জানাজার কোন রাজনীতি নেই। তবে বাংলাদেশের ইতিহাস আলাদা। এ ভূমে কখনও কখনও কোন কোন জানাজাও রাজনীতির ইতিহাস বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।


রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের অভিষেক হয়েছিল অনেকটাই আকস্মিক। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তার উচ্চারণও পূর্বপরিকল্পিত নয়। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে প্রাণ হারান তিনি। শাসক হিসেবে জিয়াউর রহমানের সমালোচনা থাকলেও ঢাকায় তার জানাজায় সে সময়কার বৃহত্তম জমায়েত বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়া পরিবারের ভূমিকা নিশ্চিত করে ফেলেছিল। মূলত জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করেই তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এগিয়ে গেছেন। কখনও তিনি প্রধানমন্ত্রী, কখনওবা বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসেছেন। যদিও এখন তার জীবনে ঘোর অমানিষা। ৩৩ বছর পর ঢাকায় আরেকটি জানাজা নিয়েও বিপুল আলোচনা চলছে। অবাক হলেও সত্য, জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর জানাজা নিয়েই এ আলোচনা। বিপুল জনগোষ্ঠী এ জমায়েতে হাজির হয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রায় সবাই বলছেন, লক্ষাধিক মানুষ এ জানাজায় অংশ নেন । রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ সত্য অস্বীকার করার জো নেই বাংলাদেশ এখন এক সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। তবে এই মহাসঙ্কটের সময় জনগণের আসলে তেমন কোন ভূমিকা নেই। তারা নিষ্পেষিত, নির্যাতিত। তারা মারা যাচ্ছেন। কখনও পেট্রলবোমায়, কখনও ‘বন্দুকযুদ্ধে’। জ্বলছে বাংলাদেশ, আগুনে পুড়ছে মানুষ। জনগণ রাজপথে নামলে শিকার হচ্ছেন নির্বিচার গুলির। আবার নিশ্চিত করেই পেট্রলবোমা আর ককটেলের সঙ্গেও সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততার সুযোগ নেই। এ দুঃসহ সময়ে আরাফাত রহমান কোকোর জানাজা সুযোগ হয়ে আসে তাদের সামনে। বিরোধী গোষ্ঠীর নিষ্পেষিত, অসহায় মানুষরা সুযোগ পান রাজপথে উপস্থিতির। যে সুযোগ তারা কাজে লাগান পুরোদমেই। এ যেন এক নীরব প্রতিবাদও। জিয়া পরিবারের প্রতি তাদের ভালবাসার প্রকাশও ঘটে এতে। যদিও আরাফাত রহমান কোকোর কোন রাজনীতি ছিল না। এ জানাজা কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন ভূমিকা রাখবে? পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রত্যক্ষ কোন ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা কম। তবে এ জানাজায় বিপুল উপস্থিতি ক্ষমতাসীনসহ সব মহলেই বিপুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এত কিছুর পরও বিএনপি জোটের প্রতি জনগণের সমর্থনের বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে এর মাধ্যমে। রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার মনে করেন, এ জানাজায় জনগণের উপস্থিতি এক ধরনের নিঃশব্দ প্রতিবাদ। তিনি বলেন, কোকোর জানাজায় জনগণ তাদের সংবাদটা পৌঁছে দিয়েছে, তারা মূলত চায় বর্তমান ফ্যাসিস্ট যে রাষ্ট্রব্যবস্থা, এখন যে অগণতান্ত্রিক সরকার, যেভাবেই হোক না কেন তাকে চলে যেতে হবে। জনগণের এ শক্তিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য বিএনপি নেতৃত্বেরও সমালোচনা করেন তিনি। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ রাজনীতিকে গঠিত করার যে প্রয়োজনটা ছিল, সে কথাগুলো আমরা বুদ্ধিজীবীরা বিএনপি নেতাদের পরিষ্কার করে বোঝাতে পারিনি। তবে জনগণ কিন্তু আমাদের সঙ্গে আছে।

Comments