বল প্রয়োগে জামায়াতের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি

উপজেলা নির্বাচন : সরকারের প্রতি অনাস্থা,



উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দেশের জনগণ সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন বলে মনে করেন দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাই তারা আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পেছনে দলটির প্রতি রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্যায় বল প্রয়োগকে সামনে এনেছেন।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন আলাদা হলেও স্থানীয় নির্বাচনে সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি তাদের মনোভাব প্রকাশ পায়। আগের নির্বাচনগুলোর মতো এ নির্বাচনেও সরকারের প্রতি আস্থার যে অভাব তা স্পষ্ট করে প্রকাশ করেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি তা ঠিকই টের পাচ্ছে।
তিনি বলেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণ এটাও প্রকাশ করেছে যে তারা দ্রুত আরেকটি জাতীয় নির্বাচন চায়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি ঘটেছে এবং বিএনপি বিজয়ী হয়েছে, এমনটা নয়। তবে বিএনপির প্রতি মানুষের যে জনসমর্থন আছে সেটাকে প্রমাণ করেছে। সেই সঙ্গে জামায়াতের প্রতি সমর্থনও বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে এ নির্বাচন থেকে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের সমর্থকরা বেশি জয়লাভ করায় প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের চেয়ে তাদের জনপ্রিয়তা বেশি। সেইসঙ্গে সরকারের প্রতি অনাস্থাও জানিয়েছে সাধারণ ভোটাররা।
জামায়াতের প্রতি সরকারের বিরূপ মনোভাবের সমালোচনা করে হাফিজউদ্দিন বলেন,
জামায়াত সম্প্রতি অনেক সহিংসতা ঘটিয়েছে। কিন্তু তাদের সমর্থক হলেই সবাই সন্ত্রাসী হবে-এমন নয়। তাদের প্রতি প্রশাসনের অন্যায় বল প্রয়োগ জামায়াতের জনপ্রিয়তাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, সরকার খুব তড়িঘড়ি করে উপজেলা নির্বাচন দিয়েছিল। ৫ জানুয়ারির প্রতারণামূলক সাধারণ নির্বাচন বর্জন করেছিল সব বিরোধী দল। নির্বাচনের পর সব বিরোধী দলের আন্দোলনকে প্রতিহত করার কৌশল হিসেবে সরকার দ্রুত উপজেলা নির্বাচন দেয়। তিনি বলেন, তারা ভেবেছিল যেহেতু তারা একটা সরকার গঠন করতে পেরেছে তখন উপজেলা নির্বাচনে ভালো ফলাফল করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে সরকারি দল অনেক কম আসন পেয়েছে এবং অনেক জালিয়াতি ও প্রতিপক্ষকে হুমকি-ধমকি দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি করেছে সরকার।
নুরুল কবির বলেন, বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেনি। ৫ জানুয়ারি যদি সবার অংশ্রগ্রহণমূলক নির্বাচন হতো তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারি দলে থাকতে পারত না। তাদের বিরোধী দলে থাকতে হতো।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন সরকারি জোটের অন্যতম দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ বলেছেন, আরেকটা নির্বাচন হওয়া দরকার। একই কথা বলছে সারাবিশ্বের রাষ্ট্রগুলো। আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট তো বলছেই। সরকারের যদি শুভ বুদ্ধির উদয় হয় তাহলে তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে পেছনে ফেলে নতুন করে অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন নুরুল কবির।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি এদেশে গত প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে সুবিধাবাদী রাজনীতি করে এসেছে। তাদের নিজস্ব কোনো রাজনীতি বা রাজনৈতিক কৌশল ছিল না। কখনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আবার কখনও বিএনপির সঙ্গে থেকে সুবিধাবাদী রাজনীতি করেছে।
নিউ এজ সম্পাদক বলেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র এরশাদ সকাল-বিকাল তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। আর সরকারি দল আওয়ামী লীগ অর্থবিত্ত দিয়ে জাতীয় মূল অংশটিকে তাদের অধীনে নিয়ে গেছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে চরম সুবিধাবাদী প্রমাণিত হওয়ায় দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টির নতুন করে বিকশিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে আমি মনে করি না।
উল্লেখ্য, গত বুধবার অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে, ৯৭টি উপজেলার মধ্যে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার ফল স্থগিত থাকায় ৯৬টির বেসরকারি ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ৪৩ উপজেলায় বিএনপি-সমর্থিত ও ১৩ উপজেলায় জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ফলে ৫৬ উপজেলায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীরাই বিজয়ী হলেন।
৩৪টি উপজেলায় জয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের মিত্র ও এবারের সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি-সমর্থিত প্রার্থী মাত্র একটি উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন। আর ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি বা জাসদের সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা কেউ বিজয়ী হতে পারেননি।

Comments