মালোপাড়ার ঘটনা রাজনৈতিক সন্ত্রাস

যশোর-সাতক্ষীরায় দু’দিনের সফর শেষে নাগরিক তদন্ত কমিটি

| ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, শনিবার,মানবজমিন 

যশোরের অভয়নগরে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা সামপ্রদায়িক নয়, রাজনৈতিক সন্ত্রাস। যশোর-সাতক্ষীরার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো ঘুরে এসে নাগরিক তদন্ত কমিটি গতকাল বিকালে যশোরের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ অভিমত দেন। তারা বলেন, সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনী ‘ক্রসফায়ার’, ও ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে নিরপরাধ বহু মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছে। গোটা সাতক্ষীরা এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত আতঙ্কের জনপদ। গ্রামের পর গ্রাম পুরুষশূন্য। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, যশোরের অভয়নগর মালোপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা প্রকৃত ঘটনা বলতে চায়। কিন্তু তারা ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। কেউ কোন সত্য কথা বলে ফেললেই, প্রভাবশালীরা ধমক দিয়ে তাদের থামিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি পাকিস্তান আর্মির বর্বরতা দেখেছি। কিন্তু স্বাধীন দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে এমন বর্বরতা চালাতে পারে, সাতক্ষীরা না গেলে তা বোঝা যাবে না। সেখানে যৌথবাহিনীর নামে প্রায় প্রতিদিনই মানুষ খুন করা হচ্ছে। খুনের শিকার মানুষেরা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী। সন্ত্রাসের অভিযোগ তাদের নামে নেই। প্রায় সবাই নিরীহ। এই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বন্ধ হওয়া দরকার বলে অভিমত দিয়ে রুহুল আমিন গাজী বলেন, না হলে পরিণতি বিপজ্জনক হতে পারে।
রুহুল আমিন গাজী অবিলম্বে আমার দেশ, দৈনিক ইনকিলাব, দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভিসহ বন্ধ সব মিডিয়া খুলে দেয়া এবং নির্যাতনের শিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ বিনা বিচারে আটক সব সাংবাদিকদের মুক্তি দিয়ে ভিন্নমত প্রকাশের পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানান। তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী সাতক্ষীরার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, গোটা সাতক্ষীরা এখন যেন এক মৃত্যু উপত্যকা। চারদিকে কান্নার রোল, স্বজনহারাদের আহাজারি। গ্রামে গ্রামে বহু কবর, যারা যৌথবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের স্বজনরা জানেন না, কী কারণে অস্ত্রধারী বাহিনী এভাবে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। তালায় যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত আজহারুল ইসলামের স্ত্রীর বরাত দিয়ে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, তারা জানতে চেয়েছেন, পুলিশ কি মানুষ হত্যার জন্য, নাকি মানুষের নিরাপত্তা বিধানের জন্য? এই রাষ্ট্র কার জন্য? রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব নেই, সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের? যশোরের মালোপাড়া সম্বন্ধে জাতীয় প্রেস ক্লাবের এই যুগ্ম-সম্পাদক বলেন, সেখানে হিন্দু-মুসলিম চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেছেন চাপাতলার মানুষেরা। ৫ই জানুয়ারির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোন সামপ্রদায়িক ঘটনা ছিল না। ক্ষতিগ্রস্ত সুনীতি বিশ্বাস তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, গফফার নামে এক যুবলীগ নেতা তার বাড়িতে আগুন দিয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত গফফারকে পরে জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত গফফারকে ১ মাসের কারাদণ্ড দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে যে খুন-খারাবির অভিযোগ উঠছে তা যেন আর না হয় সে দাবি জানান তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব। প্রেস ক্লাব যশোর মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক কমিটির সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, সদস্য জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু প্রমুখ।

Comments