একটা গোল পাবেন না মেসি? আসলেই পেলেন না। শুধু মেসি কেন, সেদিন মালাগার গোলে কোনো শটই নিতে পারলেন না বার্সেলোনার কোনো খেলোয়াড়! অপেক্ষা বাড়ল আরও। পরশু ন্যু ক্যাম্পে গ্রানাডার বিপক্ষে ম্যাচটার ঘণ্টা খানেক পেরিয়ে গেছে। নেইমারের জোড়া গোল আর রাকিটিচের গোলে বার্সেলোনা এগিয়ে ৩-০ ব্যবধানে। মেসি দারুণ খেলছেন, রাকিটিচের গোলটা বানিয়েও দিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজে যে গোল করতে পারছেন না! অপেক্ষা কি তবে আরও দীর্ঘায়িত হবে?

হ্যাটট্রিক করেছেন একজন, অন্যজন জোড়া গোল। জমে উঠেছে বার্সেলোনায় মেসি-নেইমার যুগলবন্দী। তবে ক্যারিয়ারে ৪০০ গোলের মাইলফলক ছোঁয়ায় পরশু গ্রানাডার বিপক্ষে ম্যাচের আলোটা থাকল মেসির ওপর l ফেসবুকদিন গোনা শুরু হয়েছিল ২১ সেপ্টেম্বর থেকেই। লা লিগায় লেভান্তের বিপক্ষে ম্যাচে সেদিন ক্যারিয়ারের ৩৯৯তম গোলটি করেছিলেন লিওনেল মেসি। ম্যাচে তখন ৭৭ মিনিটের খেলা চলছে। বাকি সময়ে আর একটা গোল পেয়ে গেলেই ৪০০ হয়ে যায়। হলো না।

তাতে কী! পরের ম্যাচ মালাগার বিপক্ষে। ৯০ মিনিটে বুঝি একটা গোল পাবেন না মেসি?
আসলেই পেলেন না। শুধু মেসি কেন, সেদিন মালাগার গোলে কোনো শটই নিতে পারলেন না বার্সেলোনার কোনো খেলোয়াড়! অপেক্ষা বাড়ল আরও।

পরশু ন্যু ক্যাম্পে গ্রানাডার বিপক্ষে ম্যাচটার ঘণ্টা খানেক পেরিয়ে গেছে। নেইমারের জোড়া গোল আর রাকিটিচের গোলে বার্সেলোনা এগিয়ে ৩-০ ব্যবধানে। মেসি দারুণ খেলছেন, রাকিটিচের গোলটা বানিয়েও দিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজে যে গোল করতে পারছেন না! অপেক্ষা কি তবে আরও দীর্ঘায়িত হবে?
অবশেষে ৬২ মিনিটে মেসির অপেক্ষা ফুরাল। ডান পাশ থেকে দানি আলভেসের দারুণ ওঠানো ক্রস, দৌড়ে এসে তাতে হেড করলেন মেসি। বল গ্রানাডার জালে। ৪০০তম গোলের দেখা পেলেন লিওনেল মেসি।
এরপর ৪০১ নম্বর গোলটাও হলো। আর মাত্র ৪টি গোল করলে তেলমো জারাকে পেরিয়ে হবেন লা লিগার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতাও। পরশু নিজের দুই গোলের মাঝে নেইমারকে দিয়ে করালেন আরও একটা। লা লিগায় ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড পেলেন প্রথম হ্যাটট্রিকের স্বাদ। আগের ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোলে শট না নিতে পারার অবিশ্বাস্য অক্ষমতার জ্বালা জুড়াল বার্সেলোনা গ্রানাডাকে আধডজন গোল দিয়ে। একই সঙ্গে এ মৌসুমে লা লিগায় কোনো গোল না খাওয়ার রেকর্ডটাও থাকল। তবে এসব ছাপিয়ে ম্যাচ শেষে সব আলো থাকল মেসির ওপরই। এ যে তাঁর দারুণ এক অর্জনের দিন। যে অর্জনের সাক্ষী হয়ে উচ্ছ্বসিত বার্সেলোনা কোচ লুইস এনরিকেও, ‘আমার প্রজন্মের কেউ এমনকি স্কুলে, রাস্তায়, কোথাও ৪০০ গোল করতে পারেনি। আমার তো মনে হয় মাঠে আমাদের সবার গোলগুলো যোগ করলেও ৪০০ হবে না! তার যেন পায়ে জাদু আছে। ও মনে-প্রাণে ফুটবল ভালোবাসে।’
যাঁকে নিয়ে এমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা, সেই মেসির অনুভূতিটা কেমন? ম্যাচের পর ফেসবুকে ভক্তদের সঙ্গে আনন্দটা ভাগাভাগি করেছেন বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড, ‘আমি কখনোই ভাবিনি এমন কিছু অর্জন করতে পারব। বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার হয়ে ৪০০ গোল করার পর যাঁরা আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আমি আরও বড় অর্জনের জন্য কঠিন পরিশ্রম করে যাব।’
কয়েক দিন আগে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৫-১ গোলে ম্যাচ হারার পর এলচে কোচ ফ্রান এসক্রিবা রোনালদোকে তুলনা করেছিলেন বাস্কেটবল কিংবদন্তি মাইকেল জর্ডানের সঙ্গে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে সে প্রসঙ্গ উঠতেই এনরিকে বললেন, ‘রোনালদো যদি জর্ডান হয়, তাহলে মেসি হচ্ছে উইল্ট চেম্বারলেইন (পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের কিংবদন্তি বাস্কেটবল খেলোয়াড়), যিনি এক ম্যাচেই ১০০ স্কোর করেছিলেন। আমি মেসিকেই বেছে নেব।’ এই মৌসুমে মেসিই বার্সেলোনার একমাত্র খেলোয়াড়, যাঁকে এনরিকে প্রতিটি ম্যাচেই শুরু থেকে খেলিয়েছেন। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড ফিট থাকলে আপাতত যে এই দর্শন থেকে সরে আসার কোনো সম্ভাবনাও নেই সেটাও বোঝা গেল বার্সেলোনা কোচের কথা শুনে, ‘আমি একবার ভেবেছিলাম তাকে উঠিয়ে নেব। কিন্তু ওর খেলা দেখাটা এত আনন্দের যে রেখেই দিলাম।’ এএফপি, গোলডটকম, এএস।
                         গোল        ম্যাচ
লা লিগা               ২৪৮     ২৮৩
কোপা ডেল রে        ২৯       ৪৪
চ্যাম্পিয়নস লিগ       ৬৭       ৮৭
স্প্যানিশ সুপার কাপ   ১০        ১১
ইউরো সুপার কাপ      ১          ৩
ক্লাব বিশ্বকাপ            ৪          ৪
আর্জেন্টিনা              ৪২       ৯৩
মোট              ৪০১      ৫২৫

Comments