দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই একমাত্র সমস্যা নয়। সারা বিশ্ব এখন এসে দাঁড়িয়েছে এক মহা অনিশ্চয়তার মধ্যে। চার দিকে আবার বাজতে শুরু করেছে রণ দামামা
অনেক দিন আগে রাজনীতি সম্পর্কিত একটি বই পড়েছিলাম। তাতে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র চরম অবস্থায় (Extreme Situation) টিকতে পারে না। কোনো দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করলে গণতন্ত্র অচল হয়ে পড়ে। ভারতে জাতিসত্তা সমস্যার এখনো সমাধান হয়নি। জাতিসত্তার সঙ্ঘাত সৃষ্টি করতে পারে চরম অবস্থা, যা হয়ে উঠতে পারে গণতন্ত্রের প্রতিবন্ধক। ভারতে জাতিসত্তার সমস্যা উত্তর-পূর্ব ভারতে চরম আকার ধারণ করেছে। যতগুলো কারণে নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন, তার একটি কারণ হলো উত্তর-পূর্ব ভারতে যে স্বাধীনতার আন্দোলন আরম্ভ হয়েছে তা দমনে বাংলাদেশের সহযোগিতা লাভ। চীন উত্তর-পূর্ব ভারতে স্বাধীনতাকামী জাতিসত্তাগুলোকে সাহায্য দিয়ে চলেছে। নরেন্দ্র মোদি চীনে গিয়ে চীনের কাছ থেকে এ ক্ষেত্রে সাহায্য বন্ধের প্রতিশ্র“তি লাভ করতে পারেননি। তিনি চাচ্ছেন বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রসদ, সৈন্য ও সমর উপকরণ উত্তর-পূর্ব ভারতে পাঠাতে।
ভারতের পশ্চিমে শিখরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন খালিস্তান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। এটাও হয়ে উঠেছে নরেন্দ্র মোদির বিশেষ উদ্বেগের কারণ। নরেন্দ্র মোদি গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী। শিখদের সাথে কোনো আপসরফায় আসা তার পক্ষে সহজসাধ্য নয়। নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে তাই ভারতে সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে প্রবল রাজনৈতিক সঙ্কট। ক’দিন আগে বিজেপির খ্যাতনামা নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি বলেছেন (প্রথম আলো, ১৯ জুন ২০১৫), ভারতে আবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার প্রয়োজন হতে পারে। আদভানি একজন খুবই বড় মাপের দায়িত্বশীল নেতা। তার আশঙ্কাকে তাই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। তিনি অনেক ব্যাপারে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি অবগত আছেন। তিনি ভারতের রাজনীতি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
আমরা জানি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৫ সালের ২৬ জুন ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। এ সময় ভারতের বিরোধী দলগুলোর ছয় শতাধিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয় এবং দলগুলোকে করা হয় বেআইনি। এ ছাড়া ভারতের বিখ্যাত সমাজতন্ত্রী নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ পরিচালিত আন্দোলনের শরিক ৩০ হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ৪ জুলাই ২৬টি চরমপন্থী প্রতিষ্ঠান, যেমনÑ রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ, আনন্দ মার্গ, নকশাল প্রভৃতিকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত জরুরি অবস্থা চলে। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি মাসে কিছুটা আকর্স্মিকভাবে ভারতীয় পার্লামেন্টের নির্বাচন ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৭ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে জনতা পার্টির জোট লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ইন্দিরা গান্ধী পদত্যাগ করেন এবং মোরারজী দেশাই প্রধানমন্ত্রী হন। ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা ঘোষণার আগে ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে সিকিম দখল করেন।
ইন্দিরা গান্ধী ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ১৯৭৫ সালের ২৬ জুন। বাংলাদেশে শেখ মুজিব নিহত হন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। দিনটি ছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস। ইন্দিরা গান্ধী নাকি বাংলাদেশে পাঠাতে চেয়েছিলেন ভারতীয় সৈন্য। কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি কোনো একটি খুবই পরাশক্তির চাপে। ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা ঘোষণা এখনো হয়ে আছে যথেষ্ট রহস্যময়। লালকৃষ্ণ আদভানি বলছেন, ভারতে মোদি সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে। ভারতে জরুরি অবস্থা বাংলাদেশের জন্য কী ফল বয়ে আনবে, সেটা খুবই অনুমানসাপেক্ষ। তবে ভারতীয় পত্রপত্রিকায় বলা হচ্ছে, আসামের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা পরেশ বড়–য়া নাকি এখন আছেন চীনে। পরেশ বড়–য়ার দেহরক্ষী হিসেবে নিযুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশের হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামির সদস্যরা (বাংলাাদেশ প্রতিদিন, ২০ জুন ২০১৫)। অর্থাৎ বাংলাদেশের ইসলামপন্থী দলগুলোকে আসামের স্বাধীনতাপন্থীদের সাথে যুক্ত করা হচ্ছে। জানি না, মোদি এভাবে বাংলাদেশে সৈন্য পাঠানোর ক্ষেত্র রচনা করতে চাচ্ছেন কি না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে আসামের স্বাধীনতাকামীদের কথা ভেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন, সে বিষয়ে এখন আর সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এসে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করেছেন। তার এই সাক্ষাৎকার নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বাংলাদেশের মানুষ জানতে চাচ্ছে, এই একান্ত সাক্ষাৎকারের কি আদৌ কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল? কী দাবি করেছেন নরেন্দ্র মোদি, তার এই গোপন কথোপকথনে।
দেশের মানুষের মনে বিশেষ আঘাত লেগেছে খালেদা জিয়ার আচরণে। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী নেতা হিসেবে। কিন্তু তার এই ভাবমর্যাদা আর আগের মতো লোকের চোখে টিকে থাকতে চাচ্ছে বলে মনে চচ্ছে না। এই একান্ত সাক্ষাৎকারে দল হিসেবে বিএনপি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলো বলেই অনেক সাধারণ বিএনপি ভক্ত আশঙ্কা করছেন। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন বলেছেন, আমরা ২০ দল করি। আমরা কী করব, না করব, কোন দল আমাদের সাথে থাকবে, না থাকবে; এ জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের মাথাব্যথার দরকার নেই। তাদের এত মাথাব্যথা কেন? কে থাকবে, কে থাকবে না, তা ২০ দলীয় নেতাদের দায়িত্ব। বিষয়টি তারাই দেখবেন। জোট নেত্রী খালেদা জিয়া এসব কুচক্রী ষড়যন্ত্রে কান দেবেন না (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২১ জুন ২০১৫)। কিন্তু গণতন্ত্রে জনমতকে শ্রদ্ধা করতে হয়। ক্ষমতাসীন দলের প্রচার বিএনপি-বিরোধী জনমত দানা বাঁধতে সহায়ক হতে পারে। যেটাকে খাটো করে দেখা হবে ভুল রাজনীতি করা। বিএনপির রাজনীতি কেবল যে বাংলাদেশের মানুষের মনে সংশয়ের উদ্ভব করেছে, তা নয়। নরেন্দ্র মোদি চলে যাওয়ার পর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নীতিনির্ধারক নেতারা ঢাকায় ছুটে এসেছেন খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। যেটাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা, চীন আমাদের পরীক্ষিত মিত্র। তার সাথে সম্পর্কের অবনতি আমাদের জন্য হয়ে উঠবে যথেষ্ট ক্ষতির কারণ। আমাদের অ্যাডভোকেট সাহেবরা এটা না বোঝার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।
আদালতের মামলা আর দেশের রাজনীতি এক ব্যাপার নয়। আদালতে মামলা চলে আইনের ছকে। আইন সহজে পাল্টানো যায় না, কিন্তু দেশের রাজনীতি চলে জনমত নির্ভর করে। আর জনমত অনেক সহজে পাল্টে যেতে পারে। রাজনীতি করতে হলে এটা উপলব্ধিতে থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া আমাদের বুঝতে হবে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কেবল বাংলাদেশের ঘরোয়া রাজনীতি দিয়েই নির্ধারিত হবে না, নির্ধারিত হবে বিশ্বরাজনীতির ঘটনাপ্রবাহের দ্বারা। কেবল বাংলাদেশের ঘরোয়া রাজনীতি দিয়ে কোনো দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারিত হওয়া উচিত নয়।
নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের ব্যাপারে অনুসরণ করতে চাচ্ছেন ইন্দিরা গান্ধীরই ঐতিহ্য। ইন্দিরা গান্ধী চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে ভারতের একটি উপগ্রহে (Satellite) পরিণত করতে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ ভারতের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের নামে ভারতের অধীনতামূলক মিত্রতার (Subsidiary Alliance) নীতিকে মেনে নিতে চায়নি। চেয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বজায় রাখতে। আর বাংলাদেশের মানুষ বর্তমানে সেই একই নীতি অনুসরণ করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকেই উপলব্ধি করতে হবে এই বিশেষ বাস্তবতা। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই একমাত্র সমস্যা নয়। সারা বিশ্ব এখন এসে দাঁড়িয়েছে এক মহা অনিশ্চয়তার মধ্যে। চার দিকে আবার বাজতে শুরু করেছে রণ দামামা। আমাদের বাঁচতে হবে সক্রিয় নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে। f
ভারতের পশ্চিমে শিখরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন খালিস্তান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। এটাও হয়ে উঠেছে নরেন্দ্র মোদির বিশেষ উদ্বেগের কারণ। নরেন্দ্র মোদি গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী। শিখদের সাথে কোনো আপসরফায় আসা তার পক্ষে সহজসাধ্য নয়। নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে তাই ভারতে সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে প্রবল রাজনৈতিক সঙ্কট। ক’দিন আগে বিজেপির খ্যাতনামা নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি বলেছেন (প্রথম আলো, ১৯ জুন ২০১৫), ভারতে আবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার প্রয়োজন হতে পারে। আদভানি একজন খুবই বড় মাপের দায়িত্বশীল নেতা। তার আশঙ্কাকে তাই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। তিনি অনেক ব্যাপারে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি অবগত আছেন। তিনি ভারতের রাজনীতি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
আমরা জানি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৫ সালের ২৬ জুন ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। এ সময় ভারতের বিরোধী দলগুলোর ছয় শতাধিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয় এবং দলগুলোকে করা হয় বেআইনি। এ ছাড়া ভারতের বিখ্যাত সমাজতন্ত্রী নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ পরিচালিত আন্দোলনের শরিক ৩০ হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ৪ জুলাই ২৬টি চরমপন্থী প্রতিষ্ঠান, যেমনÑ রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ, আনন্দ মার্গ, নকশাল প্রভৃতিকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত জরুরি অবস্থা চলে। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি মাসে কিছুটা আকর্স্মিকভাবে ভারতীয় পার্লামেন্টের নির্বাচন ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৭ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে জনতা পার্টির জোট লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ইন্দিরা গান্ধী পদত্যাগ করেন এবং মোরারজী দেশাই প্রধানমন্ত্রী হন। ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা ঘোষণার আগে ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে সিকিম দখল করেন।
ইন্দিরা গান্ধী ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ১৯৭৫ সালের ২৬ জুন। বাংলাদেশে শেখ মুজিব নিহত হন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। দিনটি ছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস। ইন্দিরা গান্ধী নাকি বাংলাদেশে পাঠাতে চেয়েছিলেন ভারতীয় সৈন্য। কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি কোনো একটি খুবই পরাশক্তির চাপে। ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা ঘোষণা এখনো হয়ে আছে যথেষ্ট রহস্যময়। লালকৃষ্ণ আদভানি বলছেন, ভারতে মোদি সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে। ভারতে জরুরি অবস্থা বাংলাদেশের জন্য কী ফল বয়ে আনবে, সেটা খুবই অনুমানসাপেক্ষ। তবে ভারতীয় পত্রপত্রিকায় বলা হচ্ছে, আসামের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা পরেশ বড়–য়া নাকি এখন আছেন চীনে। পরেশ বড়–য়ার দেহরক্ষী হিসেবে নিযুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশের হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামির সদস্যরা (বাংলাাদেশ প্রতিদিন, ২০ জুন ২০১৫)। অর্থাৎ বাংলাদেশের ইসলামপন্থী দলগুলোকে আসামের স্বাধীনতাপন্থীদের সাথে যুক্ত করা হচ্ছে। জানি না, মোদি এভাবে বাংলাদেশে সৈন্য পাঠানোর ক্ষেত্র রচনা করতে চাচ্ছেন কি না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে আসামের স্বাধীনতাকামীদের কথা ভেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন, সে বিষয়ে এখন আর সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এসে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করেছেন। তার এই সাক্ষাৎকার নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বাংলাদেশের মানুষ জানতে চাচ্ছে, এই একান্ত সাক্ষাৎকারের কি আদৌ কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল? কী দাবি করেছেন নরেন্দ্র মোদি, তার এই গোপন কথোপকথনে।
দেশের মানুষের মনে বিশেষ আঘাত লেগেছে খালেদা জিয়ার আচরণে। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী নেতা হিসেবে। কিন্তু তার এই ভাবমর্যাদা আর আগের মতো লোকের চোখে টিকে থাকতে চাচ্ছে বলে মনে চচ্ছে না। এই একান্ত সাক্ষাৎকারে দল হিসেবে বিএনপি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলো বলেই অনেক সাধারণ বিএনপি ভক্ত আশঙ্কা করছেন। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন বলেছেন, আমরা ২০ দল করি। আমরা কী করব, না করব, কোন দল আমাদের সাথে থাকবে, না থাকবে; এ জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের মাথাব্যথার দরকার নেই। তাদের এত মাথাব্যথা কেন? কে থাকবে, কে থাকবে না, তা ২০ দলীয় নেতাদের দায়িত্ব। বিষয়টি তারাই দেখবেন। জোট নেত্রী খালেদা জিয়া এসব কুচক্রী ষড়যন্ত্রে কান দেবেন না (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২১ জুন ২০১৫)। কিন্তু গণতন্ত্রে জনমতকে শ্রদ্ধা করতে হয়। ক্ষমতাসীন দলের প্রচার বিএনপি-বিরোধী জনমত দানা বাঁধতে সহায়ক হতে পারে। যেটাকে খাটো করে দেখা হবে ভুল রাজনীতি করা। বিএনপির রাজনীতি কেবল যে বাংলাদেশের মানুষের মনে সংশয়ের উদ্ভব করেছে, তা নয়। নরেন্দ্র মোদি চলে যাওয়ার পর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নীতিনির্ধারক নেতারা ঢাকায় ছুটে এসেছেন খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। যেটাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা, চীন আমাদের পরীক্ষিত মিত্র। তার সাথে সম্পর্কের অবনতি আমাদের জন্য হয়ে উঠবে যথেষ্ট ক্ষতির কারণ। আমাদের অ্যাডভোকেট সাহেবরা এটা না বোঝার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।
আদালতের মামলা আর দেশের রাজনীতি এক ব্যাপার নয়। আদালতে মামলা চলে আইনের ছকে। আইন সহজে পাল্টানো যায় না, কিন্তু দেশের রাজনীতি চলে জনমত নির্ভর করে। আর জনমত অনেক সহজে পাল্টে যেতে পারে। রাজনীতি করতে হলে এটা উপলব্ধিতে থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া আমাদের বুঝতে হবে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কেবল বাংলাদেশের ঘরোয়া রাজনীতি দিয়েই নির্ধারিত হবে না, নির্ধারিত হবে বিশ্বরাজনীতির ঘটনাপ্রবাহের দ্বারা। কেবল বাংলাদেশের ঘরোয়া রাজনীতি দিয়ে কোনো দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারিত হওয়া উচিত নয়।
নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের ব্যাপারে অনুসরণ করতে চাচ্ছেন ইন্দিরা গান্ধীরই ঐতিহ্য। ইন্দিরা গান্ধী চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে ভারতের একটি উপগ্রহে (Satellite) পরিণত করতে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ ভারতের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের নামে ভারতের অধীনতামূলক মিত্রতার (Subsidiary Alliance) নীতিকে মেনে নিতে চায়নি। চেয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বজায় রাখতে। আর বাংলাদেশের মানুষ বর্তমানে সেই একই নীতি অনুসরণ করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকেই উপলব্ধি করতে হবে এই বিশেষ বাস্তবতা। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই একমাত্র সমস্যা নয়। সারা বিশ্ব এখন এসে দাঁড়িয়েছে এক মহা অনিশ্চয়তার মধ্যে। চার দিকে আবার বাজতে শুরু করেছে রণ দামামা। আমাদের বাঁচতে হবে সক্রিয় নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে। f
Comments
Post a Comment