিয়ান, থাই, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানিদের মধ্যে ভাষা শিক্ষার আগ্রহটা অনেক বেশি। আমাদের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাপানি ভাষা শিক্ষার আগ্রহটা অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীর তুলনায় কম বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাপানি ভাষা শিক্ষার আগ্রহটা কম কেন? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আসুন আমরা দেখি জাপানে উচ্চশিক্ষায় আসা শিক্ষার্থীদের কারা কীভাবে আসে এবং তাদের অর্থসংস্থান কীভাবে হয়।
তিন ধরনের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীরা জাপানে শিক্ষা অর্জন করে থাকেন।
প্রথমত জাপান সরকারের অর্থায়নে পড়তে আসা শিক্ষার্থী। দ্বিতীয়ত নিজ দেশের সরকারের অর্থায়নে পড়তে আসা শিক্ষার্থী। তৃতীয়ত নিজস্ব অর্থায়নে পড়তে আসা শিক্ষার্থী।
তিন ধরনের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীরা জাপানে শিক্ষা অর্জন করে থাকেন।
প্রথমত জাপান সরকারের অর্থায়নে পড়তে আসা শিক্ষার্থী। দ্বিতীয়ত নিজ দেশের সরকারের অর্থায়নে পড়তে আসা শিক্ষার্থী। তৃতীয়ত নিজস্ব অর্থায়নে পড়তে আসা শিক্ষার্থী।
এর মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে পড়তে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যাটাই বেশি এবং এত বেশি যে অন্যগুলো এর ধারেকাছেও নেই। মোট এক লাখ ৩৭ হাজার সাত শ ৫৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার এক শ ২৪ জনই হলো নিজস্ব, আট হাজার পাঁচ শ ৮৮ জন জাপান সরকারের এবং চার হাজার ৪৪ জন নিজ দেশের সরকারের অর্থায়নে পড়তে আসা (তথ্যসূত্র-JASSO, ২০১২)। নিজস্ব অর্থায়নে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে বিভিন্নরকম সরকারি-বেসরকারি বৃত্তি লাভ করেন। পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজ করারও সুযোগ পান যা দিয়ে পরিবারসহ স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারেন। জাপানে খণ্ডকালীন কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে জাপানি ভাষা জানা জরুরি হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাষার দক্ষতা খুব বেশি না হলেও চলে। পরবর্তীতে কাজ করতে করতে সহকর্মীদের সঙ্গে চর্চার মাধ্যমে দক্ষতা চলে আসে। আর তাই কম করে হলেও জাপানি ভাষা শিক্ষার আগ্রহটা নিজস্ব অর্থায়নে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যেই বেশি পরিলক্ষিত হয়।
বাংলাদেশ থেকে জাপানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই জাপান সরকারের বৃত্তিপ্রাপ্ত। নিজস্ব অর্থায়নে বিদেশে পড়তে যাওয়ার ভাবনা মাথায় এলে অধিকাংশই যেতে চান আমেরিকা অথবা ইউরোপে। তাই জাপানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। আর জাপান সরকারের বৃত্তিপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে খণ্ডকালীন কাজের খুব একটা প্রয়োজন হয় না, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। আর সে ক্ষেত্রে জাপানি ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও কম। অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যেহেতু জাপান সরকারের বৃত্তিপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে জাপানি ভাষা শিক্ষার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তাই কষ্ট করে জাপানি ভাষা শিখে কি লাভ! বরং, এই সময়টা নিজস্ব গবেষণার ক্ষেত্রে কাজে লাগানোই উত্তম বলেই অনেকে মনে করেন। কথা যথার্থই। উদ্দেশ্য তো জাপানি ভাষা শিখা নয়, উদ্দেশ্য হলো গবেষণা করা, যা ভবিষ্যতে নিজের কর্মক্ষেত্রে উত্তম ফল দেবে।
ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। আমার দেখা অনেকেই নিজের গবেষণায় সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করেও জাপানি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছেন। প্রয়োজন বা বাধ্যবাধকতা না থাকা সত্ত্বেও জাপানি ভাষা শিখতে (লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা) কেন আগ্রহী হলেন, জানতে চাইলে তাদের একজন এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া জানালেন। জাপানের সংস্কৃতি ও ভাষা সবকিছুই অন্য যেকোনো জাতি-গোষ্ঠীর থেকে ভিন্ন। আর এই ভিন্নতার কারণেই জাপান এশিয়ার একমাত্র উন্নত রাষ্ট্র। তাদের এই ভিন্নতার স্বাদ পেতে হলে জাপানি ভাষা জানার কোনো বিকল্প নেই। জাপানি ভাষা না জানার কারণে একেবারেই যে ভিন্নতার স্বাদ পাওয়া যাবে না তা নয়, তবে জাপানি ভাষা জানার কারণে এই স্বাদটা ভিন্নভাবে এমনকি ভেতর থেকে পাচ্ছি, যা ভাষা শিক্ষার আগে পাইনি।
একই প্রশ্নের উত্তরে অন্য একজন জানালেন একটু ভিন্নভাবে। জাপানে লেখাপড়া শেষ করে দেশে চলে যাওয়ার পর জাপানি ভাষা শিক্ষার সুযোগ পাওয়াটা দুষ্কর। অধিকন্তু, একটি দেশে থাকব, খাব, পড়ব আর সে দেশের ভাষা-সংস্কৃতি জানব না তা তো হয় না! আর এই আগ্রহ থেকেই জাপানি ভাষা শেখা। আমি এখন যেভাবে এই দেশের সংস্কৃতিকে বুঝতে পারি তা সম্ভব হতো না যদি না আমি জাপানি ভাষা শিখতাম। শুধু তাই নয়, একদিন সকালবেলায় আমি একটি ফোন পেলাম। ওপর প্রান্ত থেকে যখন শুনলাম অনুবাদের জন্য আমাকে তাদের দরকার। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না যে তাদের আমি কি বলব। আমি শুধু বলেছিলাম, আমাকে দিয়ে অনুবাদের কাজ করাতে হলে আমার বিশ্ববিদ্যালয় ও সুপারভাইজারের অনুমতি লাগবে। তারপর তারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তাদের অফিসে নিয়ে গিয়েছিল অনুবাদের জন্য। আগ্রহ থেকে শেখা জাপানি ভাষা এভাবে একদিন কাজে লাগবে তা কখনো ভাবিনি।
আবার অনেকের সঙ্গে কথা বলে এর বিপরীত চিত্রও পাওয়া গেছে। জাপানি ভাষা না জানার কারণে আপনার কি কোনো সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে একজন জানালেন, কিছুদিন আগে এজেন্সির মাধ্যমে আমি এক জাপানিজকে বাংলা শেখানোর কাজ পাই। জাপানিজ ভদ্রলোক আমার সঙ্গে কথা বলে যখন বুঝতে পারলেন যে, আমার জাপানি ভাষার দক্ষতা কম, তখন সে এজেন্সির মাধ্যমে আমাকে না করে দিল। জাপানি ভাষা জানা থাকলে আমার বাংলা শেখানোর কাজটা হাতছাড়া হতো না।
এটা ঠিক যে, কোনো শিক্ষাই বিফল নয়। সর্বশেষ, জাপানে বাঙালি প্রবাসীদের প্রতি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উদাত্ত আহ্বান ছিল সবাই যেন জাপানে থাকাকালে জাপানি ভাষা শিখি। একবার ভেবে দেখেছেন কি, আপনার সকল যোগ্যতা থাকার পরও শুধু জাপানি ভাষা না জানার কারণে একটা বড়রকমের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে যখন আপনি সেই সুযোগটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তীর্থের কাকের মতো! আমরা আশা করব কারও যেন এমনটি না হয়।
(লেখক পিএইচ ডি গবেষক, Japan Advanced Institute of Science and Technology (JAIST), ই-মেইল: toufiq30.ku.jp@gmail.com)
বাংলাদেশ থেকে জাপানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই জাপান সরকারের বৃত্তিপ্রাপ্ত। নিজস্ব অর্থায়নে বিদেশে পড়তে যাওয়ার ভাবনা মাথায় এলে অধিকাংশই যেতে চান আমেরিকা অথবা ইউরোপে। তাই জাপানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। আর জাপান সরকারের বৃত্তিপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে খণ্ডকালীন কাজের খুব একটা প্রয়োজন হয় না, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। আর সে ক্ষেত্রে জাপানি ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও কম। অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যেহেতু জাপান সরকারের বৃত্তিপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে জাপানি ভাষা শিক্ষার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তাই কষ্ট করে জাপানি ভাষা শিখে কি লাভ! বরং, এই সময়টা নিজস্ব গবেষণার ক্ষেত্রে কাজে লাগানোই উত্তম বলেই অনেকে মনে করেন। কথা যথার্থই। উদ্দেশ্য তো জাপানি ভাষা শিখা নয়, উদ্দেশ্য হলো গবেষণা করা, যা ভবিষ্যতে নিজের কর্মক্ষেত্রে উত্তম ফল দেবে।
ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। আমার দেখা অনেকেই নিজের গবেষণায় সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করেও জাপানি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছেন। প্রয়োজন বা বাধ্যবাধকতা না থাকা সত্ত্বেও জাপানি ভাষা শিখতে (লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা) কেন আগ্রহী হলেন, জানতে চাইলে তাদের একজন এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া জানালেন। জাপানের সংস্কৃতি ও ভাষা সবকিছুই অন্য যেকোনো জাতি-গোষ্ঠীর থেকে ভিন্ন। আর এই ভিন্নতার কারণেই জাপান এশিয়ার একমাত্র উন্নত রাষ্ট্র। তাদের এই ভিন্নতার স্বাদ পেতে হলে জাপানি ভাষা জানার কোনো বিকল্প নেই। জাপানি ভাষা না জানার কারণে একেবারেই যে ভিন্নতার স্বাদ পাওয়া যাবে না তা নয়, তবে জাপানি ভাষা জানার কারণে এই স্বাদটা ভিন্নভাবে এমনকি ভেতর থেকে পাচ্ছি, যা ভাষা শিক্ষার আগে পাইনি।
একই প্রশ্নের উত্তরে অন্য একজন জানালেন একটু ভিন্নভাবে। জাপানে লেখাপড়া শেষ করে দেশে চলে যাওয়ার পর জাপানি ভাষা শিক্ষার সুযোগ পাওয়াটা দুষ্কর। অধিকন্তু, একটি দেশে থাকব, খাব, পড়ব আর সে দেশের ভাষা-সংস্কৃতি জানব না তা তো হয় না! আর এই আগ্রহ থেকেই জাপানি ভাষা শেখা। আমি এখন যেভাবে এই দেশের সংস্কৃতিকে বুঝতে পারি তা সম্ভব হতো না যদি না আমি জাপানি ভাষা শিখতাম। শুধু তাই নয়, একদিন সকালবেলায় আমি একটি ফোন পেলাম। ওপর প্রান্ত থেকে যখন শুনলাম অনুবাদের জন্য আমাকে তাদের দরকার। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না যে তাদের আমি কি বলব। আমি শুধু বলেছিলাম, আমাকে দিয়ে অনুবাদের কাজ করাতে হলে আমার বিশ্ববিদ্যালয় ও সুপারভাইজারের অনুমতি লাগবে। তারপর তারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তাদের অফিসে নিয়ে গিয়েছিল অনুবাদের জন্য। আগ্রহ থেকে শেখা জাপানি ভাষা এভাবে একদিন কাজে লাগবে তা কখনো ভাবিনি।
আবার অনেকের সঙ্গে কথা বলে এর বিপরীত চিত্রও পাওয়া গেছে। জাপানি ভাষা না জানার কারণে আপনার কি কোনো সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে একজন জানালেন, কিছুদিন আগে এজেন্সির মাধ্যমে আমি এক জাপানিজকে বাংলা শেখানোর কাজ পাই। জাপানিজ ভদ্রলোক আমার সঙ্গে কথা বলে যখন বুঝতে পারলেন যে, আমার জাপানি ভাষার দক্ষতা কম, তখন সে এজেন্সির মাধ্যমে আমাকে না করে দিল। জাপানি ভাষা জানা থাকলে আমার বাংলা শেখানোর কাজটা হাতছাড়া হতো না।
এটা ঠিক যে, কোনো শিক্ষাই বিফল নয়। সর্বশেষ, জাপানে বাঙালি প্রবাসীদের প্রতি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উদাত্ত আহ্বান ছিল সবাই যেন জাপানে থাকাকালে জাপানি ভাষা শিখি। একবার ভেবে দেখেছেন কি, আপনার সকল যোগ্যতা থাকার পরও শুধু জাপানি ভাষা না জানার কারণে একটা বড়রকমের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে যখন আপনি সেই সুযোগটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তীর্থের কাকের মতো! আমরা আশা করব কারও যেন এমনটি না হয়।
(লেখক পিএইচ ডি গবেষক, Japan Advanced Institute of Science and Technology (JAIST), ই-মেইল: toufiq30.ku.jp@gmail.com)
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment