মিশন ৪৪ আসলে কী?

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির (রাজ্য বিধানসভা ও লোকসভা) বিজয় এবং একটি স্থিতিশীল সরকার গঠনকে হিন্দু চরমপন্থীরা বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে দেখছে। এই গেরুয়া সাম্প্রদায়িক বাহিনীর (জাফরান বিগ্রেড) আকাক্সা কিন্তু এখানে এসেই থমকে যায়নি। তারা এখন মিশন ৪৪-এর এজেন্ডার বাস্তবায়ন নিয়ে ছক কষছে, যদিও বিষয়টি এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে। মিশন ৪৪ আসলে কী? এবং কেনই বা বিজেপি এর পেছনে ঊর্ধ্বশ্বাসে লেগে রয়েছে? কেন পত্রিকার পাতা জুড়ে এর এত বিজ্ঞাপনের ঘন ঘটা? কেন বিভিন্ন মিডিয়াতে এত ব্যাপক প্রচারণার কোলাহল? এমনকি সোশ্যাল সাইটগুলোতেও কেন এর বিরামহীন প্রচার চলছে? মিশন ৪৪-এর মূল লক্ষ্য হলো কাশ্মীর। ভারতের সংবিধানসম্মতভাবে কাশ্মিরের জনগণ যে অধিকার ভোগ করে তা থেকে তাদের বঞ্চিত করা। আর মূল উদ্দেশ্য কাশ্মিরের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ধূলিসাৎ করা। এ জন্য দরকার কাশ্মিরের বিধানসভার মোট ৮৭টি আসনের মধ্যে যেকোনোভাবে কমপক্ষে ৪৪টি আসন দখল করা। কাশ্মিরের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় বিজেপি তাদের এই উচ্চাভিলাষী আকাক্সার ঘোষণাটি দেয়। অন্য দিকে মিশন ৪৪ হলো ভারতজুড়ে হিন্দুত্ববাদের নব রূপায়ন করার একটি অংশ। ক্ষমতাসীন দলটি এ জাদুকরী সংখ্যাটি অর্জন করে জম্মু ও কাশ্মিরে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। উপরের বিবৃতি বাস্তবায়নে বিজেপির পরিকল্পনা হলো তারা মুসলিম সংখ্যাগুরু রাজ্যটিতে হিন্দু মুখ্যমন্ত্রী বসতে চায়। এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা চায় জম্মু ও লাদাখ অঞ্চলের হিন্দু ও বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার নিশ্চয়তা এবং তারা চায় মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলো যেন নির্বাচন বয়কট করে। মিশন ৪৪ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তারা একটি ত্রিমুখী নীতি প্রয়োগ করছে, যার অংশ হিসেবে তারা বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে অসমভাবে ত্রাণ বণ্টন করছে। কাশ্মিরে খাদ্য সাহায্যকে তারা ঘুষ হিসেবে ব্যবহার করছে বর্তমান নির্বাচনে বিজয়ের জন্য। এ ছাড়াও তারা একশ্রেণীর আলেম-ওলামা এবং কিছু মুসলিম প্রার্থীকে ব্যবহার করছে যারা স্থানীয়দের প্ররোচিত করছে বিজেপিকে ভোট দেয়ার জন্য জেনারেল অব: আতা-উল-হোসাইনকেও একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। এত কিছু করেও তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি; সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে তারা প্রি-পেইড কম্পিউটারাইজড মেশিন ব্যবহার করছে, যেখানে আগে থেকেই নির্বাচনের ফলাফল প্রোগাম করা আছে। কাশ্মিরের পাঁচ ধাপবিশিষ্ট নির্বাচন পদ্ধতির প্রথম ধাপ সমাপ্ত হয়েছে, যেখানে বিজেপি তেমন কোনো সুবিধাই করতে পারেনি। বাস্তবসম্মতভাবে মিশন ৪৪-কে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, কাশ্মির উপত্যকার ৮৭টি আসনের মধ্যে এমন ৪৬টি আসন রয়েছে যা  মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর একটিও দখল করা বিজেপির জন্য প্রায় অসম্ভব। কিন্তু দলটি প্রকৃত পক্ষে নির্ভর করছে কাশ্মির উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং স্বাধীনতাকামী শক্তির নির্বাচন বয়কটের ওপর। বিজেপির কেবল ুদ্র সম্ভাবনা রয়েছে উপত্যকার অল্প কয়েকটি আসন জয়ের। সেটিও শুধু তখনই সম্ভব, যদি কি না সেখানকার স্বাধীনতাকামী মুসলিমরা নির্বাচন বয়কট করে এবং সেখানকার কাশ্মিরি পণ্ডিত (অভিবাসী) শ্রেণীর প্রত্যেকটি লোক বিজেপির পক্ষে ভোট দেয়। সেটির সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ, কারণ কাশ্মিরি পণ্ডিত শ্রেণীর লোকেরা আবার বিজেপির পৃষ্ঠপোষকতা করেন না। ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী দলের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেদের পক্ষে ভোট আদায়ের জন্য হেন কোনো কাজটি নেই, যা তিনি করছেন না। এসব কিছুই করা হচ্ছে শুধু সংবিধান থেকে একটি অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মিরকে ভারতের অংশ করে নেয়ার উদ্দেশ্যে। এই অনুচ্ছেদটি হলো ৩৭০। ৩৭০ নং অনুচ্ছেদ মোতাবেক কাশ্মির হলো ভারতীয় ইউনিয়নের একটি বিশেষ অংশ যা কি না অন্যান্য ভারতীয় নাগরিকদের বিরত রাখবে কাশ্মিরে বসতি স্থাপন করা থেকে, তারা কাশ্মিরে কখনো নাগরিক অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারবে না। এই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ফলে মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মিরের জাতীগত সত্তা রক্ষা পাবে কাশ্মিরে বিজেপির এ স্বপ্ন এখনো একটা অলীক কল্পনা হয়ে রয়েছে।  সূত্র : ওয়েবসাইট। 

Comments