র‌্যাবকে প্রশিক্ষণে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র


, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪
মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যকে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস থেকে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকারকে চিঠি দিয়ে র‌্যাব সদস্যদের মার্কিন সহায়তায় কোনো প্রশিক্ষণে না পাঠানোর জন্য বলা হয়।
চিঠির অনুলিপি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্রসচিব ও র‌্যাবের মহাপরিচালকের কাছেও পাঠানো হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখার সূত্র জানায়, ইতালির ব্রিয়েঞ্জায় প্রশিক্ষণের জন্য র‌্যাবের একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ আপত্তি জানানো হয়।
মার্কিন সরকারের অর্থায়নে শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উপযোগী প্রশিক্ষক তৈরির জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেন্টার ফর এক্সিলেন্স ফর স্ট্যাবিলিটি পুলিশ ইউনিটের (সিওইএসপিইউ) ফিফথ মোবাইল মেনটরিং টিম (এমএমটি-০৫) নামের ওই প্রশিক্ষণের জন্য র‌্যাবের এক কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বাছাই করা হয়। এর মধ্যে একজনের ব্যাপারে আপত্তি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। আর তিনজনের সময়মতো কাগজপত্র আসেনি। অন্য ১৩ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ইতালি চলে গেছেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসান মাহমুদ খন্দকার চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ নিয়ে কী করা যায়, আমরা সেটা দেখছি।’
তবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মার্কিন দূতাবাসের এ ধরনের মন্তব্যকে ন্যক্কারজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, কাউকে ভিসা দেওয়া বা না দেওয়ার অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের আছে। কিন্তু কোথায় কাকে পাঠাতে হবে, সেটা বলা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে পড়ে। এ ধরনের মন্তব্য খুবই অশোভন।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের উপপ্রধান জন এফ ডানিলোভিচের লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, বিদেশি নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬১ সালে প্রণীত ‘বৈদেশিক সহায়তা আইন’ (ফরেন অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাক্ট—এফএএ) অনুসরণ করে। এ আইন ‘লিয়াহি সংশোধনী’ বা ‘লিয়াহি অ্যামেন্ডমেন্ট’ নামে পরিচিত। এ আইনের ‘৬২০ এম’ ধারা অনুসারে যেকোনো দেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা পাওয়া কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে যদি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রমাণ মেলে, তবে বাহিনীটির জন্য সব ধরনের সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকায় ওই বাহিনীর কোনো সদস্য বা ইউনিট কোনো ধরনের মার্কিন সহায়তা পাবে না। মার্কিন তহবিলে পরিচালিত কোনো প্রশিক্ষণেও র‌্যাব কর্মকর্তাদের মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য বলা হয়।
জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, সত্যি হোক বা না হোক, এ ধরনের অভিযোগ একটি বাহিনীর জন্য খুবই অস্বস্তিকর। এ কারণে অভিযোগটিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কেন এসব অভিযোগ উঠছে, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।
চিঠিতে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বলেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে র‌্যাবের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত র‌্যাবের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সব ধরনের আর্থিক ও প্রশিক্ষণ সহায়তা বন্ধ থাকবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে, এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।
র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, অভিযোগ এলেই যে সব সত্যি হয়ে যাবে, সেটা ঠিক না। র‌্যাব যা করছে তা আইন মেনেই করছে। আইনের বাইরে কিছুই করছে না।
র‌্যাব সদর দপ্তরের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, র‌্যাব কর্মকর্তাদের অপরাধে জড়িত থাকার ব্যাপার তদন্তের জন্য বাহিনীর ভেতরে ‘ইন্টারনাল ইনকোয়ারি সেল’ নামে একটি শাখা আছে। এটা আইইসি নামে পরিচিত। ২০১২ সালে সেলটি প্রতিষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায়। বর্তমানে এ সেলে ১০ জন কর্মকর্তা আছেন। তবে সেল গঠনে যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষণ সহায়তা দিলেও কেউ কখনো সেখানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেননি। মার্কিন দূতাবাসের চিঠিতে এ সেলের কথাটিও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, শুধু একটি ক্ষেত্রেই মার্কিন সহায়তা পেয়ে থাকে র‌্যাব। তবে সেই সহায়তাও লিয়াহি আইন মেনেই দেওয়া হয়। আইইসিতে কাজের জন্য র‌্যাব সদস্যদের বিধির শর্তগুলো পূরণ করতে হয়।
২০০৪ সালে গঠনের পর থেকেই র‌্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু সব সময় মন্ত্রীরা এর পক্ষে সাফাই গান। র‌্যাবের পক্ষ থেকে সব সময় এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। সর্বশেষ লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় র‌্যাবকে অভিযুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, ২০১৩ সালে কমপক্ষে ৩০ জন বিনাবিচারে নিহত হয়েছেন। র‌্যাব বা পুলিশ পরিচয়ে এসব লোকদের ধরে নেওয়ার পর মেরে ফেলা হয়েছে। গত ২৩ মে লন্ডন থেকে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

Comments