অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই জানালেন দেশে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের পরিস্থিতি ভালো নয়। কেন ভালো নয়, সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী এক জায়গায় বসেই একেকবার একেক কথা বলেছেন।


সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জুট গুডস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেজিএ) সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়।’
প্রথমে অর্থমন্ত্রী বলেন, হয়তো অনিশ্চয়তার কারণে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ হচ্ছে না। তবে আগামী দিনে বিনিয়োগ বাড়বে। সাংবাদিকেরা জানতে চান আগামী দিনে কীভাবে বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীরা তাহলে এখন কিসের জন্য অপেক্ষা করছে। অর্থমন্ত্রী বলেন,‘আমি জানি না।’
বিনিয়োগ বোর্ডের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বোর্ডে ৩৪৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান মোট ২০ হাজার ৪৯ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন করেছে। তবে আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন বেড়েছে ২৫ শতাংশ। তবে আলোচ্য সময়কালে ঠিক কী পরিমাণ প্রকৃত বিনিয়োগ হয়েছে, তার কোনো উপাত্ত মেলেনি।
অবশ্য আলোচ্য সময়ে মোট নিবন্ধিত ৩৪৫টি বিনিয়োগ প্রস্তাবের মধ্যে ৩১৮টি হলো স্থানীয় বিনিয়োগ, যার অর্থমূল্য ১৮ হাজার ৩৩৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৫২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) দেশে ২৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি।
বিনিয়োগ না হয়ে বরং টাকা পাচার হচ্ছে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী সরাসরি কোনো জবাব দেননি। তবে তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তো বলেছেই বিভিন্ন দেশে বাড়িটাড়ি কিনেছেন অনেকে।
পাচার যদি না হয় তাহলে দেশে বিনিয়োগ হবে না কেন বা বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর কোনো চিন্তা হয় কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চিন্তা করে তো কোনো লাভ নেই। এগুলো নিয়ে কথা না বলাই ভালো। পাচার নিয়ে তদন্ত করাও কঠিন। আইনি কিছু ফাঁকফোকর ছিল, শুদ্ধ করার ব্যবস্থা করেছি।’
অনিশ্চয়তার বিষয়টির আরেকটু ব্যাখ্যা চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো অনিশ্চয়তা নেই। সরকার ভালো কাজ করছে। খালেদা জিয়া যে আন্দোলন করছে তা বোগাস।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বক্তব্য চলছে, চলতেই থাকবে। এতে কিছুই হবে না। সরকার খুব ভালোভাবেই দেশ চালাচ্ছে।’
জুট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের আগে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে আরেকটি বৈঠক করেন মুহিত। এ বৈঠকে কী আলোচনা হলো, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখানে ১০০ কোটি ডলারের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে আইএফসির। সংস্থাটি বেসরকারি খাতের উন্নয়নে বেশি উৎসাহী।’ বিদ্যুৎ ও রেলপথে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ার সুযোগ রয়েছে বলে সংস্থাটি পরামর্শ দেয়। বিষয়টি বোঝানোর জন্য বিদ্যুৎ ও রেল খাতের দুটি উদাহরণ দেন অর্থমন্ত্রী।
মুহিত বলেন, ‘ধরা যাক, একটি বিদ্যুৎ প্লান্টে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, এর সঙ্গে আরও ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন হতে পারে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের মাধ্যমে। প্রয়োজনে বাড়তি ১০০ মেগাওয়াটের জন্য আলাদা হিসাব থাকবে।’
আইএফসির পরামর্শের কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘রেলপথে বেসরকারি খাতের কোনো বিনিয়োগই নেই। অথচ রেলের অনেক স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আসতে পারে।’
পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজেজিএ অর্থমন্ত্রীর কাছে চার দফা দাবি জানায়। এগুলো হচ্ছে পাটকলগুলোর পাশাপাশি তাদেরও নগদ সহায়তা পাওয়া দলে অন্তর্ভুক্ত করা, জাহাজীকরণের আগে তৈরি পোশাক খাতের মতো তাদের জন্যও ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা, বার্ষিক লাইসেন্স ফি কমানো এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) হওয়ার ব্যাপারে তাদেরও বিবেচনায় রাখা।
সংগঠনের নেতারা আরও বলেন, আদমজী জুট মিল বন্ধ হওয়ার পর ভারতীয় প্রপাগান্ডায় পাট রপ্তানিতে বাংলাদেশ পেছনে পড়ে গেছে। সরকার কিছু নীতি-সহায়তা দিলে তা পুনরুদ্ধার হওয়া সম্ভব। পাটজাত পণ্য রপ্তানি হলেও অনেক সময় টাকা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা। এ ব্যাপারে বৈদেশিক মিশনগুলোর কাছে সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায় না। বাধ্যতামূলক করার পরও চাতালকল মালিকদের অপপ্রচারের কারণে পাটের বস্তা ব্যবহার হচ্ছে না বলে অর্থমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দেন তাঁরা।
অর্থমন্ত্রী বিজেজিএর নেতাদের দাবি ও অভিযোগগুলো পূরণের আশ্বাস দেন।
n বিনিয়োগ বোর্ডের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে কী পরিমাণ প্রকৃত বিনিয়োগ হয়েছে, তার কোনো উপাত্ত মেলেনি
n বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশে ২৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বে

Comments