মিসরের পদচ্যুত নেতা হোসনি মোবারক ও তাঁর সাতজন শীর্ষ কর্মকর্তা ২০১১ সালের গণ-আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন।

হোসনি মোবারকহোসনি মোবারক
গতকাল শনিবার দেওয়া এক রায়ে আদালত এই সাবেক স্বৈরশাসক ও তাঁর দুই ছেলেকে আরেকটি দুর্নীতির অভিযোগ থেকেও রেহাই দিয়েছেন। তবে মোবারক ছাড়া পাচ্ছেন না। কারণ অন্য একটি দুর্নীতি মামলার রায়ে তিনি তিন বছরের সাজা খাটছেন। খবর এএফপি ও আল-জাজিরার।
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হন তিন দশকের শাসক হোসনি মোবারক। ওই আন্দোলনের সময় অন্তত ৮৪৬ জন বিক্ষোভকারী প্রাণ হারান। শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভকারীদের হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে ২০১১ সালের ২৪ মে মোবারককে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর আদেশ দেওয়া হয়। পরে বিচারে ২০১২ সালের ২ জুন তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ওই সময় পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। মুরসি নিজেও পরের মাসে আরেক আন্দোলনের জের ধরে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন। পরে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে আপিল কোর্ট মোবারকের ওই দণ্ডাদেশ প্রত্যাখ্যান করে মামলাটির পুনর্বিচার করার নির্দেশ দেন।
গতকাল দেওয়া রায়টি ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল গত সেপ্টেম্বর মাসেই। তবে আদালতের মুখ্য বিচারক মাহমুদ কামেল আল-রাশিদি মামলার রায়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের পক্ষে সব নথি লিপিবদ্ধ করা শেষ হয়নি, এমন কথা বলে তখন তা স্থগিত করেন। 
গতকাল দেওয়া রায়ে বিচারক রাশিদি বলেন, বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রথমে মোবারকের নিরাপত্তাপ্রধানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। পরে এতে মোবারকের নামও যুক্ত করা হয়, যা ঠিক হয়নি। এ কারণেই তাঁকে হত্যার অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
পদচ্যুত মোবারক গতকাল দাবি করেন, তিনি কোনো ভুল করেননি। রায়ের পর হাসপাতাল থেকে টেলিফোনে বেসরকারি টিভি চ্যানেল সাদা এল বালাদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি আদৌ কোনো ভুল করিনি।’ ২০১২ সালের প্রথম মামলার রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি যখন প্রথম রায়টা শুনি তখন হেসেছিলাম। বলেছিলাম, হাঁ!’
নিজের ৩০ বছরের শাসনের প্রশংসা করেন মোবারক। দৃশ্যত অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘শেষ ১০ বছরে আগের ২০ বছরের চেয়ে বেশি ফল পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল টেলিফোনসহ অন্য কিছু বিষয়। তারপর তারা আমাদের বিরুদ্ধে চলে গেল।’
মোবারকের শাসনকালে ব্যাপক পুলিশি নির্যাতন ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। বিশেষ করে শেষ ১০ বছরে।
একই মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া মোবারকের অন্য সাত শীর্ষ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাবিব আল-আদলি। আর যে দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রেসিডেন্টকে আদালত অব্যাহতি দিলেন, সেটি ছিল ইসরায়েলে গ্যাস রপ্তানি বিষয়ে। ওই মামলায় তাঁর দুই ছেলে আলা ও গামালও আসামি ছিলেন। তাঁদের সবাইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় মোবারকসহ অন্য আসামিরা কাঠগড়ার ভেতরে কাচে ঘেরা স্ট্রেচারে শুয়ে ছিলেন। বিচারক যখন রায় পড়ছিলেন, তখনই আদালতকক্ষের ভেতরে তাঁর সমর্থকেরা আনন্দ-উল্লাস শুরু করেন। তাঁরা স্লোগান দিয়ে বলতে শুরু করেন, ‘সত্য বলুন, ভয় পাবেন না, মোবারক নির্দোষ’। 
তবে কায়রোর উপকণ্ঠের এক পুলিশ একাডেমিতে অবস্থিত আদালতের বাইরে ছিল একেবারে ভিন্ন পরিবেশ। সেখানে রায় শুনতে জড়ো হয়েছিলেন মোবারকবিরোধী সেই ১৮ দিনের বিপ্লবের সময় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। রায় শুনে তাঁরা মর্মাহত হন। বিপ্লবের সময় ছেলেকে হারানো মোস্তফা মুরসি বলেন, ‘এটা একটা নিপীড়নমূলক রায়। আমার সন্তানের রক্ত বৃথা গেছে।’ 
ফেব্রুয়ারি ২০১১: গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত 
২৪ মে ২০১১: বিক্ষোভকারীদের হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে বিচারের আদেশ 
জুন ২০১২: যাবজ্জীবন কারাদণ্ড 
জানুয়ারি ২০১৩: দণ্ডাদেশ প্রত্যাখ্যাত। পুনর্বিচারের নির্দেশ
নভেম্বর ২০১৪: অভিযোগ থেকে অব্যাহতি

Comments