এক অমুসলিম জার্মানের রোজার অভিজ্ঞতা


জার্মান নাগরিক স্টেফান হাট। চাকরির সুবাদে সপরিবারে পাড়ি জমিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে। এবারের রমজানে রোজা রাখার নতুন এক অভিজ্ঞতা আস্বাদন করেছেন তিনি। স্টেফানের বক্তব্য, তার মুসলিম বন্ধুরা ধর্ম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রোজা রাখেন আর তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন তার বন্ধুদের কাছ থেকে। খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে স্টেফানের রোজা রাখার ঘটনা। মাত্র তিন মাস আগে আবুধাবি পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। পেশায় একজন ফাইনান্সিয়াল কনসালট্যান্ট। স্টেফান বলেন, চাকরির একটা ভাল সুযোগ ছিল। সে সুবাদে আবুধাবির আসা। আর নতুন দেশে চাকরি বেশ উপভোগ করছেন তিনি। কোন আক্ষেপ নেই। আবুধাবিতে যে বাড়িতে থিতু হয়েছেন তাতে রয়েছে ছোট্ট একটা বাগান। সুইমিংপুলও আছে। তবে এখনও তিনি আবুধাবির জীবনধারার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন। এর মধ্যদিয়ে রমজান মাসে এসে সে অভিজ্ঞতা ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। স্টেফান বলেন, মানুষ রমজান মাসে কি করে সেটা জানার জন্য অনেকের কাছে প্রশ্ন করেছি। কি কি করতে হবে আর কি কি করা যাবে না সেগুলো জেনেছি। কিন্তু এগুলো জানা আর তা পূর্ণাঙ্গরূপে পালন করা পুরোই ভিন্ন একটি বিষয়। রোজার প্রথম সপ্তাহে নীরব স্থান খুঁজে বের করে পানিতে চুমুক দিয়েছেন স্টেফান। কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা জানালার পেছনে খোলা ক্যাফেগুলোতে গিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন। গত মঙ্গলবার ইফতারের দাওয়াত পান স্টেফান। তিনি বলেন, অফিসে আমার কয়েকজন আমিরাতি সহকর্মী আছেন। তাদের একজন তার বাড়িতে ইফতারের দাওয়াত দেন। আমার মনে হয় নিমন্ত্রিত একমাত্র অমুসলিম আমি একা ছিলাম। আমি আমার সহকর্মীদের কাছে জানতে চাইলাম দাওয়াতে আতিথিকর্তার জন্য কোন উপহার নিয়ে আসবো কি না। তখন তারা আমাকে জবাব দিলেন, আমি সব থেকে সেরা যে উপহারটা দিতে পারি তা হলো- আমি যদি ওই দিন রোজা রাখি। সেটাই সব থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে প্রশংসিত হবে। এরপর স্টেফান সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন যে রোজা রাখার চেষ্টা করে দেখবেন। সোমবার রাতে অন্যদিনের তুলনায় নৈশভোজটা করলেন বেশ ভারি আকারের। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হলো তার জীবনের প্রথম রোজা। স্টেফানের ভাষায়, তার জন্য প্রথম বড় যে চ্যালেঞ্জটা ছিল তা হলো, সকালে এক কাপ কফি না খাওয়া। এতে কিছুটা বিষণ্ন বোধ করলাম। এরপর সকাল ১১টা বাজতে বাজতে আমার গলা এতটা শুকনো অনুভূত হলো যে কথা বলতেই কষ্ট হচ্ছিল। সময় যত গড়াচ্ছিল ততই হাল ছাড়ার ইচ্ছা উঁকি দিচ্ছিল মনে। কিন্তু আমার চারপাশে রোজা রাখা সহকর্মীদের দেখতে লাগলাম। এতে অনুপ্রাণিত বোধ করলাম। ভাবলাম, তারা যদি পারে তাহলে আমিও পারবো। বিকালের শুরুর দিকে ঘুম ঘুম ভাব আর মাথা ঘোরানোর অনুভূতি হতে লাগলো। কিন্তু ততক্ষণে স্টেফান স্থির করেছেন- যাই হোক রোজা ভাঙবেন না। এরপর ঘণ্টা দুয়েক ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তারপরও ইফতারের আগ দিয়ে যখন আমার সহকর্মীর বাড়িতে পৌঁছালাম, সে বললো, আমাকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আমি তাকে বললাম আমি ক্লান্ত নই। আমি রোজা রেখেছি। এতে আমার ওই সহকর্মী অত্যন্ত বিস্মিত আর খুশি হলো। আমার সঙ্গে করমর্দন করলো সে। লক্ষ্য করলাম তার চোখে প্রায় পানি চলে এসেছে। স্টেফান বললেন, ওই দিন আমি একজন বন্ধু পেয়েছি। 
রোজা রাখার চ্যালেঞ্জ আর এর পুরস্কার স্টেফানের মনে গভীর দাগ কেটেছে। হঠাৎ করেই মুসলিম সহকর্মীরা তার প্রতি শুধু অত্যন্ত আন্তরিক আর বিনয়ী হয়ে ওঠেন তাই নয়, তাদের সঙ্গে বিশেষ এক বন্ধন অনুভব করতে শুরু করেন স্টেফান। আর সে বন্ধনটা ক্রমেই দৃঢ় হচ্ছে। কেননা, স্টেফান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবারের পুরো রমজান মাসই তিনি রোজা রাখবেন। স্টেফান বলেন, আমি জানি, তারা ধর্ম আর সামাজিক চর্চার দ্বারা অনুপ্রাণিত। কিন্তু আমি তাদের দিয়ে অনুপ্রাণিত। আর এটাও তীব্র এক অনুপ্রেরণা। রোজা রাখা সহজ নয়। আপনার অবশ্যই ক্ষুধা, তৃষ্ণা লাগবে। কিন্তু আমি মনে করি সত্যিকারের চ্যালেঞ্জটা হলো মনস্তাত্ত্বিক।

Comments