Posted by
shahin
সড়ক নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে
পেশাদার মোটরগাড়ি চালকদের লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে আইনের কোনো শর্তই মানছে না বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। শর্ত না মেনে বা যথাযথ পরীক্ষা ছাড়াই গত ছয় মাসে প্রায় ৩২ হাজার পেশাদার চালকের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ যানবাহন চলছে ফিটনেস সনদ ছাড়া।
এই অবস্থায় দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। ১৫ জুলাই থেকে গত শনিবার পর্যন্ত ঈদকালীন ১১ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫২ জন নারী-পুরুষ ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ঈদের পরদিন সিরাজগঞ্জে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেছে ১৭ জনের। এর মধ্যে একটি বাসের ফিটনেস সনদ ছিল না। গত বছরের অক্টোবরে নাটোরে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩৬ জন প্রাণ হারায়। ওই বাসের ফিটনেস সনদ ছিল না। এ জন্য তদন্ত কমিটি মালিকদের দায়ী করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।
ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালাচ্ছি। এরপরও পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না।’ এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মালিক-শ্রমিকদের দিক থেকে বাধা বা চাপ আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, কঠোর অবস্থানে গেলে জনগণকে জিম্মি করে মালিক-শ্রমিক ধর্মঘট ডেকে বসে। তখন জনগণের কথা ভেবে নমনীয় হতে হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় ২০১৪ সালে মারা গেছে সাড়ে আট হাজার মানুষ। তবে সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ২ হাজার ৬৭। সড়ক নিরাপত্তার মূল পাঁচটি বিষয় হচ্ছে—ত্রুটিমুক্ত যান ও সড়ক, যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া লাইসেন্সধারী দক্ষ চালক, সড়কের পরিবেশ এবং আইনের প্রয়োগ। কিন্তু বাস্তবে এগুলো উপেক্ষিত।
দেশে ত্রুটিমুক্ত সড়ক ও যানবাহন এবং যথাযথ পরীক্ষা নিয়ে লাইসেন্স দেওয়ার দায়িত্ব সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের। মোটরযান-সংক্রান্ত আইন হালনাগাদ করাও এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কিন্তু কোনোটাই সঠিকভাবে হচ্ছে না। বরং এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে আরেক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক সংগঠনের চাপ ও সুপারিশে।
সড়কে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থলে গিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সড়ক নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বৈঠকে বিভিন্ন সিদ্ধান্তও নেন তিনি। সেগুলোর বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয় না। এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ, পেশাদার চালকের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ আইন মানা এবং সড়ক ত্রুটিমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণাতেই থেকে গেছে। মোটরযান আইন পরিবর্তনের জন্য করা খসড়াটিও দুই বছর ধরে ঝুলে আছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ত্রুটিপূর্ণ যান ও যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে চালক নির্বাচন করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হচ্ছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। বর্তমানে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এর কার্যকরী সভাপতি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। শাজাহান খানের পরিবারের বাসের ব্যবসাও আছে। আর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান। সমিতির নেতাদের বেশির ভাগই সরকারি দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
গত জানুয়ারিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলন শুরু হলে এর বিরুদ্ধে পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের নিয়ে পাল্টা কর্মসূচি পালন করেন শাজাহান খান। এর আগে ২০১১ সালে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরকে চাপা দেওয়া বাসের চালককে গ্রেপ্তার করার পর তাঁকে ছাড়িয়ে আনতে ঢাকায় সমাবেশ করে মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। এরপর বাসচালক ছাড়া পেয়ে যান।
শাজাহান খানের শ্রমিক ফেডারেশনের তালিকা ধরে ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার পেশাদার চালককে যথাযথ পরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স দিয়েছে বিআরটিএ। এরপর ২০১০-১১ সালেও একইভাবে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছিলেন শাহজাহান খান ও তাঁর সংগঠন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো পরীক্ষা ছাড়া লাইসেন্স দিতে বলিনি। আমরা বলেছি, মাঠপর্যায়ের পরীক্ষা ঠিকভাবে নেওয়া হোক। লিখিত পরীক্ষাটা একটু শিথিল করা হোক। বিআরটিএ যদি তাদের লোকবলের অভাবে এটি করতে না পারে, সেটি তাদের সমস্যা। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই।’ তিনি দাবি করেন, একসময় ফিটনেস ও লাইসেন্সের ব্যাপারে মালিক-শ্রমিকদের প্রভাব থাকত, এখন তা নেই।
সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহন খাতের সুবিধাভোগী হচ্ছেন রাজনীতিকেরা। আর এই খাতের এক নম্বর সমস্যা হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
এই অবস্থায় দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। ১৫ জুলাই থেকে গত শনিবার পর্যন্ত ঈদকালীন ১১ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫২ জন নারী-পুরুষ ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ঈদের পরদিন সিরাজগঞ্জে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেছে ১৭ জনের। এর মধ্যে একটি বাসের ফিটনেস সনদ ছিল না। গত বছরের অক্টোবরে নাটোরে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩৬ জন প্রাণ হারায়। ওই বাসের ফিটনেস সনদ ছিল না। এ জন্য তদন্ত কমিটি মালিকদের দায়ী করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।
ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালাচ্ছি। এরপরও পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না।’ এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মালিক-শ্রমিকদের দিক থেকে বাধা বা চাপ আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, কঠোর অবস্থানে গেলে জনগণকে জিম্মি করে মালিক-শ্রমিক ধর্মঘট ডেকে বসে। তখন জনগণের কথা ভেবে নমনীয় হতে হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় ২০১৪ সালে মারা গেছে সাড়ে আট হাজার মানুষ। তবে সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ২ হাজার ৬৭। সড়ক নিরাপত্তার মূল পাঁচটি বিষয় হচ্ছে—ত্রুটিমুক্ত যান ও সড়ক, যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া লাইসেন্সধারী দক্ষ চালক, সড়কের পরিবেশ এবং আইনের প্রয়োগ। কিন্তু বাস্তবে এগুলো উপেক্ষিত।
দেশে ত্রুটিমুক্ত সড়ক ও যানবাহন এবং যথাযথ পরীক্ষা নিয়ে লাইসেন্স দেওয়ার দায়িত্ব সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের। মোটরযান-সংক্রান্ত আইন হালনাগাদ করাও এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কিন্তু কোনোটাই সঠিকভাবে হচ্ছে না। বরং এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে আরেক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক সংগঠনের চাপ ও সুপারিশে।
সড়কে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থলে গিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সড়ক নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বৈঠকে বিভিন্ন সিদ্ধান্তও নেন তিনি। সেগুলোর বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয় না। এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ, পেশাদার চালকের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ আইন মানা এবং সড়ক ত্রুটিমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণাতেই থেকে গেছে। মোটরযান আইন পরিবর্তনের জন্য করা খসড়াটিও দুই বছর ধরে ঝুলে আছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ত্রুটিপূর্ণ যান ও যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে চালক নির্বাচন করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হচ্ছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। বর্তমানে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এর কার্যকরী সভাপতি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। শাজাহান খানের পরিবারের বাসের ব্যবসাও আছে। আর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান। সমিতির নেতাদের বেশির ভাগই সরকারি দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
গত জানুয়ারিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলন শুরু হলে এর বিরুদ্ধে পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের নিয়ে পাল্টা কর্মসূচি পালন করেন শাজাহান খান। এর আগে ২০১১ সালে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরকে চাপা দেওয়া বাসের চালককে গ্রেপ্তার করার পর তাঁকে ছাড়িয়ে আনতে ঢাকায় সমাবেশ করে মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। এরপর বাসচালক ছাড়া পেয়ে যান।
শাজাহান খানের শ্রমিক ফেডারেশনের তালিকা ধরে ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার পেশাদার চালককে যথাযথ পরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স দিয়েছে বিআরটিএ। এরপর ২০১০-১১ সালেও একইভাবে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছিলেন শাহজাহান খান ও তাঁর সংগঠন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো পরীক্ষা ছাড়া লাইসেন্স দিতে বলিনি। আমরা বলেছি, মাঠপর্যায়ের পরীক্ষা ঠিকভাবে নেওয়া হোক। লিখিত পরীক্ষাটা একটু শিথিল করা হোক। বিআরটিএ যদি তাদের লোকবলের অভাবে এটি করতে না পারে, সেটি তাদের সমস্যা। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই।’ তিনি দাবি করেন, একসময় ফিটনেস ও লাইসেন্সের ব্যাপারে মালিক-শ্রমিকদের প্রভাব থাকত, এখন তা নেই।
সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহন খাতের সুবিধাভোগী হচ্ছেন রাজনীতিকেরা। আর এই খাতের এক নম্বর সমস্যা হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
ছয় মাসে যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া ৩২ হাজার পেশাদার চালকের লাইসেন্স নবায়ন। শাজাহান খানের ফেডারেশনের তালিকা ধরে ১৯৯০ সাল থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার লাইসেন্স প্রদান
মোটরযান আইন মানলে ফিটনেসবিহীন গাড়ি আর অদক্ষ চালক—কোনোটারই সড়কেই থাকার কথা নয়। আর দায়ী চালকদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য মোটরযান আইন যুগোপযোগী করার ব্যাপারেও সরকারের আগ্রহ নেই বললেই চলে। সড়কের পরিবেশ ঠিক করার জন্য অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ও ইজিবাইক এক যুগ আগে নিষিদ্ধ করা হলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার।
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দেশের বাইরে থাকায় এসব বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কোনোমতে লাইসেন্স নবায়ন: মোটরযান আইনে তিন বছর পরপর পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পেশাদার চালকের লাইসেন্স নবায়ন করার কথা বলা আছে। লাইসেন্স সংগ্রহ করার সময় যেমন শারীরিক ও কারিগরি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ‘ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি বোর্ডের’ মাধ্যমে তা নিতে হয়। নবায়নের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মানতে হবে। আর বোর্ডের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের।
আইনে কারিগরি ও শারীরিক সক্ষমতার অন্তত ২৪টি শর্ত পূরণ করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তে কীভাবে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সেতুর ওপর দিয়ে কীভাবে যানবাহন চালানো যাবে, সড়কের সংকেতব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা, শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিসীমার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে কি না, তা-ও পরীক্ষা করে দেখার নিয়ম।
কিন্তু বিআরটিএ গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওই বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে একজন মোটরযান পরিদর্শককে এসব পরীক্ষা সম্পন্ন করার দায়িত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন দীর্ঘদিন ধরেই পেশাদার লাইসেন্স নবায়নের শর্ত শিথিলের এই দাবি জানিয়ে আসছিল।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, একজন মোটরযান পরিদর্শকের পক্ষে এসব পরীক্ষা যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া শ্রমিক ইউনিয়নের প্রভাবের কথা চিন্তা করে মোটরযান পরিদর্শকও পরীক্ষা না নিয়েই লাইসেন্স নবায়ন করে দেন।
বিআরটিএর হিসাবে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে গত রোববার পর্যন্ত সারা দেশে পেশাদার চালকের লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ৩২ হাজার ৭১টি। মাসে গড়ে ২৫ দিন কর্মদিবস ধরলে দৈনিক গড়ে লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ২১৪টি। নবায়ন হওয়া লাইসেন্সের প্রায় ৭০ শতাংশই হয়েছে বিআরটিএর মিরপুর ও ইকুরিয়া কার্যালয় থেকে। বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, ছয় মাসের কম সময়ের মধ্যে যথাযথ পরীক্ষা নিয়ে বিপুলসংখ্যক এই লাইসেন্স নবায়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
পরীক্ষা ছাড়া ছয় মাসে ৩২ হাজার পেশাদার লাইসেন্স নবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘অস্বাভাবিক এই সংখ্যাটা বিবেচনায় নিলাম। অচিরেই সভা ডেকে এটি পর্যালোচনা করা হবে।’
কম্পিটেন্সি বোর্ড কার্যকর নয়: সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মোটরযান আইনে সব ধরনের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য যে কম্পিটেন্সি বোর্ডের কথা বলা হয়েছে, তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। ঢাকায় সপ্তাহে দুই দিন একসঙ্গে তিনটি স্থানে এ ধরনের বোর্ড বসে। ঢাকার বাইরে বসে সুবিধাজনক সময়ে। গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তা বলে বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যই নিজেরা না এসে অধস্তন প্রতিনিধিদের পাঠিয়ে দেন। অনেকের প্রতিনিধিও আসেন না।
বোর্ড ঠিকভাবে না বসা এবং যথাযথ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি না থাকার অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো মোটরযান পরিদর্শকের মাধ্যমে লাইসেন্স নবায়নের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, দেশে চালকের লাইসেন্স রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ। এর মধ্যে পেশাদার চালকের লাইসেন্স প্রায় আট লাখ। বাকিরা অপেশাদার।
ফিটনেস নিয়ে মাথাব্যথা নেই: দেশে বর্তমানে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এর মধ্যে এক লাখ ফিটনেসবিহীন অটোরিকশা-অটোটেম্পো চলাচল করছে। এরপরই ট্রাকের সংখ্যা—প্রায় ৪১ হাজার। এমন বাস-মিনিবাস রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার। বাকিগুলো অন্যান্য যানবাহন।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, দেশে মোট যানবাহনের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২২ লাখ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মোটরসাইকেল এবং এগুলোর ফিটনেস সনদ নিতে হয় না। আর কিছু যানবাহন অকেজো হয়ে গেছে।
অবশ্য ফিটনেস সনদ থাকা না-থাকা প্রায় সমানই। বাস-ট্রাকের যেগুলোর ফিটনেস সনদ আছে, এগুলোর বেশির ভাগই বিআরটিএ কার্যালয়ে না গিয়েই সনদ নিয়ে থাকে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন একদিকে যেমন সড়ক নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তেমনি সরকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনিস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, একটা যানবাহনের ফিটনেস দিতে ৪২টি পরীক্ষা করার নিয়ম। চালকের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতিতেও ঘাটতি আছে। ফলে দেশে এখনো প্রায় আট লাখ চালকের অভাব রয়েছে। তাঁর মতে, সরকারি সংস্থাগুলো নিজেরা এই কাজ পারছে না। তাই বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রভাব বেড়ে যাওয়ার পেছনে মোটরযান আইনটিও দায়ী। এটি যুগোপযোগী করার উদ্যোগও গতি পাচ্ছে না ওই প্রভাবের কারণে। এই অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনের সংস্কার ছাড়া সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দেশের বাইরে থাকায় এসব বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কোনোমতে লাইসেন্স নবায়ন: মোটরযান আইনে তিন বছর পরপর পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পেশাদার চালকের লাইসেন্স নবায়ন করার কথা বলা আছে। লাইসেন্স সংগ্রহ করার সময় যেমন শারীরিক ও কারিগরি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ‘ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি বোর্ডের’ মাধ্যমে তা নিতে হয়। নবায়নের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মানতে হবে। আর বোর্ডের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের।
আইনে কারিগরি ও শারীরিক সক্ষমতার অন্তত ২৪টি শর্ত পূরণ করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তে কীভাবে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সেতুর ওপর দিয়ে কীভাবে যানবাহন চালানো যাবে, সড়কের সংকেতব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা, শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিসীমার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে কি না, তা-ও পরীক্ষা করে দেখার নিয়ম।
কিন্তু বিআরটিএ গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওই বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে একজন মোটরযান পরিদর্শককে এসব পরীক্ষা সম্পন্ন করার দায়িত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন দীর্ঘদিন ধরেই পেশাদার লাইসেন্স নবায়নের শর্ত শিথিলের এই দাবি জানিয়ে আসছিল।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, একজন মোটরযান পরিদর্শকের পক্ষে এসব পরীক্ষা যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া শ্রমিক ইউনিয়নের প্রভাবের কথা চিন্তা করে মোটরযান পরিদর্শকও পরীক্ষা না নিয়েই লাইসেন্স নবায়ন করে দেন।
বিআরটিএর হিসাবে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে গত রোববার পর্যন্ত সারা দেশে পেশাদার চালকের লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ৩২ হাজার ৭১টি। মাসে গড়ে ২৫ দিন কর্মদিবস ধরলে দৈনিক গড়ে লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ২১৪টি। নবায়ন হওয়া লাইসেন্সের প্রায় ৭০ শতাংশই হয়েছে বিআরটিএর মিরপুর ও ইকুরিয়া কার্যালয় থেকে। বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, ছয় মাসের কম সময়ের মধ্যে যথাযথ পরীক্ষা নিয়ে বিপুলসংখ্যক এই লাইসেন্স নবায়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
পরীক্ষা ছাড়া ছয় মাসে ৩২ হাজার পেশাদার লাইসেন্স নবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘অস্বাভাবিক এই সংখ্যাটা বিবেচনায় নিলাম। অচিরেই সভা ডেকে এটি পর্যালোচনা করা হবে।’
কম্পিটেন্সি বোর্ড কার্যকর নয়: সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মোটরযান আইনে সব ধরনের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য যে কম্পিটেন্সি বোর্ডের কথা বলা হয়েছে, তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। ঢাকায় সপ্তাহে দুই দিন একসঙ্গে তিনটি স্থানে এ ধরনের বোর্ড বসে। ঢাকার বাইরে বসে সুবিধাজনক সময়ে। গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তা বলে বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যই নিজেরা না এসে অধস্তন প্রতিনিধিদের পাঠিয়ে দেন। অনেকের প্রতিনিধিও আসেন না।
বোর্ড ঠিকভাবে না বসা এবং যথাযথ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি না থাকার অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো মোটরযান পরিদর্শকের মাধ্যমে লাইসেন্স নবায়নের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, দেশে চালকের লাইসেন্স রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ। এর মধ্যে পেশাদার চালকের লাইসেন্স প্রায় আট লাখ। বাকিরা অপেশাদার।
ফিটনেস নিয়ে মাথাব্যথা নেই: দেশে বর্তমানে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এর মধ্যে এক লাখ ফিটনেসবিহীন অটোরিকশা-অটোটেম্পো চলাচল করছে। এরপরই ট্রাকের সংখ্যা—প্রায় ৪১ হাজার। এমন বাস-মিনিবাস রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার। বাকিগুলো অন্যান্য যানবাহন।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, দেশে মোট যানবাহনের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২২ লাখ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মোটরসাইকেল এবং এগুলোর ফিটনেস সনদ নিতে হয় না। আর কিছু যানবাহন অকেজো হয়ে গেছে।
অবশ্য ফিটনেস সনদ থাকা না-থাকা প্রায় সমানই। বাস-ট্রাকের যেগুলোর ফিটনেস সনদ আছে, এগুলোর বেশির ভাগই বিআরটিএ কার্যালয়ে না গিয়েই সনদ নিয়ে থাকে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন একদিকে যেমন সড়ক নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তেমনি সরকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনিস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, একটা যানবাহনের ফিটনেস দিতে ৪২টি পরীক্ষা করার নিয়ম। চালকের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতিতেও ঘাটতি আছে। ফলে দেশে এখনো প্রায় আট লাখ চালকের অভাব রয়েছে। তাঁর মতে, সরকারি সংস্থাগুলো নিজেরা এই কাজ পারছে না। তাই বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রভাব বেড়ে যাওয়ার পেছনে মোটরযান আইনটিও দায়ী। এটি যুগোপযোগী করার উদ্যোগও গতি পাচ্ছে না ওই প্রভাবের কারণে। এই অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনের সংস্কার ছাড়া সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment