তিন মাতবরকেই সমর্থন দিচ্ছে বাংলাদেশ : আনন্দবাজার

নয়া দিগন্ত অনলাইন
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, শনিবার

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা-আইসিসি’তে তিন মাতবরকে সমর্থন দিচ্ছে বাংলাদেশ। গত বৃহস্পতিবার আনন্দবাজারে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ‘শ্রীনির হাতে ছয়, রইল বাকি এক’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো।
ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করার দিকে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিল যারা, সেই বাংলাদেশ বোর্ড বৃহস্পতিবার কার্যত ইঙ্গিত দিয়ে দিল, তিন প্রধানের পাশে দাঁড়াতে তারা এখন প্রস্তুত। যার মানে হল, সিঙ্গাপুরের ৮ ফেব্রুয়ারির বৈঠকের আগে শ্রীনিবাসন আর একটা ভোট নিশ্চিত করতে পারলেই আইসিসি-র গঠনতন্ত্রে আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে। হবে ক্ষমতার হস্তান্তরও।
আইসিসি বৈঠকের আগে বাংলাদেশ বোর্ডই শুধু আপত্তি জানায়নি, সে দেশের ক্রিকেটভক্তরাও রীতিমতো রাস্তায় নেমে তিন প্রধানের আইসিসি-র নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছিল। কিন্তু আইসিসি বৈঠক শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ তাদের স্টান্স বদলে দিয়েছে। যার ফলে শ্রীনিবাসনদের আরও একটা ভোটই শুধু নিশ্চিত হচ্ছে না, বিরোধী এশিয়ান ব্লকের মৈত্রীও ভেঙে যাচ্ছে। যেখানে আগে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার সঙ্গে গলা মিলিয়েছিল বাংলাদেশও।
বাংলাদেশের আপত্তি ছিল, দ্বিস্তর টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে। যেখানে তাদের অবনমন হওয়ার আশঙ্কা ছিল। আর চাহিদা ছিল, আরও বেশি করে বিদেশ সফরের সুযোগ পাওয়া। বাংলাদেশের দুটো দাবিই সম্ভবত মেনে নেওয়া হবে। অন্তত দ্বিতীয়টার ব্যাপারে যে তারা তিন প্রধানের প্রতিশ্রুতি পেয়ে গিয়েছে, সেটা বৃহস্পতিবার সরকারি ভাবে জানিয়ে দিল বিসিবি।
বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান মীরপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ দিন বলেছেন, “বাকিদের থেকে আমরা অনেক ভাল জায়গায় থাকব। আমরা ১৪ বছর ভারত সফরে যাইনি। এ বার যাব টেস্ট খেলতে। ভারতও এখানে আসবে। আমরা ইংল্যান্ডে যাব। অস্ট্রেলিয়া আবার এখানে আসবে।” নাজমুলের এই ঘোষণার পরই হাততালির দিতে থাকেন উপস্থিত বিসিবি কর্তারা।
শুধু মৌখিক আশ্বাসেই যে তাঁরা সন্তুষ্ট হচ্ছেন না, তাও এ দিন পরিষ্কার করে দিয়েছেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। তিন দেশের সঙ্গে সফর নিয়ে লিখিত চুক্তিও (এমপিএ) সেরে ফেলতে চায় বাংলাদেশ। এবং সেটাও ৮ ফেব্রুয়ারি, পরবর্তী আইসিসি বৈঠকের আগে।
নাজমুল বলেছেন, “আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল আরও বেশি টেস্ট খেলা। কিন্তু সব সময় সেটা পূরণ হয় না। আগে আইসিসি-র ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা থাকত না। ফলে সফর বাতিলও হয়ে যেত। কিন্তু এ বার নিজেদের মধ্যে চুক্তি হলে সেটা আইনত বৈধ থাকবে।”
দুবাইয়ে আইসিসি মিটিং শুরু হওয়ার আগে জাকা আশরফ বলেছিলেন, পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা এক সঙ্গে মিলে তিন প্রধানের আনা প্রস্তাবগুচ্ছকে আটকাবে। সেই বক্তব্যেরও বিরোধিতা করছে বাংলাদেশ। এমনকী গত কাল পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, আইসিসি যে ‘সর্বসম্মত সমর্থনের’ কথা বলছে, তা ঠিক নয়। নাজমুল এ বার সেই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বলছেন, “আইসিসি-র প্রেস বিবৃতিটা একটা সরকারি ব্যাপার। সভায় কেউ তা নিয়ে আপত্তি করেনি। আমরা শুধু দ্বিস্তর টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছিলাম।” বাংলাদেশ যে কী গেমপ্ল্যান নিয়ে আইসিসি বৈঠকে গিয়েছিল, তাও বুঝিয়ে দিচ্ছেন নাজমুল। “আমরা কোনও দলের সঙ্গে ছিলাম না। মিটিংয়ে আমি বলেই দিয়েছিলাম, আমার সমস্যা যদি না মেটে, তা হলে আমি কারও সঙ্গে নেই। আর সমস্যা মিটে গেলে আমি সবার সঙ্গে আছি। এটাই আমার স্ট্র্যাটেজি,” বলেছেন তিনি।
ক্রিকেট বিশ্বের ‘তিন প্রধান’ যখন ক্রমশ আইসিসি-তে সুপার পাওয়ার হওয়ার দিকে এগোচ্ছে, তখনও এই নীতির বিরোধিতা যাঁরা করে এসেছেন, তাঁরা আশা ছাড়ছেন না। যেমন প্রাক্তন আইসিসি প্রেসিডেন্ট এহসান মানি। আইসিসি যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারটা পিছিয়ে দিয়েছে, তাতেই খুশি তিনি। মানির বক্তব্য, প্রস্তাবিত এগজিকিউটিভ কমিটিতে অন্তত সাত জন সদস্য রাখা হোক। যাতে ‘তিন প্রধান’ যা খুশি তাই না করতে পারে।

Comments