গাজা তার রক্ত, দৃঢ়তা ও প্রতিরোধের শক্তি দিয়ে অবরোধ ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’।
ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপপ্রধান ইসমাঈল হানিয়া বলেছেন, ‘গাজা তার রক্ত, দৃঢ়তা ও প্রতিরোধের শক্তি দিয়ে অবরোধ ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’। গত সোমবার বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে এক বক্তৃতায় তিনি সঙ্কল্পের কথা ঘোষণা করেন।
আট বছর ধরে গাজার ওপর ইসরাইলের অসহনীয় কঠোর অবরোধ চলছে। এরপরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আরব বিশ্ব এ অবৈধ অবরোধের অবসান ঘটাতে কিছুই করেনি। আল আকসা টেলিভিশনে বক্তৃতাকালে হানিয়া দৃঢ়তার সাথে বলেন, গাজার ফিলিস্তিনিরা তাদের এ অবস্থান থেকে এক বিন্দুও পিছিয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তিনি ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের দাবির প্রতি দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তা হলো ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ, সব ধরনের অবরোধ প্রত্যাহার, ২০১১ সালে বন্দিবিনিময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত সব বন্দীকে মুক্তিদান এবং আর ইসরাইলি আগ্রাসন হবে না তার গ্যারান্টি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘এগুলো আন্তর্জাতিক আইন ও পূর্বেকার চুক্তির আলোকে অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত মানবিক দাবি’। হানিয়া গাজায় রক্তপাত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এর জনগণের দাবির প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য স্বাধীন জাতিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘গাজায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মোকাবেলায় অসমর্থ হয়ে ইসরাইল নিরীহ বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে’।
প্রতিরোধ লড়াই সম্পর্কে হানিয়া বলেন, ‘প্রতিরোধ লড়াই ও জাতীয় ঐক্যেই ফিলিস্তিনিদের দাবি অর্জিত হবে।গাজা উপত্যকায় আরেকটি ইসরাইলি সামরিক অভিযান চলছে। এটাই প্রথম হামলা নয় এবং এই অঞ্চলের রাজনৈতিক সমীকরণ না বদলালে এটা শেষ হামলাও হবে না। অতীতে গাজায় প্রতিটি ইসরাইলি হামলার সময় অনেক সামরিক ল্য ঘোষিত হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় এবার ‘অপারেশন প্রটেকটিভ এজ’ ভিন্ন প্রোপটে পরিচালিত হচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোটামুটিভাবে অনেক নীরস ও জটিল এবং এগুলো বৃহত্তর কৌশলের অংশ হওয়ায় তা বর্তমান যুদ্ধেই কেবল সীমিত থাকছে না। তবে সেগুলো এই অভিযানে ইসরাইলের ল্য নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
রাশিয়ার ভূমিকা বাড়ার কারণে বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্রে স্পষ্ট পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। সিরিয়া সঙ্কটের ব্যাপারে মস্কোর মৌলিক অবস্থান এবং ইউক্রেন ও ক্রিমিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্পষ্ট বিভ্রান্তিমূলক ভূমিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ম্লান হতে থাকায় রাশিয়ার রাজনৈতিক গুরুত্ব আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
চীন মধ্যপ্রাচ্যে তার অবস্থান ও ভূমিকা পরিবর্তন করে প্রকাশ্যে আসা থেকে দূরে থেকে চুপিসারে নিজের স্বার্থ বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেছে। সিরীয় সরকারের প্রতি চীনের প্রকট সমর্থনের কারণে এই অঞ্চলে তার কমতে থাকা জনপ্রিয়তা যাতে আর না কমে সে জন্য এটাকেই মনে করা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বিকল্প।
আঞ্চলিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, আরব বসন্ত এখনো যখন সব পর্যবেককে বিস্মিত করে যাচ্ছে, তখন ইসরাইলের এই যুদ্ধ হুমড়ি খেয়ে এসে পড়ল। মিসরে বাধ্য হয়ে এবং তিউনিসিয়ায় স্বেচ্ছায় মুসলিম ব্রাদারহুডের পতন, সিরিয়ার সঙ্কট তীব্র হওয়া এবং ইরাক, ইয়েমেন ও লিবিয়ায় নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হওয়ার মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে এই হামলাটি পরিচালিত হচ্ছে। অন্য দিকে ইরান আন্তর্জাতিক চাপ প্রশমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তার পারমাণবিক ফাইল নিয়ে কূটনৈতিক প্রয়াস সফলতার সাথে এগিয়ে নিতে সম হয়েছে।
ইসরাইলে মতাসীন জোটে টালমাটাল অবস্থা প্রবল অভ্যন্তরীণ সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ ও অর্থনৈতিক জটিলতার কারণে অনেক ইসরাইলি বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ জোরালো ভাষায় বর্তমান সরকারকে ভেঙে দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। গাজায় এই হামলাটি এমন এক সময়ে হয়েছে যখন ফিলিস্তিনেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেছে। সবেমাত্র হামাস ও ফাতাহর মধ্যে দীর্ঘ প্রতীতি সমঝোতা হয়েছে, ফিলিস্তিনি-ইসরাইলি আলোচনায় নতুন করে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে (এর জন্য ইসরাইলকেই ব্যাপকভাবে দায়ী করা হচ্ছে), তিন ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীকে হত্যা এবং এরপর ঠাণ্ডা মাথায় এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে খুন করার প্রোপটে পশ্চিম তীরে নতুন সহিংসতার মধ্যে এই হামলা শুরু হয়েছে।
ইসরাইলিরা বারবার ফিলিস্তিনি কর্তৃপকে হামাসের সাথে সমঝোতা করা কিংবা শান্তির কোনো একটিকে বেছে নিতে বলছে। এ কারণে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি এবং ঐক্য সরকার প্রতিষ্ঠায় ইসরাইল তার ক্রোধ গোপন করেনি। সে মধ্যপন্থী ফিলিস্তিনি কর্তৃপকে মারাত্মক পরিণতির হুমকি দিয়েছে। এর জবাবে তার ঘনিষ্ঠতম মিত্ররা ফিলিস্তিনের নতুন সরকারকে পরীা করা এবং তাকে একটি সুযোগ দিতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল।
ইসরাইলের আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা লণীয় মাত্রায় কমতে থাকার প্রোপটে নতুন ফিলিস্তিনি সরকারের সাথে কাজ করতে মার্কিন প্রশাসনের আগ্রহের প্রতি সমালোচনা করে দেশটি তার হতাশা প্রকাশ করেছে। শুনতে উদ্ভট শোনাবে যে, ইসরাইলি নেতারা বিশ্বব্যাপী ইসরাইলকে নিঃসঙ্গ করছে বলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপকে অভিযুক্ত করেছে।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, স্বীকার করতেই হবে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী সরকার ও জনগণের সাথে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করতে সফল হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তি বিষয়ে ফিলিস্তিনি ধারণার অনেক কাছাকাছি এসেছে এবং ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান ও পণ্য বর্জনের আন্তর্জাতিক প্রচারকাজ নাগরিকসমাজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেক বাড়ছিল।
এ প্রোপটে অভ্যন্তরীণ সঙ্কট এবং আন্তর্জাতিক চাপ থেকে উত্তরণের জন্য ইসরাইলি সরকারকে কোনো একটা পথ বের করে নিতেই হতো। ঘরোয়া সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সরকারগুলো অনেক সময়ই বাইরের দিকে নজর দেয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকেই এই কাজটি করে যাচ্ছে। যদিও এটাকে কোনোভাবেই মহৎ কৌশল হিসেবে অভিহিত করা যায় না। তাই একটি আন্তর্জাতিক সঙ্কট পাকিয়ে ফেলা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। তবে প্রশ্ন হলো মধ্যপ্রাচ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে সঙ্কটটি আসলে কী, কার এবং কোথায়?
ইসরাইলি সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের কাছে বেশ কয়েকটি বিকল্প ছিল। ইসরাইলে ইরানবিরোধী ভাবাবেগও ব্যাপক পরিমাণে রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জনমত জরিপে ইরানে একতরফা একের পর এক হামলা চালানোর সিসিফেনিয়ান পরিকল্পনার প্রতি ইসরাইলিদের আন্তরিক সমর্থন দেখা না গেলেও তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা চালানোর ব্যাপারে জনগণের মধ্যে বেশ আগ্রহ রয়েছে।
উত্তর ফ্রন্টের কথাও আসে। হিজবুল্লাহও ইসরাইলি নেতাদের জন্য ঘুমহীন রাতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তারা লেবাননি মিলিশিয়া গ্র“পটির কৌশলগত, অবস্থানগত ও সামরিক সামর্থ্য সম্পর্কে পূর্ণ অবগত রয়েছেন। অধিকন্তু ইসরাইলি সরকার এটাও জানে যে, সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর সম্পৃক্ততা এবং সেখানে তাদের তি সত্ত্বেও গ্র“পটি নিঃশেষ হয়ে যায়নি। ইসরাইলের উত্তর সীমান্তে চমকপ্রদ সামরিক হামলা চালানোর মতো অবস্থা তাদের এখনো রয়েছে।
ফলে বাকি থাকে ফিলিস্তিন। যে তিন বসতি স্থাপনকারীর হত্যা নিয়ে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত, অভিযোগ রয়েছে ‘প্রকৃতপ’ে তারা নিহত হয়েছে একটি সড়ক দুর্ঘটনায়; কিন্তু এই সত্য গোপন করে ফিলিস্তিনিদের হাতে নিহত হওয়ার ‘বানোয়াট’ কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে। ফলে ‘অপহরণ ও খুন’ করার ইসরাইলি সরকারের অভিযোগটি অপ্রাসঙ্গিক। প্রকৃত সত্য হলো ফিলিস্তিনিদের সাথে যুদ্ধ লাগাতে ইসরাইল অস্থির হয়ে পড়েছিল। সামরিক ও রাজনৈতিক পরিকল্পনাকারীরা জানতেন যে, ফিলিস্তিনি ফ্রন্টে যত রক্তরণই ঘটুক না কেন, তা তেমন আন্তর্জাতিক নিন্দা বা বড় ধরনের তির কারণ হবে না, বর্তমান আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিশৃঙ্খলার প্রোপটে এটা মিডিয়ার নজরেও তেমন আসবে না।
এ কারণে বসতি স্থাপনকারীদের হত্যার জন্য হামাসকে দায়ী করে ইসরাইল। ওই দায় হামাস এখনো দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে আসছে। ইসরাইল সরকার এই মৃত্যু থেকে ফায়দা উঠানোর আগেই কয়েকজন ইহুদি বসতি স্থাপনকারী এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে অপহরণ করে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারে।
ফলে গাজা উপত্যকায় পুরোমাত্রায় যুদ্ধ নামিয়ে দেয় ইসরাইল। ল্য হামাসকে লড়াইয়ে অবতীর্ণ করে তাকে নতজানু করা। অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটিতে ইসরাইলি হামলার বিশেষ পালাক্রম ছিল। প্রথমে তারা জনবসতিহীন খোলা এলাকাকে টার্গেট করে, তারপর ধীরে ধীরে প্রতিটি জায়গায় হামলা করতে শুরু করে। হামাস এবং অন্য প্রতিরোধ গ্র“পগুলো যাতে ইসরাইলের অভ্যন্তরে রকেট নিপে করতে বাধ্য হয়, সেই ল্েযই ইসরাইল এই কাজটি করেছে।
ফিলিস্তিনি রকেটের সীমিত কার্যকারিতা এবং তা থেকে সৃষ্ট হুমকি সম্পর্কে পূর্ণ অবগত থেকেই কিছুটা সমালোচনা সত্ত্বেও ইসরাইলি সরকার গাজা উপত্যকা থেকে কল্পিত হুমকির ব্যাপারে তার নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও আন্তর্জাতিক সঙ্কট থেকে দৃষ্টি ফেরাতে সফল হয়। বোমা হামলা থেকে রা পেতে ইসরাইলিদের শেল্টারে আশ্রয় নেয়ার দৃশ্য বিশ্বব্যাপী প্রচার করা হয়। অন্য দিকে ইসরাইলি বোমা ও পেণাস্ত্র হামলা থেকে রা পেতে ফিলিস্তিনিদের এ ধরনের কোনো আশ্রয় একেবারেই নেই।
ইসরাইলি সাফল্য কেবল অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে উত্তরণের মধ্যেই সীমিত নেই। গাজা থেকে নিপ্তি প্রতিটি রকেট সরকারকে অন্যান্য ল্য পূরণের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে যখন ফিলিস্তিনি অবস্থান গ্রহণ করতে এবং ইসরাইলের অসামঞ্জস্যপূর্ণ সহিংসতার নিন্দা করতে শুরু করেছিল, তখন গাজা থেকে রকেট নিপে তাদেরকে ইসরাইলের পে এনে দেয়। ইসরাইলের বাড়াবাড়ি রকমের শক্তি প্রয়োগ এবং আতঙ্কজনক হারে ফিলিস্তিনি নিহত হওয়া সত্ত্বেও যেমনটা হয়ে থাকে তেমনভাবেই ওয়াশিংটন, লন্ডন ও প্যারিস বলে দেয়, ইসরাইলের ‘আত্মরার’ অধিকার আছে।
কেবল এটুকুই নয়, ‘অপারেশন প্রটেকটিভ এজ’ ফিলিস্তিনি ঐক্য সরকারের ওপরও মারাত্মক আঘাত হেনেছে। ইসরাইলের এই হামলার ফলে সমঝোতা চুক্তি বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিকল্পনা চাপা পড়ে গেছে। তা ছাড়া ইসরাইল আগেও অনেকবার এসব কাজ করেছে। তারা জানে এ ধরনের আগ্রাসন মোকাবেলা করতে গিয়ে ফিলিস্তিনিরা উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলবে। ফলে সমঝোতা পরিকল্পনায় আরেক দফা বিপর্যয় নেমে আসবে।
ইসরাইলের হামলায় একমাত্র সামরিক যে সাফল্য আশা করা হতে পারে তা হলো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গ্র“পগুলোর সামর্থ্য নষ্ট করা (তাদের হাতে সীমিত পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা যায়), গাজা ও মিসরের মধ্যকার সুড়ঙ্গগুলো ধবংস করা এবং অবরোধ অব্যাহত রাখা।
প্রতিবার যেমনটি হয়, এবারো ইসরাইল নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে বলেই ধরে নেয়া হয়েছিল। মিসরীয় যুদ্ধবিরতি উদ্যোগ হামাস প্রত্যাখ্যান করবে তা ছিল অপ্রত্যাশিত। এর ফলে ইসরাইল সরকার অপরিকল্পিতভাবে স্থল হামলার বিষয়টি বিবেচনা করতে বাধ্য হয়। অভিযান যত বেশি সময় গড়াবে, ইসরাইলের তি হবে তত বেশি। আর তাতে করে ইসরাইল ২০১২ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি (ইসরাইলি নাগরিকেরা এটাকে গ্রহণ করেছিল) সংশোধন করতে নতুন নতুন শর্ত যোগ করতে আগ্রহী হবে।
হামাস ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গ্র“পগুলো আর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে নারাজ। তারা সম্ভবত আর ২০১২ সালের শর্তে সম্মত হবে না। বিশ্বের সাথে যোগাযোগের একটি পথ এখন অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটা হতে পারে রাফা সীমান্ত ক্রসিং, সমুদ্রবন্দর বা এমনকি বিমানবন্দরও। এটা নিশ্চিত যে হামাস বা গাজার কোনো অসন্তুষ্ট ও কান্ত গ্র“পই বিরাজমান ঘৃণিত অবস্থায় ফিরে যাওয়াটা গ্রহণ করবে না।
আট বছর ধরে গাজার ওপর ইসরাইলের অসহনীয় কঠোর অবরোধ চলছে। এরপরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আরব বিশ্ব এ অবৈধ অবরোধের অবসান ঘটাতে কিছুই করেনি। আল আকসা টেলিভিশনে বক্তৃতাকালে হানিয়া দৃঢ়তার সাথে বলেন, গাজার ফিলিস্তিনিরা তাদের এ অবস্থান থেকে এক বিন্দুও পিছিয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তিনি ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের দাবির প্রতি দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তা হলো ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ, সব ধরনের অবরোধ প্রত্যাহার, ২০১১ সালে বন্দিবিনিময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত সব বন্দীকে মুক্তিদান এবং আর ইসরাইলি আগ্রাসন হবে না তার গ্যারান্টি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘এগুলো আন্তর্জাতিক আইন ও পূর্বেকার চুক্তির আলোকে অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত মানবিক দাবি’। হানিয়া গাজায় রক্তপাত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এর জনগণের দাবির প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য স্বাধীন জাতিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘গাজায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মোকাবেলায় অসমর্থ হয়ে ইসরাইল নিরীহ বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে’।
প্রতিরোধ লড়াই সম্পর্কে হানিয়া বলেন, ‘প্রতিরোধ লড়াই ও জাতীয় ঐক্যেই ফিলিস্তিনিদের দাবি অর্জিত হবে।গাজা উপত্যকায় আরেকটি ইসরাইলি সামরিক অভিযান চলছে। এটাই প্রথম হামলা নয় এবং এই অঞ্চলের রাজনৈতিক সমীকরণ না বদলালে এটা শেষ হামলাও হবে না। অতীতে গাজায় প্রতিটি ইসরাইলি হামলার সময় অনেক সামরিক ল্য ঘোষিত হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় এবার ‘অপারেশন প্রটেকটিভ এজ’ ভিন্ন প্রোপটে পরিচালিত হচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোটামুটিভাবে অনেক নীরস ও জটিল এবং এগুলো বৃহত্তর কৌশলের অংশ হওয়ায় তা বর্তমান যুদ্ধেই কেবল সীমিত থাকছে না। তবে সেগুলো এই অভিযানে ইসরাইলের ল্য নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
রাশিয়ার ভূমিকা বাড়ার কারণে বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্রে স্পষ্ট পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। সিরিয়া সঙ্কটের ব্যাপারে মস্কোর মৌলিক অবস্থান এবং ইউক্রেন ও ক্রিমিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্পষ্ট বিভ্রান্তিমূলক ভূমিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ম্লান হতে থাকায় রাশিয়ার রাজনৈতিক গুরুত্ব আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
চীন মধ্যপ্রাচ্যে তার অবস্থান ও ভূমিকা পরিবর্তন করে প্রকাশ্যে আসা থেকে দূরে থেকে চুপিসারে নিজের স্বার্থ বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেছে। সিরীয় সরকারের প্রতি চীনের প্রকট সমর্থনের কারণে এই অঞ্চলে তার কমতে থাকা জনপ্রিয়তা যাতে আর না কমে সে জন্য এটাকেই মনে করা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বিকল্প।
আঞ্চলিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, আরব বসন্ত এখনো যখন সব পর্যবেককে বিস্মিত করে যাচ্ছে, তখন ইসরাইলের এই যুদ্ধ হুমড়ি খেয়ে এসে পড়ল। মিসরে বাধ্য হয়ে এবং তিউনিসিয়ায় স্বেচ্ছায় মুসলিম ব্রাদারহুডের পতন, সিরিয়ার সঙ্কট তীব্র হওয়া এবং ইরাক, ইয়েমেন ও লিবিয়ায় নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হওয়ার মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে এই হামলাটি পরিচালিত হচ্ছে। অন্য দিকে ইরান আন্তর্জাতিক চাপ প্রশমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তার পারমাণবিক ফাইল নিয়ে কূটনৈতিক প্রয়াস সফলতার সাথে এগিয়ে নিতে সম হয়েছে।
ইসরাইলে মতাসীন জোটে টালমাটাল অবস্থা প্রবল অভ্যন্তরীণ সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ ও অর্থনৈতিক জটিলতার কারণে অনেক ইসরাইলি বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ জোরালো ভাষায় বর্তমান সরকারকে ভেঙে দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। গাজায় এই হামলাটি এমন এক সময়ে হয়েছে যখন ফিলিস্তিনেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেছে। সবেমাত্র হামাস ও ফাতাহর মধ্যে দীর্ঘ প্রতীতি সমঝোতা হয়েছে, ফিলিস্তিনি-ইসরাইলি আলোচনায় নতুন করে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে (এর জন্য ইসরাইলকেই ব্যাপকভাবে দায়ী করা হচ্ছে), তিন ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীকে হত্যা এবং এরপর ঠাণ্ডা মাথায় এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে খুন করার প্রোপটে পশ্চিম তীরে নতুন সহিংসতার মধ্যে এই হামলা শুরু হয়েছে।
ইসরাইলিরা বারবার ফিলিস্তিনি কর্তৃপকে হামাসের সাথে সমঝোতা করা কিংবা শান্তির কোনো একটিকে বেছে নিতে বলছে। এ কারণে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি এবং ঐক্য সরকার প্রতিষ্ঠায় ইসরাইল তার ক্রোধ গোপন করেনি। সে মধ্যপন্থী ফিলিস্তিনি কর্তৃপকে মারাত্মক পরিণতির হুমকি দিয়েছে। এর জবাবে তার ঘনিষ্ঠতম মিত্ররা ফিলিস্তিনের নতুন সরকারকে পরীা করা এবং তাকে একটি সুযোগ দিতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল।
ইসরাইলের আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা লণীয় মাত্রায় কমতে থাকার প্রোপটে নতুন ফিলিস্তিনি সরকারের সাথে কাজ করতে মার্কিন প্রশাসনের আগ্রহের প্রতি সমালোচনা করে দেশটি তার হতাশা প্রকাশ করেছে। শুনতে উদ্ভট শোনাবে যে, ইসরাইলি নেতারা বিশ্বব্যাপী ইসরাইলকে নিঃসঙ্গ করছে বলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপকে অভিযুক্ত করেছে।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, স্বীকার করতেই হবে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী সরকার ও জনগণের সাথে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করতে সফল হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তি বিষয়ে ফিলিস্তিনি ধারণার অনেক কাছাকাছি এসেছে এবং ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান ও পণ্য বর্জনের আন্তর্জাতিক প্রচারকাজ নাগরিকসমাজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেক বাড়ছিল।
এ প্রোপটে অভ্যন্তরীণ সঙ্কট এবং আন্তর্জাতিক চাপ থেকে উত্তরণের জন্য ইসরাইলি সরকারকে কোনো একটা পথ বের করে নিতেই হতো। ঘরোয়া সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সরকারগুলো অনেক সময়ই বাইরের দিকে নজর দেয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকেই এই কাজটি করে যাচ্ছে। যদিও এটাকে কোনোভাবেই মহৎ কৌশল হিসেবে অভিহিত করা যায় না। তাই একটি আন্তর্জাতিক সঙ্কট পাকিয়ে ফেলা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। তবে প্রশ্ন হলো মধ্যপ্রাচ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে সঙ্কটটি আসলে কী, কার এবং কোথায়?
ইসরাইলি সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের কাছে বেশ কয়েকটি বিকল্প ছিল। ইসরাইলে ইরানবিরোধী ভাবাবেগও ব্যাপক পরিমাণে রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জনমত জরিপে ইরানে একতরফা একের পর এক হামলা চালানোর সিসিফেনিয়ান পরিকল্পনার প্রতি ইসরাইলিদের আন্তরিক সমর্থন দেখা না গেলেও তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা চালানোর ব্যাপারে জনগণের মধ্যে বেশ আগ্রহ রয়েছে।
উত্তর ফ্রন্টের কথাও আসে। হিজবুল্লাহও ইসরাইলি নেতাদের জন্য ঘুমহীন রাতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তারা লেবাননি মিলিশিয়া গ্র“পটির কৌশলগত, অবস্থানগত ও সামরিক সামর্থ্য সম্পর্কে পূর্ণ অবগত রয়েছেন। অধিকন্তু ইসরাইলি সরকার এটাও জানে যে, সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর সম্পৃক্ততা এবং সেখানে তাদের তি সত্ত্বেও গ্র“পটি নিঃশেষ হয়ে যায়নি। ইসরাইলের উত্তর সীমান্তে চমকপ্রদ সামরিক হামলা চালানোর মতো অবস্থা তাদের এখনো রয়েছে।
ফলে বাকি থাকে ফিলিস্তিন। যে তিন বসতি স্থাপনকারীর হত্যা নিয়ে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত, অভিযোগ রয়েছে ‘প্রকৃতপ’ে তারা নিহত হয়েছে একটি সড়ক দুর্ঘটনায়; কিন্তু এই সত্য গোপন করে ফিলিস্তিনিদের হাতে নিহত হওয়ার ‘বানোয়াট’ কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে। ফলে ‘অপহরণ ও খুন’ করার ইসরাইলি সরকারের অভিযোগটি অপ্রাসঙ্গিক। প্রকৃত সত্য হলো ফিলিস্তিনিদের সাথে যুদ্ধ লাগাতে ইসরাইল অস্থির হয়ে পড়েছিল। সামরিক ও রাজনৈতিক পরিকল্পনাকারীরা জানতেন যে, ফিলিস্তিনি ফ্রন্টে যত রক্তরণই ঘটুক না কেন, তা তেমন আন্তর্জাতিক নিন্দা বা বড় ধরনের তির কারণ হবে না, বর্তমান আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিশৃঙ্খলার প্রোপটে এটা মিডিয়ার নজরেও তেমন আসবে না।
এ কারণে বসতি স্থাপনকারীদের হত্যার জন্য হামাসকে দায়ী করে ইসরাইল। ওই দায় হামাস এখনো দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে আসছে। ইসরাইল সরকার এই মৃত্যু থেকে ফায়দা উঠানোর আগেই কয়েকজন ইহুদি বসতি স্থাপনকারী এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে অপহরণ করে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারে।
ফলে গাজা উপত্যকায় পুরোমাত্রায় যুদ্ধ নামিয়ে দেয় ইসরাইল। ল্য হামাসকে লড়াইয়ে অবতীর্ণ করে তাকে নতজানু করা। অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটিতে ইসরাইলি হামলার বিশেষ পালাক্রম ছিল। প্রথমে তারা জনবসতিহীন খোলা এলাকাকে টার্গেট করে, তারপর ধীরে ধীরে প্রতিটি জায়গায় হামলা করতে শুরু করে। হামাস এবং অন্য প্রতিরোধ গ্র“পগুলো যাতে ইসরাইলের অভ্যন্তরে রকেট নিপে করতে বাধ্য হয়, সেই ল্েযই ইসরাইল এই কাজটি করেছে।
ফিলিস্তিনি রকেটের সীমিত কার্যকারিতা এবং তা থেকে সৃষ্ট হুমকি সম্পর্কে পূর্ণ অবগত থেকেই কিছুটা সমালোচনা সত্ত্বেও ইসরাইলি সরকার গাজা উপত্যকা থেকে কল্পিত হুমকির ব্যাপারে তার নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও আন্তর্জাতিক সঙ্কট থেকে দৃষ্টি ফেরাতে সফল হয়। বোমা হামলা থেকে রা পেতে ইসরাইলিদের শেল্টারে আশ্রয় নেয়ার দৃশ্য বিশ্বব্যাপী প্রচার করা হয়। অন্য দিকে ইসরাইলি বোমা ও পেণাস্ত্র হামলা থেকে রা পেতে ফিলিস্তিনিদের এ ধরনের কোনো আশ্রয় একেবারেই নেই।
ইসরাইলি সাফল্য কেবল অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে উত্তরণের মধ্যেই সীমিত নেই। গাজা থেকে নিপ্তি প্রতিটি রকেট সরকারকে অন্যান্য ল্য পূরণের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে যখন ফিলিস্তিনি অবস্থান গ্রহণ করতে এবং ইসরাইলের অসামঞ্জস্যপূর্ণ সহিংসতার নিন্দা করতে শুরু করেছিল, তখন গাজা থেকে রকেট নিপে তাদেরকে ইসরাইলের পে এনে দেয়। ইসরাইলের বাড়াবাড়ি রকমের শক্তি প্রয়োগ এবং আতঙ্কজনক হারে ফিলিস্তিনি নিহত হওয়া সত্ত্বেও যেমনটা হয়ে থাকে তেমনভাবেই ওয়াশিংটন, লন্ডন ও প্যারিস বলে দেয়, ইসরাইলের ‘আত্মরার’ অধিকার আছে।
কেবল এটুকুই নয়, ‘অপারেশন প্রটেকটিভ এজ’ ফিলিস্তিনি ঐক্য সরকারের ওপরও মারাত্মক আঘাত হেনেছে। ইসরাইলের এই হামলার ফলে সমঝোতা চুক্তি বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিকল্পনা চাপা পড়ে গেছে। তা ছাড়া ইসরাইল আগেও অনেকবার এসব কাজ করেছে। তারা জানে এ ধরনের আগ্রাসন মোকাবেলা করতে গিয়ে ফিলিস্তিনিরা উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলবে। ফলে সমঝোতা পরিকল্পনায় আরেক দফা বিপর্যয় নেমে আসবে।
ইসরাইলের হামলায় একমাত্র সামরিক যে সাফল্য আশা করা হতে পারে তা হলো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গ্র“পগুলোর সামর্থ্য নষ্ট করা (তাদের হাতে সীমিত পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা যায়), গাজা ও মিসরের মধ্যকার সুড়ঙ্গগুলো ধবংস করা এবং অবরোধ অব্যাহত রাখা।
প্রতিবার যেমনটি হয়, এবারো ইসরাইল নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে বলেই ধরে নেয়া হয়েছিল। মিসরীয় যুদ্ধবিরতি উদ্যোগ হামাস প্রত্যাখ্যান করবে তা ছিল অপ্রত্যাশিত। এর ফলে ইসরাইল সরকার অপরিকল্পিতভাবে স্থল হামলার বিষয়টি বিবেচনা করতে বাধ্য হয়। অভিযান যত বেশি সময় গড়াবে, ইসরাইলের তি হবে তত বেশি। আর তাতে করে ইসরাইল ২০১২ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি (ইসরাইলি নাগরিকেরা এটাকে গ্রহণ করেছিল) সংশোধন করতে নতুন নতুন শর্ত যোগ করতে আগ্রহী হবে।
হামাস ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গ্র“পগুলো আর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে নারাজ। তারা সম্ভবত আর ২০১২ সালের শর্তে সম্মত হবে না। বিশ্বের সাথে যোগাযোগের একটি পথ এখন অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটা হতে পারে রাফা সীমান্ত ক্রসিং, সমুদ্রবন্দর বা এমনকি বিমানবন্দরও। এটা নিশ্চিত যে হামাস বা গাজার কোনো অসন্তুষ্ট ও কান্ত গ্র“পই বিরাজমান ঘৃণিত অবস্থায় ফিরে যাওয়াটা গ্রহণ করবে না।
Comments
Post a Comment