তাহলেতো জামায়াত-শিবির ক্ষমতায় আসবে ?
সুজাতা সিং ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় পররাষ্ট্র সচিব যাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। ২৮ বছর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী চলমান সংবাদ সম্মেলনে বরখাস্ত করেছিলেন এপি ভেঙ্কটেশ্বরণকে। মেয়াদ শেষ হওয়ার সাত মাস আগেই সুজাতা সিংকে কেন আকস্মিকভাবে বরখাস্ত করা হলো এ নিয়ে নানা জল্পনা। সুজাতা সিং সোনিয়া গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং জয়শঙ্করকে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিয়োগ দিতে চাইলেও সোনিয়া গান্ধীর ইচ্ছায় সুজাতা সিং নিয়োগ পান। কেউ কেউ বলছেন, গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই সুজাতা সিংকে বিজেপি সরকার বরখাস্ত করেছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এ বরখাস্তের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। দলটি বলছে, দেবযানীর ঘটনার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শক্ত ভূমিকা রাখার জন্যই তাকে এখন পদ হারাতে হয়েছে। তবে বিজেপির পক্ষ থেকে এসব সমালোচনা নাকচ করে দেয়া হয়েছে। বিজেপির মুখপাত্র বলেছেন, এমন বরখাস্তের ঘটনা নতুন ঘটেনি। কাউকে বরখাস্ত অথবা নিয়োগ করার ক্ষমতা সরকারের রয়েছে।
সুজাতা সিং বাংলাদেশেও বিপুল আলোচিত, সমালোচিত। তার ভূমিকার কারণেই প্রধান বিরোধী দলসহ অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন আয়োজনের পথ সুগম হয়েছিল। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি একতরফা নির্বাচনের পক্ষে তার অবস্থান পরিষ্কার করেন। এমনকি সেসময় জাতীয় পার্টিকেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য তিনি চাপ দেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে সুজাতা সিং তাকে বলেছিলেন, তাহলেতো জামায়াত-শিবির ক্ষমতায় আসবে। সেসময় ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হওয়া জরুরি। এটি অবশ্যই স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ হতে হবে। সেটি সব দলের অংশগ্রহণে হবে না অধিক সংখ্যক দলের অংশগ্রহণে হবে তা বাংলাদেশের জনগণই নির্ধারণ করবে। ভারত প্রত্যাশা করে এখানে সহিংসতামুক্ত একটি নির্বাচন হবে। যাতে অধিক সংখ্যক দল অংশ নিবে। নির্বাচনের আগে ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা ভারত সফরে যান। সেসময় তিনি সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সুজাতা সিং অত্যন্ত শীতল ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন ভূমিকাকে নিরুৎসাহিত করেন তিনি। এদিকে, সুজাতা সিংয়ের বরখাস্তের খবর বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করেছে। ভারতে পররাষ্ট্র সচিবের পদে নতুন কেউ দায়িত্ব পেলে ঢাকার তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন জানানোর রেওয়াজ রয়েছে। গতকালের নাটকীয় এ পরিবর্তনের পর ঢাকার তরফে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো সুজাতার বরখাস্তের সংবাদ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের প্রতিক্রিয়া জানান।
সাউথ ব্লক সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মেদির সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সম্পর্ক ভাল ছিল না। সুজাতা সিংয়ের কাজ নিয়েও অসন্তুষ্ট ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রেসিডেন্ট ভবনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে সুজাতাকে কোন ভূমিকাতেই রাখা হয়নি। অথচ বিশ্বে ভারতের উপস্থিতি ও অবস্থান মজবুত করতে পররাষ্ট্র সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্ভরযোগ্য কাউকে বসাতে চাইছিলেন মোদি। চীনসহ এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক বাড়ানোর কাজ দ্রুত গতিতে করার তাগিদেই জয়শঙ্করকে এনে সেই প্রয়োজন পূরণ করলেন তিনি। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত হিসেবে অন্য সব বিষয়ের সঙ্গে ওবামার ভারত সফরের প্রস্তুতি পর্বও ভালই সামলান জয়শঙ্কর। এর আগে বছর চারেক চীনেও রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। জাপান, সিঙ্গাপুর, চেক প্রজাতন্ত্রসহ বহু দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
Comments
Post a Comment