চাঁদার দাবিতে বাড়ি থেকে ধরে এনে বেঁধে নির্যাতন ও নগ্ন ছবি তুলে ইন্টারনেটে দেয়ার হুমকির কারণে গত ছয়দিন থেকে এই প্রবাসী পরিবার নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লিটন ও তার অনুসারী নেতাকর্মীদের হাত থেকে নির্যাতিত পরিবারকে বাঁচাতে সরকারের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন এক সৌদি প্রবাসী।
সাত লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে বাড়ি থেকে ধরে এনে বেঁধে নির্যাতন ও নগ্ন ছবি তুলে ইন্টারনেটে দেয়ার হুমকির কারণে গত ছয়দিন থেকে এই প্রবাসী পরিবার নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নলডাঙ্গার বিপ্রবেলঘড়িয়া মাষ্টার পাড়ার সোনা উল্লাহ বাতেনের ছেলে ১৪ বছর থেকে সৌদি আরব প্রবাসী জহুরুল ইসলাম। নলডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম লিটন ও তার অনুসারীরা দীর্ঘদিন থেকে তার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। দুই বছর আগে তিনি ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েও ছিলেন। এবার ৪০ দিনের ছুটিতে দেশে আসার পর পুনরায় তারা চাঁদা দাবি করতে থাকে। চাঁদা না দেয়ায় গত সোমবার বিকেলে তার বাড়ির তিনতলা থেকে একদল সন্ত্রাসী খালি গায়ে তাকে ধরে নিয়ে এসে বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে মেহগনি গাছের সাথে বেঁধে প্রকাশ্যে মারপিট করে নগ্ন ছবি তোলে। এ সময় তারা তিনশত টাকার সাদা স্ট্যম্পে জোর করে তার স্বাক্ষর নেয়।
ধরে আনার সময় তার স্ত্রী লাভলী বেগমকে মারপিট করে সন্ত্রাসীরা নগদ দেড় লাখ টাকা ও সোনার গহনা ছিনিয়ে নেয়।
একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা তাকে নলডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম লিটনের চেম্বারে নিয়ে গিয়ে মারপিট করে সাত লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে নগ্ন ছবি কোনো মেয়ের সাথে জুড়ে দিয়ে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
খবর পেয়ে তািনক নলডাঙ্গা থানা পুলিশ লিটনকে আটক করে। তার অনুসারীরা এ সময় পুলিশের কাছ থেকে লিটনকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে।
এ ঘটনায় তার বাবা সানা উলস্নাহ বাতেন নলডাঙ্গা থানায় যুবলীগ নেতা লিটন, তার অনুসারী রফিক, আবুল, ফিরোজ, আলমগীর, শহীদুল, আতাউর, রুবেল ও ইমনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করলে তারা আরো প্তি হয়ে ওঠে।
মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত বাদিকে এসব সন্ত্রাসীরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ঘটনার পর থেকে প্রবাসী জহুরুল ইসলাম বাড়িঘর ছেড়ে স্ত্রী সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে নিজের জেলা ছেড়ে অন্য জেলায় গিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। তার মেয়ে রিতা ও সুরাইয়া জান্নাতের স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে।
জহুরুল ইসলাম আশংকা করছেন তিনি সৌদি আরব চলে গেলে তার পরিবারকে হত্যা করা হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে তার বাবা মা স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জহুরুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৪ সালে তিনি অভাবের কারণে নাটোর শহরে রিক্সা চালাতেন। পরে ৮ বছর মালোয়েশিয়া এবং গত ১৪ বছর সৌদি আরব থেকে অনেক অর্থ উপার্জন করেছেন। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর পাশাপাশি তিনি এলাকার মসজিদ, মাদরাসা, গোরস্থান, মক্তব ও এতিমখানার উন্নয়ন এবং গরীব মেয়েদের বিয়েতে তিনি নিয়মিত অর্থ সহযোগিতা দিয়ে থাকেন।
অথচ এসব সন্ত্রাসীরা তাকে নিজের সন্তানের সামনে এভাবে নির্যাতন করে একজন বাদে সকলে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে এসব সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও তার পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেছেন।
নলডাঙ্গা থানার ওসি আসলাম উদ্দিন বলেছেন, মামলা তুলতে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জেনেছেন, এ বিষয়ে নিরাপত্তা চেয়ে জহুরুল ইসলামের বাবা থানায় জিডি করেছেন বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, ছিনতাই অপহরন ও চাঁদাবাজীর ১০ মামলায় অভিযুক্ত লিটনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার বাসুদেব বণিক বলেছেন, অভিযুক্ত সকলকে আটকের জোর প্রচেষ্টা চলছে। প্রবাসীর পরিবারকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেয়া হবে।

Comments