হাওয়া শূন্য নির্বাচনী মাঠ। মাঠে-মহল্লায় নেই নির্বাচনী আমেজ। উত্তাপহীন চায়ের দোকান। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অ


 বাসা-এলাকায় বিরাজ করছে নিরুত্তাপ আবহ। সিটি নির্বাচন কিংবা রাজনৈতিক বিষয়ে মুখ খুলে মনের কথা বলছেন না বেশির ভাগ মানুষ। প্রশ্নের বিপরীতে বেশির ভাগ নাগরিক নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখছেন ‘হ্যাঁ’-‘না’ উত্তরে। আবার কেউ কেউ সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়ে বলছেন- ২৮ শে এপ্রিল! সে তো মেলা দেরি!! আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরের নির্বাচন নিয়ে নাগরিকদের সঙ্গে সরজমিন কথা বলে মিলেছে কিছু ‘উদাসীনতা’ আর কিছু ‘উৎকণ্ঠা’র আভাস। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু, আনিসুল হক, মাহি বি. চৌধুরী, জুনায়েদ সাকী সহ মোট ২১ জন প্রার্থী।
মিরপুর-১২। নির্বাচনের হাওয়া কেমন? এ প্রশ্নের জবাবে চা দোকানি সুমন বলেন, কোন নির্বাচন! ফের প্রশ্ন মেয়র ইলেকশনের কি অবস্থা? জবাব, আমি ক্যামনে বলবো?’ 
একই এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পঞ্চাশোর্ধ রফিক মিয়া সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক কথা। তিনি বলেন, ইলেকশনের এখনও কিছুইতো ফাইনাল হইলো না। শুধু টালবাহানা চলতেছে। এখন তো এক মাসের মামলা। আরও ১০-১৫ দিন গেলে ভাও বুঝা যাইবো। তাছাড়া, এখনও দল থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত হয় নাইতো। এখনতো নেতাগো তামাশা চলতেছে। 
বিবিএ পড়ুয়া জাহাঙ্গীর শামস নির্বাচনের হাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসলো। নাগরিক হিসেবে আমি ও আমার বন্ধুদের কাছে এটাই বড় স্বস্তির খবর। কে নির্বাচন করলো আর কে জিতলো- সেটা নিয়ে খুব একটা ভাবছি না। কারণ সবই এখন মন্দের ভালো। অন্যদিকে মিরপুর-১০ এর ফল বিক্রেতা সবুজের কাছে আসন্ন সিটি নির্বাচনের কোন গুরুত্বই নেই। তার ভাষায়, এইসবের খবর রাখি না। এখন আঙ্গুর ফলের চাহিদা বেশি। আপেল-কমলা কম চলে। মাল্টা বেচলে লাভ কম, তবে সহজে পচে না। আমার কাছে আছে এসব খবর। নির্বাচনের খবর রাখলেতো কেউ আমারে একটা ফলের বাগান করে দিবো না। গতকাল মিরপুর এলাকা সরজমিন ঘুরে দেখা যায় বেশির ভাগ মানুষই আসন্ন সিটি নির্বাচন নিয়ে বেশ উদাসীন কিংবা অনাগ্রহী। অনেকে সিটি নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী হলেও এ বিষয়ে কিংবা পছন্দের প্রার্থী নিয়ে অপরিচিত কারো সঙ্গে আলাপ করতে ইচ্ছুক নন। 
এদিকে মিরপুর এলাকা পেরিয়ে বনানী-গুলশান-নিকেতন এলাকায়ও মিলেছে প্রায় একই চিত্র। বনানী এলাকার তরুণ আর্কিটেক্ট সারোয়ার শুভ বলেন, এটি কাগজে কলমে অরাজনৈতিক নির্বাচন হলেও কার্যত রাজনৈতিক। এটা প্রতারণার মতোই। আমার মনে হয় এই বিষয়টির বৈধতা দেয়া খুব জরুরি। মানে নির্বাচনটা রাজনৈতিকই হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, এবার প্রার্থীদের মধ্যে বৈচিত্র্য আছে। আনিসুল হক এবং আব্দুল আউয়াল মিন্টু। দু’জনকেই নগর পিতা হিসেবে যোগ্য মনে হয় আমার কাছে। আমার ধারণা উত্তরে এই দু’জনকে ঘিরে ভালো লড়াই হবে। নিকেতন নিবাসী ব্যাংকার মোস্তফা কামালের ভাষ্য একটু অন্যরকম। তার মতে, প্রধানমন্ত্রীর পরিচালনায় সিটি নির্বাচন একটি সাজানো নাটক। যে নাটকের কয়েকটি দৃশ্যে ভুল করে অভিনয় করতে যাচ্ছে বিএনপি। সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে শ্যামলী রিং রোডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার বলেন ভিন্ন কথা। সিটি ইলেকশন আদৌ হবে কিনা- সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না আসলে আমি নিশ্চিত ছিলাম এই ইলেকশন সুষ্ঠুভাবে সঠিক সময়েই হইতো। এখন একটু টেনশনে আছি। আমার খালি মনে হচ্ছে যে কোন সময় সরকার এমন একটা ঘটনা ঘটাবে, যার ফলে ইলেকশন বাতিল হয়ে যাবে। এর সঙ্গে ঘুম-খুনের ঘটনাতো আছেই। দ্যাখেন শেষ পর্যন্ত কি হয়। মোহাম্মদপুর জাপান গার্ডেন সিটিনিবাসী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দাউদ হোসাইন বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগই ছিল না। তার আগের জাতীয় নির্বাচনে ইচ্ছে করে ভোট দিইনি। এই সিটি নির্বাচনেও ভোট দিবো না। এসব নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। মনে হয় আমার ভোট অর্থহীন। যেখানে আমার সমর্থনের কোন রিফলেকশন থাকবে না, সেখানে আমি কেন যাবো?            
রাজনীতির ময়দানে ঢাকা সিটি নির্বাচন উত্তাপ ছড়ালেও তা সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন প্রভাব ফেলেনি। তফসিল ঘোষণার আগেই উত্তর সিটির মতো প্রার্থীদের পোস্টার ও বিলবোর্ডে ছেয়ে যায় দক্ষিণ সিটি। এরপর নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপে পরে সেগুলো সরিয়ে নেয়া হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী প্রয়াত মেয়র হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন। আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী মো. সেলিম নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নে রয়েছে দোটানা। সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, দলের অর্থ সম্পাদক আবদুস সালাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, বিএনপিপন্থি শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া। এই অবস্থায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের কোন প্রভাব পড়েনি। নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী আজাদ নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত নন বলে জানান। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর ঢাকা প্রায় স্বাভাবিক হয়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না কেউ। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাহজালাল বলেন, শুনছি সামনে ভোট হবে। সবাই চায় সুষ্ঠুভাবে ভোট হোক। এখন পর্যন্ত ঠিক করিনি কাকে ভোট দেব। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরাফাত বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। এবারও দিতে পারবো কিনা সন্দেহে আছি। নির্বাচন নিয়ে এখন চিন্তা করছি না। শেষ পর্যন্ত দেখব। দেরিতে নির্বাচন হওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করে কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা জোনায়েদ হাবিব বলেন, এতদিন পর সরকার সিটি নির্বাচনে রাজি হয়েছে তার মানে এর মধ্যে সরকারের কোন চাল থাকতে পারে। বিএনপির একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন কেনার মধ্যেও সরকারের হাত থাকতে পারে। বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে সরকারের তফসিল ঘোষণা করেছে বলে তার বিশ্বাস। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৩ নং ওয়ার্ডের গৃহিণী  মনিরা আক্তার বলেন, এই নির্বাচন দুই দলের জন্য চ্যালেঞ্জ। তাদের ঝগড়ার কারণে আমাদের গত কয়েক মাস ভোগান্তি হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে নতুন করে আবার ঝামেলা হয় কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

Comments