: সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তুরস্ককে সহযোগিতা করতে পাশ্চাত্যের অনীহা বিষয়ে তুরস্কে সমালোচনা বাড়ছে। সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর নানা কারণ রয়েছে।


৭ জানুয়ারি ফ্রান্সের ব্যঙ্গ পত্রিকা শার্লি এবদোর ওপর হামলার সময় থেকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিকতর তীব্র হয়ে উঠেেেছ।
ন্যটো সদস্য হিসেবে তুরস্কের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ইসলামিক স্টেট (আইএস) যে দুটি দেশে সক্রিয় সেই ইরাক ও সিরিয়ার সাথে তার সীমান্ত থাকার কারণে তুরস্কের সাথে সহযোগিতা করা অপরিহার্য। কিন্তু তুরস্কে জনগণের মধ্যে সমালোচনা বাড়ছে যে পাশ্চাত্য তুরস্কের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।   
তুরস্ক সরকার বারবার পাশ্চাত্যের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে যে দেশটি আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যথেষ্ট করছে না এবং অন্যন্য সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো তুরস্ককে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।
দু’সপ্তাহ আগে জার্মানি সফরকালে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোগলু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার দেশের জড়িত হওয়াকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, তুরস্কের কাছে সিরিয়া ও ইরাকে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সাথে যোগাযোগ থাকা ৭ হাজার বিদেশি যোদ্ধার কালো তালিকা আছে। তাদের মধ্য থেকে ২ হাজারকে ইতোমধ্যেই নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। 
তিনি বলেন, প্যারিসে হামলার সন্দেহভাজন সহযোগী হায়াত বুমেদিনের ব্যাপারে তুরস্ক যথাসময়ে ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য দেয়, এমনকি ফরাসি কর্তৃপক্ষ তথ্য প্রদানের অনুরোধ করার আগেই। 
জানুয়ারির প্রথম দিকে শার্লি এবদোর হামলার পর ১১টি দেশের প্রতিনিধিরা উচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে আলোচনার জন্য প্যারিসে বৈঠকে মিলিত হন। তুরস্কের ইংরেজি সংবাদপত্র হুররিয়েত ডেইলি নিউজে মুরাট ইয়েটকিন লেখেন, তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ন্যাটো সদস্য হলেও তাকে এ বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি ১২ ফেব্রুয়ারি ব্রাসেলসে ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় দুটি সন্ত্রাসবিরোধী সম্মেলনের কথা উল্লেখ করেন যেগুলোতেও তুরস্ককে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। 
আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ফেতহি আসিকেলের মতে, সন্ত্রাসবিরোধী সম্মেলনে তুরস্ক নিষিদ্ধ হয়েছে একথা বলা বেশি আগেভাগে হয়ে যায়। তবে মনে হচ্ছে তুর্কি সরকারের উপর থেকে তারা আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। 
তিনি বলেন, এর একটি কারণ রয়েছে। প্রচুর নিদর্শন রয়েছে যে তুর্কি সরকার ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের দমনে ইইউ ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে যথেষ্ট সহযোগিতা করেনি। উদাহরণ হিসেবে তিনি তুরস্কের রক্ষণশীল ইসলামী শাসক দল একেপি এবং আল কায়েদার সিরিয়া শাখা আল নুসরা ফ্রন্টের মধ্যকার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আল নুসরা ফ্রন্টের যোদ্ধারা তুরস্কের বিভিন্ন প্রদেশে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। হাসপাতালগুলোতে ও অন্যান্য স্থানে সিরিয়ার বাশার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের লজিস্টিক সমর্থন দেয়া হয়েছে। আসিকেল বলেন, ইসলামিক স্টেট (আইএস) যোদ্ধারা সিরিয়া বা ইরাকে যাওয়ার আগে তুরস্ককে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। আর এসব কারণেই পশ্চিমা দেশগুলো একেপির সাথে কাজ করতে সন্দেহ পোষণ করে। 
ইস্তাম্বুলের কুলতুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্লোবাল পলিটিক্যাল ট্রেন্ডস সেন্টারের পরিচালক মেনসুর আকগুন বলেন, তুর্কি সরকার যে আল কায়েদা নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্ক রাখে তা যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশ কর্তৃক সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। তিনি পাশ্চাত্যের প্রত্যাশার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, তুরস্ক যে আইএসের সাথে লড়াই করছে না তার যথাযথ কারণ আছে। 
আকগুন বলেন, তুরস্ক আইএসের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত। কিন্তু সেক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের পক্ষ থেকে ব্যাপক কৌশল থাকতে হবে। কৌশল ছাড়া তুরস্ক কিভাবে ইরাক ও সিরিয়ায় অভিযান চালাবে? সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাশ্চাত্য তুরস্ক থেকে যে সরে আছে তার একটি কারণ হলো পাশ্চাত্য অন্যান্য বিষয়ে তুরস্কের সাথে আলোচনা পরিহার করতে চায়। এসব আলোচনার লক্ষ্য হলো ইউ’র সদস্যপদ লাভের আকাক্সক্ষা এবং এটাই হলো সর্বশেষ বিষয় যা অনেক ইইউ দেশই চায়। সুতরাং তাদের জন্য তুরস্ক থেকে নিজেদের পৃথক করা সহজ। 
তবে আকগুন হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, আমি যদি তারা হতাম তাহলে অবশ্যই দু’বার ভাবতাম এবং সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে তুরস্কের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করতাম। সবকিছুর পর তুরস্ক কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূত্র : ডিডব্লিউ। - See more at: http://www.dailyinqilab.com/2015/01/31/236666.php#sthash.a6Iyt2pz.dpuf

Comments