প্রেস ক্লাবকে ঘিরে উত্তেজনা

জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাধারণ সম্পাদকের রুমের তালা ভাঙা হচ্ছে

ক্রমশ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে জাতীয় প্রেস ক্লাবকে ঘিরে। জটিল হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিস্থিতি। চলছে দুই পক্ষের দফায় দফায় বৈঠক। বিবৃতি আর পাল্টা বিবৃতি। তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে প্রেস ক্লাবের তিন তলায় ওঠার মূল ফটকে ও একটি কক্ষে। উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজনৈতিক স্লোগানে। একপর্যায়ে গতকাল সকালে প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের কক্ষের কাঁচঘেরা দরজার তালা ভাঙতে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে সিনিয়রদের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বৃহস্পতিবার ক্লাব মিলনায়তনে একটি সাধারণ সভা থেকে ভোট ছাড়াই একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলমান অবস্থায় গতকাল দুপুরে প্রেস ক্লাবের কমিটি কক্ষে ঘোষিত ব্যবস্থাপনা  
কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এক সভা হয়। ওই সভা থেকেই প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বভার গ্রহণের কথা বলা হয়। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর রোববার সকাল ১১টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।  বৈঠকের পর ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা ক্লাবের দায়িত্ব নিয়েছি। এ জন্য সকলের সহযোগিতা চাই। আগামীকাল (আজ রোববার) ১১টা পর্যন্ত বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে।’ তবে  মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক  সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, ‘ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কমিটি নির্বাচিত আরেকটি কমিটির কাছেই ক্ষমতা হন্তান্তর করতে পারে, এর বাইরে ক্ষমতা হস্তান্তর হতে পারে না। ক্লাবের কোন দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন হয়নি। সেহেতু দায়িত্ব দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তথাকথিত কমিটি  কোন বৈধ কমিটি নয়। আগামী ২৭শে জুন ক্লাবের অতিরিক্ত সাধারণ সভায় ক্লাবের সদস্যরাই সবকিছু সিদ্ধান্ত নেবেন। বৈঠকের এক পর্যায়ে সাধারণ সম্পাদকের কক্ষের কাঁচঘেরা দরজার লক  ভেঙে খুলতে গেলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ক্লাবের এক অফিস সহকারী বাইরে থেকে মেকার আনোয়ার ও জাহিদকে এনে তালা খুলে ফেলে। জানালার গ্লাস খুলে তারা ভেতরের লকও খুলে ফেলেন। এ সময় আলোকচিত্র সাংবাদিকরা ক্যামেরা দিয়ে দরজার তালা  খোলার দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দি করতে গেলে কমিটি কক্ষ  থেকে শফিকুর রহমান বেরিয়ে আসেন। তিনি মেকারদের বলেন, কে তোমাদের তালা খুলতে বলেছে। আমরা তো এই কক্ষ কাউকে খুলতে বলিনি।’ এ পর্যায়ে তাদের  বের হয়ে যেতে বলেন শফিকুর রহমান। এর পরপরই তৃতীয় তলায় বৈঠকে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক  সৈয়দ আবদাল আহমেদ নিজের কক্ষের সামনে এসে উচ্চ কণ্ঠে বলেন, ‘আমি সাধারণ সম্পাদক। আমার রুম কে খুলতে বলেছে। কে তালা ভাঙতে বলেছে।’ এ সময়ে ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য নুরুল হুদা, হাসান হাফিজ, নুরুল হাসান খানসহ কয়েক জন ক্লাব সদস্যও ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তারা অফিস কক্ষে গিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিককে কী কারণে সাধারণ সম্পাদকের কক্ষের তালা ভাঙা হচ্ছে জানতে চান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই পক্ষের এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে কমিটির কক্ষের পাশে দ্বিতীয় তলার সাংবাদিক লাউঞ্জে আগে  থেকে অবস্থান নেয়া ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত  ফোরামের সদস্যরা পাল্টা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তারা ‘বিএনপি-জামায়াতের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় ক্লাবের স্থায়ী সদস্যদের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে ক্লাবের সদস্যরা বহিরাগতদের চলে  যেতে শফিকুর রহমানের কাছে দাবি জানাতে থাকেন। পরে শফিকুর রহমান নিজের  ফোরামের সদস্যদের নিচে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানাতে থাকেন। তিনি নিজে তাদের দেখে দেখে নিচে চলে  যেতে বলেন। আমানউল্লাহ কবীরও তখন কমিটি কক্ষের বাইরে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এদিকে ফোরামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ৮ সিনিয়র  সাংবাদিককে বহিষ্কার করেছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ফোরাম। জাতীয় প্রেস ক্লাবের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ কমিটিতে যোগ  দেয়ার অভিযোগ এনে তাদের  ফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন  ফোরাম নেতা রুহুল আমিন গাজী। বহিষ্কৃতরা হলেন আমান উল্লাহ কবীর, খন্দকার মনিরুল আলম, এলাহী  নেওয়াজ খান সাজু, গোলাম মহিউদ্দিন খান, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, আমিরুল ইসলাম কাগজী, সরদার ফরিদ ও ইলিয়াস খান। বহিষ্কৃতরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের ‘সমঝোতা’ কমিটির পক্ষে আছেন। গতকাল দুপুরে ক্লাবের তৃতীয় তলায় জাতীয়  প্রেস ক্লাবের উদ্ভূত পরিস্থিতি ও গঠিত সমঝোতা কমিটির বিষয় নিয়ে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপি সমর্থিত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে বৈঠকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের দেড় শতাধিক সদস্যসহ ইউনিয়নের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শওকত মাহমুদ বলেন, ‘এরা অতীতেও একাধিকবার ফোরামের ঐক্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিলো। এবারো তারা একই কাজ করেছেন। সংগঠনের ঐক্য বিনষ্ট ও হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য তারা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন। সভায় সকল সদস্য এই বহিষ্কারকে হাত তুলে সমর্থন জানান। 
এব্যাপারে আমান উল্লাহ কবীর বলেন, কে কাকে কোথায় থেকে বহিষ্কার করেছে আমি জানি না। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন তা হলে সেটার গুরুত্ব আছে। আমি কোথায় কোন পদে ছিলাম কোন পদ থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। আপনি জাতীয়তাবাদী ফোরামে ছিলেন ওই ফোরাম থেকে আপনাকে বহিষ্কার করা হয়েছে-এমন বক্তব্যের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে আমি ওদের সঙ্গে নেই। আমিই তাদের প্রত্যাখ্যান করেছি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে আমরা এন্টি আওয়ামী লীগ একটি ফোরাম করেছি। তখন বিএনপি-জামায়াত কিছুই ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে তারা এটাকে নানারূপ দিয়েছে।  সেই সবের আড়ালে লুটতরাজ করে খাচ্ছিল। আমরা তাদের সেই সব অপকর্ম বন্ধ করার চেষ্টা করছি। এন্টি আওয়ামী লীগার হয়ে এখন আওয়ামী লীগের ফোরামের সঙ্গে গেলেন কিভাবে? উত্তরে সিনিয়র এই সাংবাদিক বলেন, প্রেস ক্লাবটা ভেঙে যাচ্ছিল, এ পর্যায়ে তারাই সমঝোতার ভিত্তিতে একটি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন। তার ধারাবাহিকতায় এই কমিটি হয়েছে। তবে কমিটিতে রুহুল আমিন গাজী, শওকত মাহমুদরা থাকলে কোন অসুবিধা ছিল না। কামরুল ইসলাম থাকায় যত দোষ হয়েছে। 

Comments